প্রত্যন্ত গ্রামে সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালের পেল্লায় ভবন তৈরি হয়েছে। ঝাঁ চকচকে যন্ত্রপাতি এসেছে। কিন্তু অস্ত্রোপচার করে প্রসবের মতো সামান্য পরিষেবাও সেখানে মিলছে না।
মঙ্গলবার এমনই পরিকাঠামোর অভাব সামনে এসেছে পশ্চিম মেদিনীপুরের ডেবরা সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে। অর্জুনির শালকুঠির বাসিন্দা বছর বাইশের আলপনা পাত্রকে মেদিনীপুর মেডিক্যালে ‘রেফার’ করে দেওয়ায় প্রসূতির পরিজনেরা তাণ্ডবও চালান। মারধর করা হয় চিকিৎসক ও নার্সদের। পরিস্থিতি সামলাতে পৌঁছন খড়্গপুরের অতিরিক্ত মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক দেবাশিস পাল। তিনি বলেন, “ওই প্রসূতির অস্ত্রোপচার প্রয়োজন ছিল। কিন্তু ডেবরা সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে অপারেশন থিয়েটার (ওটি) চালু হয়নি। তাই রেফার করা হয়। তারপরে প্রসূতির পরিজনেরা যে আচরণ করেছেন, তা নিন্দনীয়।’’ মারধরের ঘটনায় থানায় অভিযোগ জানানো হয়েছে।
সোমবার প্রসব যন্ত্রণা নিয়ে ভর্তি হন আলপনা পাত্র। ওই দিন সকালে স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ স্নেহা শর্মা প্রসূতিকে পরীক্ষা করে বলেন, সব ঠিক রয়েছে। তবে রাতে আলপনার অবস্থার অবনতি হয়। অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন পড়ে। কিন্তু ওটি না থাকায় আলপনাকে রেফার করে দেন কর্তৃপক্ষ। রাতে প্রসূতির পরিবারের কোনও পুরুষ সদস্য হাসপাতালে না থাকায় এ দিন সকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করেন চিকিৎসক অনাবিল দত্ত।
এ দিন হাসপাতালে এসে রেফারের কথা জানতেই ক্ষোভে ফেটে পড়েন প্রসূতির পরিজনেরা। অভিযোগ, চিকিৎসক অনাবিলবাবুকে ঘিরে মারধর করা হয়। নার্সরা তাঁকে বাঁচাতে গেলে তাঁরাও মার খান। অসুস্থ হয়ে পড়েন অঞ্জলি ঘোড়ই নামে এক নার্স। খবর পেয়ে ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক রজত পাল এলে তাঁকেও বেধড়ক মারধর করা হয়। শৌচাগারে টেনে নিয়ে গিয়ে তাঁর গায়ে নোংরা মাখিয়ে দেওয়া হয়। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি সামলায়। রজতবাবু বলেন, “লোহার রড দিয়ে মাথায় মারার চেষ্টা করেছিল ওরা” পরে ওই প্রসূতিকে স্থানীয় নার্সিংহোমে সন্তানের জন্ম দেন। সদ্যোজাতের অবস্থা সঙ্কটজনক হওয়ায় পাঁশকুড়ার বেসরকারি হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়েছে।
চিকিৎসক-নার্সদের উপর এমন হামলার নিন্দা করেছেন সকলেই। একই সঙ্গে প্রশ্ন উঠছে ন্যূনতম পরিকাঠামো না গড়ে কেন চালু করা হচ্ছে সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল! ডেবরা গ্রামীণ হাসপাতালের পাশেই গড়ে উঠেছে সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল। গত ৩০ জুন এখানে অন্তর্বিভাগ চালুর ঘোষণা হয়েছিল। কিন্তু এখনও পর্যন্ত পুরনো ভবনেই চলছে প্রসূতি বিভাগ। রয়েছে কর্মী সঙ্কটও। হাসপাতালে রয়েছেন মাত্র ৮ জন জেনারেল ডিউটি মেডিক্যাল অফিসার, ২২ জন নার্স ও ৭ জন বিশেষজ্ঞ। স্নায়ু, অস্থি, হৃদ্রোগের কোনও বিশেষজ্ঞ নেই। এ প্রসঙ্গে জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরীশচন্দ্র বেরার বক্তব্য, “পরিকাঠামো তৈরির কাজ চলছে। ওটি-র কাজ এখন শেষ পর্যায়ে।” রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা বিশ্বরঞ্জন শতপথীরও আশ্বাস, ‘‘সব সুপার স্পেশ্যালিটিতেই ধাপে ধাপে অন্তর্বিভাগ, ওটি চালু হচ্ছে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকও দেওয়া হচ্ছে।’’