প্রতীকী ছবি
করোনার সামান্য উপসর্গ রয়েছে, এমন ক্ষেত্রে বাড়িতেই পর্যবেক্ষণে রেখে চিকিৎসার নিদান দিয়েছে কেন্দ্র-রাজ্য দুই সরকার। এমন অবস্থায় ১৪ দিনের মেয়াদ ফুরনোর আগেই নিভৃতবাস (কোয়রান্টিন) কেন্দ্র থেকে ছুটি দেওয়া শুরু হল।
বুধবার রাতে ঘাটাল শহরের নিভৃতবাস কেন্দ্র থেকে ৩৬ জনকে বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছে প্রশাসন। এঁদের কেউ ছ’দিন ছিলেন, কেউ সাত দিন। এর ফলে, এক সপ্তাহের মধ্যেই ফাঁকা হয়ে গিয়েছে ঘাটাল শহরের তিনটি নিভৃতবাস কেন্দ্র। জেলা প্রশাসন ও স্বাস্থ্য দফতর জানিয়েছে, রাজ্যের নির্দেশেই এই পদক্ষেপ। পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলা মুখ্যস্বাস্থ্য আধিকারিক গিরীশচন্দ্র বেরা বলেন, “সরকারি নির্দেশ মেনেই অনেককে সরকারি কোয়ারান্টিন থেকে বাড়িতে পাঠানো হয়েছে। তবে এঁদের প্রত্যেকের নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হবে। বাড়ি বাড়ি যাবেন স্বাস্থ্যকর্মীরা। বাড়িতে জীবাণুনাশক স্প্রে করা হবে।”
এত দিন অবশ্য ঠিক এর বিপরীতটাই হচ্ছিল। কোনও করোনা আক্রান্তের সংস্পর্শে আসা লোকজন এবং ভিন্ রাজ্য ফেরতদের নিয়ম করে ১৪ দিন নিভৃতবাসে রাখা হচ্ছিল। অনেক সময় সেই মেয়াদ বাড়ায় ক্ষোভও জানাচ্ছিলেন কেউ কেউ। বস্তুত, নিভৃতবাস কেন্দ্রে যাঁরা ছিলেন, তাঁদের প্রত্যেকের বাড়িতে আলাদা ঘর নেই, ঘর সংলগ্ন শৌচাগার তো দূরঅস্ত্। রাজ্য সরকারের তরফে প্রথমে জানানো হয়েছিল, যাঁদের গৃহ পর্যবেক্ষণে থাকার পর্যাপ্ত পরিকাঠামো রয়েছে, অর্থাৎ আলাদ ঘর ও লাগোয়া শৌচাগার আছে, তাঁদের উপসর্গ থাকলেও বাড়িতে বিশ্রাম নিতে পারবেন। তবে এ ভাবে গৃহ পর্যবেক্ষণে থাকার কথা বলে নিভৃতবাস কেন্দ্র থেকে ছুটি দেওয়া হয়নি।
জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক এ দিন জানিয়েছেন, ঘাটালের করোনা আক্রান্ত অ্যাম্বুল্যান্স চালক সূত্রে আরও দশ জনের করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট বৃহস্পতিবার নেগেটিভ এসেছে। গত ২৩ মার্চ ওই অ্যাম্বুল্যান্স চালক করোনা আক্রান্ত হন। এর পরই ওই চালকের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের চিহ্নিত করার কাজ শুরু হয়। ২৩ মার্চ রাতেই করোনা আক্রান্ত যুবকের আবাসনের ২৬ জনকে ঘাটাল শহরের অরবিন্দ স্টেডিয়াম এবং দুই বেসরকারি নার্সিংহোমের নিভৃতবাস কেন্দ্রে এনে রাখা হয়। তারপর আরও কয়েকজন অ্যাম্বুল্যান্স চালক, মালিক-সহ মোট ৪৫ জনকে নিভৃতবাস কেন্দ্রে রাখা হয়েছিল। তারমধ্যে ঘাটাল শহরে ছিলেন ৩৬ জন। বাকিদের বীরসিংহে সরকারি গেস্ট হাউসে রাখা হয়েছিল। বুধবার সন্ধ্যায় স্বাস্থ্য দফতর ও মহকুমা প্রশাসনের তরফে ঘাটাল শহরে সরকারি নিভৃতবাসে থাকা ৩৬ জনকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। তবে অ্যাম্বুল্যান্স চালকের স্ত্রী-সহ পরিবারের বাকিরা বীরসিংহেই নিভৃতবাসে রয়েছেন।
করোনা আক্রান্ত ওই অ্যাম্বুল্যান্স চালকের যে এলাকায় বাড়ি, তা ইতিমধ্যে সিল করে দিয়েছে পুলিশ। এলাকার রাস্তাঘাট সুনসান। সবাই ঘরবন্দি। তারই মধ্যে ২৬ জন নিভৃতবাস কেন্দ্র থেকে ফেরায় এলাকায় গুঞ্জন ছড়িয়েছে। অনেকেরই প্রশ্ন, যাঁরা গৃহ পর্যবেক্ষণে থাকবেন, তাঁরা সব নিয়ম মানবেন তো? ঘরের বাইরে বেরোবেন না তো? তাঁরা নিয়ম মানছেন কি না সেটা দেখা হরবে তো?
জেলা স্বাস্থ্য দফতরের আশ্বাস, গৃহ পর্যবেক্ষণে থাকলেও তাঁদের উপর স্বাস্থ্য কর্মীরা নজর রাখবেন। পাশাপাশি চলবে পুলিশের নজরদারি।