২১ নম্বর ওয়ার্ডে নির্দল প্রার্থীর প্রচার। নিজস্ব চিত্র।
গড়বেতার মাঠ ছেড়ে ফের মেদিনীপুরের মাঠে তিনি। পুর যুদ্ধে। আশিস চক্রবর্তী ওরফে নান্টি। গড়বেতার প্রাক্তন বিধায়ক আশিস। মেদিনীপুরের মাঠ অবশ্য তাঁর অচেনা নয়। তিনবারের কাউন্সিলর। এক সময়ে পুরসভার উপপুরপ্রধানও ছিলেন। এ বার তিনি কঠিন লড়াইয়ের মুখে। তাঁর প্রতিপক্ষে রয়েছেন সাতজন প্রার্থী! এর মধ্যে চারজনই নির্দল। তাঁদের মধ্যে আবার তিনজনই তৃণমূলের টিকিট-প্রত্যাশী ছিলেন। তৃণমূলের প্রার্থী, দলের রাজ্য সম্পাদক আশিস অবশ্য আত্মবিশ্বাসী, ‘‘নির্দলেরা কোনও ব্যাপার নন। মানুষ তৃণমূলের প্রতীকেই ভোট দেবেন।’’
মেদিনীপুরে ২৫টি ওয়ার্ড রয়েছে। প্রার্থী সবমিলিয়ে ১০৯ জন। এর মধ্যে নির্দল ১৮ জন। শহরের এই ২১ নম্বর ওয়ার্ডেই সর্বোচ্চ সংখ্যক প্রার্থী রয়েছেন, ৮ জন। আর কোনও ওয়ার্ডে এই সংখ্যক প্রার্থী নেই। ৮ জনের মধ্যে ৪ জনই নির্দল। রাজনৈতিক মহলের অনুমান, নির্দলদের ভোট কাটাকুটির অঙ্কে কঠিন লড়াইয়ের মুখে পড়তে হতে পারে তৃণমূল প্রার্থীকে। এখানে বিজেপির প্রার্থী বিশ্বনাথ পট্টনায়েক। বিশ্বনাথ দলের সক্রিয় কর্মী। কংগ্রেসের প্রার্থী মহম্মদ সইফুল। এই এলাকারই বাসিন্দা সইফুল যুব কংগ্রেসের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সভাপতি। ফরওয়ার্ড ব্লকের প্রার্থী তারক মণ্ডল। জোড়া পাতা প্রতীকে নির্দল অঞ্জনা রায়। কুঠার প্রতীকে নির্দল তনুপ্রকাশ দত্ত ওরফে ঝুনু। মই প্রতীকে নির্দল মানস দাস। উদীয়মান সূর্য প্রতীকে নির্দল সাবানা বেগম। অঞ্জনার পরিচিতি তৃণমূল কর্মী হিসেবে। মানস এলাকার প্রাক্তন কাউন্সিলর মণিলাল দাসের ছেলে। গত পুরভোটে কংগ্রেসের প্রতীকে জিতেছিলেন মণিলাল। সে বার ২৮টি ভোটের ব্যবধানে মণিলালের কাছে পরাজিত হয়েছিলেন আশিস। পরে কংগ্রেস কাউন্সিলর তৃণমূলে যোগদান করেছিলেন। মণিলাল প্রয়াত হয়েছেন। তৃণমূলে থেকেও নির্দল কেন? মানস বলছেন, ‘‘আমি দলবিরোধী নই। তবে যে সিস্টেমে দলের প্রার্থী বাছাই হয়েছে, আমি তার বিরোধী।’’
আশিস পাশের ২২ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা। এই ওয়ার্ড থেকেই তিনবার পুরভোটে জিতেছেন তিনি। গতবার ওয়ার্ডটি মহিলা সংরক্ষিত হয়ে পড়েছিল বলে তাঁকে পাশের ২১ নম্বর ওয়ার্ডে প্রার্থী হতে হয়েছিল। আর এ বার ২২ নম্বরে তৃণমূলের প্রার্থী হয়েছেন দলের মেদিনীপুর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি সুজয় হাজরার স্ত্রী মৌসুমী হাজরা। দীর্ঘ সময়ে ২১ নম্বরে কংগ্রেসের প্রভাব ছিল। বাম আমলেও বামেরা দাগ কাটতে পারত না। পরে হাওয়া তৃণমূলের দিকে ঘুরেছে। গত লোকসভা ভোটে মেদিনীপুরে বিজেপির হাওয়া বয়েছিল। সে সময়েও এখান থেকে ৭১টি ভোটে এগিয়ে থেকেছে তৃণমূল। আর গত বিধানসভা ভোটের নিরিখে এই ওয়ার্ড থেকে ঘাসফুল-শিবির ৮১৫টি ভোটে এগিয়ে রয়েছে। নির্দলেরা বেশি ভোট কাটলে সুবিধা কার, জল্পনা তুঙ্গে। বিজেপি প্রার্থী বিশ্বনাথ স্পষ্ট জানাচ্ছেন, ‘‘জেতার জন্যই লড়ছি।’’ কংগ্রেস প্রার্থী সইফুলের দাবি, ‘‘মানুষ আমাদেরই চাইছেন।’’
২১ নম্বরেই সর্বোচ্চ প্রার্থী, নির্দলও। এটা কী ভাবে হল? তৃণমূল প্রার্থী আশিস বলছেন, ‘‘নির্দলদের নিজস্ব পরিচিতি নেই। কারও কারও কথা রাখবার জন্য ওঁরা দাঁড়িয়েছেন! ব্যক্তিস্বার্থ কাজ করছে!’’ প্রাক্তন বিধায়ক জুড়ছেন, ‘‘এলাকার সকলে আমাকে ভাল মতোই চেনেন। আমার ওপর দিদির (দলনেত্রী) স্নেহ, আশীর্বাদও আছে। এটাও সকলে জানেন। নির্দলেরা আমাদের কোনও ক্ষতিই করতে পারবেন না। এখানে তৃণমূলই বিপুল ভোটে জিতবে।’’