আস্ফালন: বিজেপি-র মিছিলে নিরস্ত্র দিলীপ ঘোষ। তবে পুরোভাগে থাকা খুদেদের হাতে রড। রবিবার খড়্গপুরের গোলবাজারে। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল
বিকেল হতেই উধাও সকালের ঝাঁঝ।
রবিবার, রামনবমীর দিন নিজের খাসতালুকে শক্তি প্রদর্শনের চেষ্টা করলেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। এ দিন সকালে তাঁর বিধানসভা কেন্দ্র খড়্গপুরে দিলীপ বলেছিলেন, ‘‘পরম্পরা মেনে অস্ত্র হাতে মিছিল হবে। আমরা রাজনীতি রামকে নিয়েই করব। কারও ক্ষমতা থাকলে আটকাক। তৃণমূল নীতির দিক থেকে হেরে গিয়েছে।’’ বিকেলে মিছিল হল। দেখা গেল অস্ত্রের ঝলকানিও। প্রশাসন আগেই জানিয়েছিল, অস্ত্র হাতে মিছিল হলেই এফআইআর হবে। কিছুটা চ্যালেঞ্জের সুরে দিলীপও জানিয়েছিলেন, অস্ত্র নিয়ে মিছিল করতে তিনি প্রস্তুত। যদিও বাস্তবে তা পুরোপুরি দেখা গেল না। একবার হাতে তরোয়াল, কখনও বা গদা কিংবা স্টিলের রড হাতে ‘সশস্ত্র’ হলেন দিলীপ। সবই অবশ্য সামান্য সময়ের জন্য। যদিও দিলীপের দাবি, ‘‘ঝাঁঝ কমার প্রশ্ন নেই। হাতে তো অস্ত্র ছিলই। পুলিশের অধিকার আছে মামলা করার।’’
এ দিন সকালে নিজের বিধায়ক কার্যালয় থেকে বেরিয়ে কেন্দ্রীয় বিদ্যালয়ের কাছে একটি মন্দিরে পুজো দেন দিলীপ। সেখানেই গদা হাতে দেখা যায় বিধায়ককে। এরপর শহরের ১৩টি আখড়ার বেশ কয়েকটির প্রস্তুতি দেখেন তিনি। দিলীপ প্রথমেই পৌঁছন শহরের ঝুলি এলাকার বজরং আখড়ায়। সেখানে এ বার ৪০ ফুটের বজরংবলীর মূর্তি তৈরি হয়েছে। সেখানে প্রদর্শনীর জন্য বোর্ডে লাগানো ছিল অস্ত্র। সেখান থেকে তরোয়াল হাতে তুলে নেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি। চলে জয় শ্রী রাম’ ধ্বনি। অস্ত্র হাতে দিলীপ বলেন, ‘‘রামচন্দ্র সমাজের আদর্শ। তাঁর আদর্শ সকলে অনুসরণ করুন। ভারতে রামরাজ্য প্রতিষ্ঠা করুন।” তবে এ ভাবে অস্ত্র প্রদর্শনে সরকার যে অশান্তির আশঙ্কা করছে? দিলীপের কথায়, “কোনও অশান্তি হবে না। প্রশাসন যদি তাদের যোগ্যতার প্রমাণ দিতে না পারে তবে তো ভুগতে হবে।” এমনকী, তাঁকে এ-ও বলতে শোনা যায়,“অস্ত্র আখড়া কমিটির। ক্ষমতা থাকলে গাড়ি তল্লাশি করে অস্ত্র খুঁজে বার করা হোক।”
বিভিন্ন আখড়া কমিটি বোর্ডে অস্ত্র লাগিয়ে প্রদর্শনীর ব্যবস্থা রাখলেও প্রশাসনিক নির্দেশিকা মানার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। তবে কিছুটা আশঙ্কায় ছিল প্রশাসনও। শহরের আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থা নজর রাখতে শহরে ঘুরেছেন জেলা পুলিশ সুপার অলোক রাজোরিয়া। সকালের আখড়া পরিদর্শন পর্ব শেষ করে ফের বিকেলে বার হন বিজেপির রাজ্য সভাপতি। ২৬ নম্বর ওয়ার্ডে একটি শোভাযাত্রায় ত্রিশূল হাতে দেখা যায় তাঁকে। মালঞ্চের পল্লিশ্রী দিলীপের হাতে ছিল তির-ধনুক আর গদা। খড়িদায় আখড়ার শোভাযাত্রায় গদা হাতে খেলতে দেখা যায় দিলীপকে। হাতে তুলে নেন তরোয়ালও। গোলবাজারে শোভাযাত্রায় শিশুদের হাতে দেখা যায় স্টিলের রড।
নির্বিঘ্নেই মিটল রামনবমী। স্বস্তি পেল পুলিশ-প্রশাসনও।