West Bengal Panchayat Election 2023

পঞ্চায়েতের আগেই ‘ছন্দপতন’ তৃণমূলে

দুই, দল থেকে স্বেচ্ছায় অবসর নিতে চেয়ে ফেসবুক পোস্ট করেন এক নেতা। নতুন কমিটিতে সাধারণ সদস্য হিসেবে তাঁর নাম রয়েছে। পোস্টে ওই নেতা লেখেন, ‘২০০৬।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ১৪ এপ্রিল ২০২৩ ০৭:৫১
Share:

মেদিনীপুরে সমস্যায় তৃণমূল। প্রতীকী চিত্র।

বুধবার দুপুরে ঘোষিত হয়েছে তৃণমূলের মেদিনীপুর সাংগঠনিক জেলার নতুন কমিটিও। ঘোষণার পরপরই দলের গোষ্ঠী কোন্দল প্রকাশ্যে। পঞ্চায়েত ভোট দোরগোড়ায়। তার আগে কোন্দল প্রকাশ্যে আসায় অস্বস্তিতে দলের জেলা নেতৃত্ব। দলে চিড় ধরতে পারে বলেও আশঙ্কা।

Advertisement

একই দিনের তিনটি, তিন ধরনের ঘটনা ধরা যাক।

এক, নতুন জেলা কমিটির তালিকায় তাঁর নাম নেই দেখে ‘অভিমানী’ এক নেতা মেসেজ করেন তৃণমূলের মেদিনীপুর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি সুজয় হাজরাকে। দলের এক সূত্রে খবর, মেসেজে ওই নেতা লেখেন, ‘আমাকে একটা মেম্বারও (সাধারণ সদস্য) করলে না?’ সটান পাল্টা মেসেজ করেন সুজয়। পাল্টা মেসেজে তৃণমূলের জেলা সভাপতি লেখেন, ‘দাদা, প্রিন্টিং মিসটেক। তোমাকে ডিস্ট্রিক্ট সেক্রেটারি করা আছে। আমি অ্যাড করে দেব।’

Advertisement

দুই, দল থেকে স্বেচ্ছায় অবসর নিতে চেয়ে ফেসবুক পোস্ট করেন এক নেতা। নতুন কমিটিতে সাধারণ সদস্য হিসেবে তাঁর নাম রয়েছে। পোস্টে ওই নেতা লেখেন, ‘২০০৬। দুর্দিনে, দু:সময়ে ইনিংস শুরু করেছিলাম। আজকে ইনিংসের সমাপ্তি ঘোষণা করলাম। সবকিছু থেকে অবসর নিলাম।’

আরও লেখেন, ‘যাঁরা আমাকে না জানিয়ে জেলার সাধারণ সদস্য করেছেন, তাঁদের কাছে অনুরোধ, আমার নাম তালিকা থেকে বাদ দেবেন প্লিজ।’ কেন ফেসবুক পোস্টে তাঁর ওই আবেদন, সে ব্যাখ্যা ওই পোস্টেই দিয়েছেন ওই নেতা। লিখেছেন, ‘অনলাইনে (ফেসবুকে ছড়ানো তালিকায়) নাম দেখলাম। তাই অনলাইনে জানালাম।’

তিন, বৃহস্পতিবার মেদিনীপুরে তৃণমূলের এক সমাবেশ হওয়ার কথা ছিল। জনজাতিদের নিয়ে। কর্মসূচি পূর্বঘোষিত। সেই মতো মেদিনীপুরের গান্ধী মূর্তির সামনে মঞ্চ বাঁধার কাজ শুরু হয়েছিল। বুধবার রাতে সংশ্লিষ্ট ডেকরেটর্স সংস্থাকে জানানো হয়, সমাবেশ বাতিল। মঞ্চ বাঁধার কাজ আর এগোতে হবে না। বরং যে সব বাঁশ বাঁধা হয়েছে, রাতারাতি সেগুলি খুলে ফেলতে হবে। নতুন জেলা কমিটি ঘোষণা। কোন্দল প্রকাশ্যে আসা।

