প্রতীকী ছবি।
দলের সংখ্যালঘু সেলের বৈঠক। সেখানে আমন্ত্রিত হয়ে দুই সম্প্রদায়ের সম্পর্কে মন্তব্য করে বিতর্কে জড়িয়েছেন এগরা-১ পঞ্চায়েত সমিতির পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ তথা তৃণমূল নেতা প্রভুপদ দাস।
দলের নেতার এ ধরনের মন্তব্যের জন্য সংবাদমাধ্যমের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিয়েছেন তৃণমূলের পূর্ব মেদিনীপুর জেলা সভাপতি তথা সৌমেন মিত্র। তবে জেলা নেতৃত্ব ক্ষমাপ্রার্থী হলেও নিজের মন্তব্যে অনড় প্রভুপদ। আসন্ন বিধানসভা ভোটের মুখে রাজ্যের শাসকদল যখন গেরুয়া শিবিরের নেতাদের বক্তৃতায় সাম্প্রদায়িক মন্তব্য রয়েছে বলে অভিযোগ করছে, সে সময় তৃণমূলেরই ব্লক নেতৃত্বের মন্তব্যে অস্বস্তি বাড়িয়েছে জোড়াফুল শিবিরে। আর প্রভুপদর ওই বক্তব্যের ভিডিয়ো (যার সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার পত্রিকা) মঙ্গলবার রাতেই বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী নিজের টুইটার হ্যান্ডেলে পোস্ট করে দাবি করেছেন, ‘বাংলার মানুষ যে ভোট দেবে না তা বুঝে গেছে তৃণমূল। তাই প্রকাশ্যেই কর্মীদের হিংসা ছড়ানোর নির্দেশ দিচ্ছে এগরা পঞ্চায়েত সমিতির তৃণমূল কর্মাধ্যক্ষ’।
সোমবার সন্ধ্যায় এগরা-১ ব্লকের জেড়থান অঞ্চল তৃণমূলের সংখ্যালঘু সেলের সাংগঠনিক বৈঠক ছিল। সেখানে আমন্ত্রিত ছিলেন এগরা-১ পঞ্চায়েত সমিতির পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ তথা ব্লক তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক প্রভুপদ দাস। বৈঠকে আগামী বিধানসভা ভোটে তৃণমূলের রণকৌশল নিয়ে আলোচনা হয়। বৈঠকেরই প্রভুপদর একটি বক্তৃতার ভিডিয়ো সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। তাতে প্রভুপদকে বলতে দেখা যাচ্ছে, ‘‘যেন তেন প্রকারে ভোট করতে হবে। কাউকে হাত ধরলে ভোট হবে, ব্যবস্থা করুন। কাউকে চুলের মুঠি ধরলে ভোট হবে, ব্যবস্থা করুন। কাউকে পা ধরলে ভোট হবে, ব্যবস্থা করুন। যার যে ওষুধ লাগবে, সেটা আপনাদের প্রয়োগ করতে হবে। প্রয়োজনে ধমকাতে হবে।’’
এখানেই থেমে থাকেননি প্রভুপদ। এর পরেই তিনি যে বার্তা দেন, তাতেই সাম্প্রদায়িক উস্কানি রয়েছে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। সংখ্যালঘু সেলের উপস্থিত সদস্যদের অন্য সম্প্রদায়ের লোকদের নিয়ন্ত্রণ করার বার্তা দেন ওই তৃণমূল নেতা। সোমবারের বৈঠকে তৃণমূলের একাধিক অঞ্চল সভাপতিরা উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু ভিডিয়োয় কাউকেই প্রভুপদের এ রকম মন্ত্যবের বিরোধিতা করতে শোনা যায়নি।
গত লোকসভা ভোটে এগরা বিধানসভায় তৃণমূলকে অনেকটাই পিছনে ফেলেছে বিজেপি। তাই এ বার ভোটে জিততেই কি এ ধরনের উস্কানিমূলক বার্তা দিচ্ছেন?
প্রভুপদর জবাব, ‘‘আমি কোনও বিতর্কিত কথা বলিনি। যাঁরা সাড়ে ন বছরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উন্নয়ন ভোগ করে এখন স্বীকার করছে না, তাদের এই ভাষায় বোঝাতে হবে। আসলে ভোটের আগে কর্মীদের মনোবল বাড়াতে এ রকম একটুআদটু বলতে হয়।’’
তবে এ ধরনের মন্তব্য যে একেবারই অনভিপ্রেত, তা স্বীকার করছেন তৃণমূলের জেলা সভাপতি সৌমেন মহাপাত্র। তিনি বলেন, ‘‘এমন কথা বলে মানুষকে ব্যথিত করা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কখনও সমর্থন করেন না। তিনি ব্যক্তিগত ভাবে এই মন্তব্য করেছেন। দল কখনও এই বক্তব্য সমর্থন করে না। তবুও এই বক্তব্যের জন্য আমি ক্ষমাপ্রার্থী। দলীয় ভাবে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ
করা হবে।’’
তৃণমূল নেতা প্রভুপদের মন্তব্যের নিন্দা করে বিজেপি’র কাঁথি সাংগঠনিক জেলা সভাপতি অনুপ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘তৃণমূলের মানুষদের কাছে এই ধরনের মন্তব্য ছাড়া কোনও দেশপ্রেমিকের ভাষা বেরোবে না। যদি কেউ ভোটের সময় এই ধরনের সমস্যা তৈরির চেষ্টা করেন, মানুষ ঐক্যবদ্ধ হয়ে তাদের হিসাব বুঝে নেবে ভোটে হারার ভয়ে তৃণমূলের মস্তিষ্ক বিকৃতি ঘটেছে।’’