ছবি এএফপি।
বুলবুলের প্রভাবে উপকূলবর্তী এলাকায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা করা হয়েছিল। কিন্তু ভয়াবহতা সেই মাত্রায় না পৌঁছলেও উপকূলবর্তী এলাকায় ক্ষয়ক্ষতির হিসেব জানার জন্য প্রশাসনিক প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
সোমবার থেকে গ্রাম পঞ্চায়েত ভিত্তিক ওই তথ্য সংগ্রদের কাজ শুরু করেছে বিভিন্ন ব্লক প্রশাসন। আপাতত রামনগর-২ ব্লকে ক্ষতির পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট এখনও পাওয়া যায়নি। তবে মন্দারমণি সহ সংশ্লিষ্ট ব্লকের প্রচুর বাগদা মাছের ভেড়ি, বাড়ি, নষ্ট হয়েছে। আগামী দু-তিন দিনের মধ্যে সব কটি গ্রাম পঞ্চায়েতের কাছ থেকে রিপোর্ট চলে আসবে বলে জানিয়েছেন বিডিও মনোজ কাঞ্জিলাল। তবে, উপকূলবর্তী রামনগর-১ ব্লকে প্রায় ১১০০টি বাড়ি ভেঙেছে। দিঘা এবং রামনগর ছাড়া গ্রামীণ এলাকাগুলি এখনও বিদ্যুৎহীন। বেশ কিছু জায়গায় এখনও রাস্তার উপরে গাছ ভেঙে পড়ে রয়েছে। ওই সব গাছ সরিয়ে নেওয়ার জন্য এনডিআরএফ কর্মীদের এলাকায় পাঠানো হচ্ছে বলে ব্লক প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে।
ব্লক প্রশাসন সূত্রে খবর খেজুরি-১ ব্লকে ৯৫ শতাংশ আমন ধান নষ্ট হয়েছে। ৬৮টি বাড়ি সম্পূর্ণ এবং ৯৮টি বাড়ির আংশিক ক্ষতি হয়েছে। তবে বিদ্যুৎ পরিষেবা গোটা ব্লকে প্রায় স্বাভাবিক হয়েছে। অন্যদিকে খেজুরি-২ ব্লকে ৩০০টি বাড়ি সম্পূর্ণ এবং ৪০০টি বাড়ির আংশিক ক্ষতি হয়েছে। হলুদবাড়ি, নিজ কসবা এলাকায় এখনও বিদ্যুৎ পৌঁছয়নি। এই ব্লকে আমন ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। মঙ্গলবার ধানের ক্ষয়ক্ষতি সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহের জন্য মুখ্যমন্ত্রীর বিশেষ সচিব খেজুরি আসতে পারেন বলে ব্লক প্রশাসনিক সূত্রে খবর।
জেলায় বুলবুলের জেরে ঘরবাড়ি ও চাষের (আমন ধান,আনাজ, পান, ফুল) ক্ষতি নিয়ে রাজ্য সরকারের কাছে বিস্তারিত রিপোর্ট পাঠাল পূর্ব মেদিনীপুর জেলা প্রশাসন। সোমবার বিকেলে জেলাশাসকের অফিসে বিভিন্ন দফতরের আধিকারিকদের নিয়ে ক্ষয়ক্ষতির পর্যালোচনা বৈঠক হয়। সেখানে জেলা আধিকারিকরা ক্ষতির হিসেব দেন জেলা প্রশাসনের কাছে। ওই হিসেবের ভিত্তিতে জেলা প্রশাসনের ফক্ষ থেকে রাজ্য সরকারের কাছে রিপোর্ট পাঠানো হচ্ছে ।
জেলা প্রশাসনের হিসেবে, তুলনায় বেশি ক্ষতি হয়েছে খেজুরি-২, নন্দীগ্রাম-১, কাঁথি শহর, কাঁথি -১ ব্লক, দেশপ্রাণ ও কাঁথি-৩ ব্লক এলাকা। ঝড়বৃষ্টিতে জেলায় একজনের মৃত্যু হয়েছে। নন্দীগ্রাম -২ ব্লকের খোদামবাড়ি এলাকার বাসিন্দা সুলতা দাসের মৃত্যুর ঘটনাকে ঝড়-বৃষ্টির জেরেই মৃত্যু বলে রাজ্য সরকারের কাছে রিপোর্ট পাঠানো হয়েছে। উপকূলবর্তী এলাকায় শুকনো মাছের ক্ষতি হয়েছে। ঝড়-বৃষ্টির দাপটে বিদ্যুতের খুঁটি, লাইনের তার সহ যান্ত্রিক ক্ষতি হয়েছে। এছাড়াও সমুদ্র, নদীবাঁধ, রাস্তাঘাট সহ বিভিন্ন এলাকায় কিছু স্কুলবাড়ির ক্ষতি হয়েছে বলে জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর।
জেলাশাসক পার্থ ঘোষ বলেন, ‘‘ঝড়বৃষ্টিতে জেলায় ক্ষতির পর্যালোচনা করা হয়েছে। ঘরবাড়ি, কৃষি, বিদ্যুৎ ও সেচ দফতর সহ বিভিন্ন দফতরের ক্ষতির বিষয়ে রিপোর্ট রাজ্য সরকারের কাছে পাঠানো হয়েছে।’’ তিনি জানান, ফসল বিমাবীমা যোজনায় চাষের ক্ষতিপূরণ পাওয়ার জন্য ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের আবেদনের জন্য পঞ্চায়েত ও ব্লক কৃষি দফতরকে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।