ঘটনাচক্রে, ঠিক এর পরপরই প্রস্তাবিত সমাবেশ বাতিলের সিদ্ধান্ত। কোন্দলের সঙ্গে সমাবেশ বাতিলের কি কোনও যোগসূত্র রয়েছে? বৃহস্পতিবার বিকেলে তৃণমূলের পশ্চিম মেদিনীপুরের কো- অর্ডিনেটর অজিত মাইতির জবাব, ‘‘প্রথমত, দলে কোনও কোন্দলই নেই। দ্বিতীয়ত, ওই সমাবেশ ঠিক বাতিল হয়নি। বলা যেতে পারে স্থগিত হয়েছে। সভার জন্য মঞ্চ বাঁধাও হয়ে গিয়েছিল বলে শুনেছি। সভাটি পরে হবে বলেই মঞ্চ খোলা হয়েছে।’’

দলের এক সূত্রে খবর, নতুন জেলা কমিটি ঘোষণার আগের মুহূর্তেও কয়েকটি নাম তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। দলীয় কোন্দল সামাল দিতেই কি শেষ মুহূর্তে নাম অন্তর্ভুক্তি, জল্পনা রয়েছে।

ওই সূত্রে খবর, শুরুতে ঠিক ছিল, জেলা কমিটিতে সাধারণ সম্পাদক থাকবেন ১৩ জন, সম্পাদক থাকবেন ১৪ জন। একেবারে শেষ মুহূর্তে এই দুই ক্ষেত্রে সংখ্যাটা বেড়েছে। সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে ১৬ জনকে, সম্পাদক করা হয়েছে ১৮ জনকে। সবমিলিয়ে ৫৮ জনের জেলা কমিটি হয়েছে। সহ সভাপতি ৯ জন, সাধারণ সদস্য ১১ জন।

ঘাটাল সাংগঠনিক জেলার কমিটিতে ঠাঁই হয়নি মহম্মদ রফিকের। ’৯৮- ২০০০ সালে কেশপুরে তৃণমূলের ‘রবিনহুড’ ছিলেন রফিক। কেশপুর ঘাটাল সাংগঠনিক জেলার অন্তর্গত। রফিকের নাম রয়েছে মেদিনীপুর সাংগঠনিক জেলার কমিটিতে। সাধারণ সম্পাদক হিসেবে। জেলার তৃণমূল নেতৃত্বের অবশ্য দাবি, বর্তমানে রফিক মেদিনীপুরে থাকেন। তাই এখানকার জেলা কমিটিতে তিনি রয়েছেন।

রফিক বলছেন, ‘‘আমি ১৯৯৮ সাল থেকে তৃণমূলের জেলা সাধারণ সম্পাদক ছিলাম। তখন মেদিনীপুর অবিভক্ত। আমি কেশপুরের ভোটার। জঙ্গল, পাহাড়, সমুদ্র যেখানেই রাখুক, আমি দলের হয়ে কাজ করব।’’

দলে গুঞ্জন, নতুন জেলা কমিটি গঠনে কিছু ‘অঙ্ক’ না কি আড়ালে থেকে ‘কষেছেন’ জেলা থেকে নির্বাচিত, এক ‘প্রভাবশালী’ মন্ত্রী। তাঁর কিছু অনুগামীরও জায়গা হয়েছে কমিটিতে। তৃণমূলের এক জেলা নেতার অবশ্য দাবি, ‘‘রাজ্য থেকে যে তালিকা পাঠিয়ে প্রকাশ করতে বলা হয়েছিল, সেই তালিকাই প্রকাশ করা হয়েছে।’’ শীর্ষ নেতৃত্ব বারবার সতর্ক করা সত্ত্বেও জেলায় তো গোষ্ঠীকোন্দল বন্ধ হওয়ার নাম নেই?

তৃণমূলের জেলা কো- অর্ডিনেটর অজিত মাইতি বলেন, ‘‘কারও হতাশ হওয়ার কিছু নেই! দলের মধ্যে সমন্বয় রেখে, পুরনোদের যোগ্য মর্যাদা দিয়েই নতুন জেলা কমিটি গঠন হয়েছে। পরে পরে আরও অন্তর্ভুক্তি হবে!’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement