প্রতীকী ছবি।
সামনেই পুর-নির্বাচন। তার আগেই জলপ্রকল্পের কাজে স্থানীয়দের নিয়োগের দাবিতে ২৪ ঘণ্টা ধরে জলশূন্য হয়ে রইল রেলশহরের বিভিন্ন এলাকা। শুক্রবার বিকেল থেকে শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত পশ্চিম মেদিনীপুরের খড়্গপুর পুরসভার অধিকাংশ এলাকায় বন্ধ থাকল জল সরবরাহ। নদী থেকে পাইপলাইনে আসা জল সরবরাহ না হওয়ায় প্রবল জলসঙ্কটে শহরবাসী।
পরিস্থিতি এমনই যে, এ দিন কয়েকটি এলাকায় বাড়ি থেকে ১০০ মিটার দূরের কুঁয়ো থেকে জল টেনে নিয়ে আসতে হয়েছে। আবার কোথাও বছরভর অপর্যাপ্ত জল সরবরাহ নিয়ে পুরসভার বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন শহরের বাসিন্দারা। যদিও এর পিছনের মূল কারণ, কাঁসাই নদী সংলগ্ন কেশপালে জলপ্রকল্পে নিয়োগের দাবিতে স্থানীয়দের বিক্ষোভ— এমনটাই দাবি করেছে পুর কর্তৃপক্ষ।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, রেলশহরের সরবরাহ হওয়া জল আসে কাঁসাই নদী থেকে। খড়্গপুর-১ ব্লকে কাঁসাই নদী সংলগ্ন কেশপালে প্রথম ও দ্বিতীয় জলপ্রকল্প গড়ে এই জল সরবরাহ করা হয়। তবে পুরসভার পক্ষ থেকে বিভিন্ন ওয়ার্ডে ডিপ-টিউবওয়েল গড়ে স্থানীয় ভাবে জল সরবরাহের ব্যবস্থা রয়েছে।
কয়েকটি ক্ষেত্রে জলের সঠিক বেগ বজায় রাখতে কংসাবতী নদী থেকে আসা জলের সঙ্গে একই পাইপলাইনে ডিপ-টিউবওয়েলের জল সরবরাহ করা হয়। তবে শহরের একটা বড় অংশের মানুষ নদী থেকে আসা জলের উপরই নির্ভরশীল।
যদিও সারা বছর নানা কারণে নদী থেকে সরবরাহ হওয়া জল অপর্যাপ্ত দাবি করে সরব হয় শহরবাসী। এমনকী, দ্বিতীয় জলপ্রকল্প চালুর পরেও বিভিন্ন অংশে পাইপলাইন সংযুক্ত না হওয়ায় জলসঙ্কট থেকেই গিয়েছে। গরম বাড়লেই চরমে পৌঁছয় জলসঙ্কট। তবে শীতের শেষেও ২৪ ঘণ্টারও বেশি জল সরবরাহ না হওয়ায় বিপাকে পড়েছে শহরবাসী।
এদিন খরিদা এলাকার বাসিন্দা ব্যবসায়ী নারায়ণ দাস বলেন, “শুক্রবার বিকেল থেকে জল নেই। কী যে কষ্ট ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না। কুঁয়ো থেকে কোনওমতে জল টেনে কাজকর্ম করছি।”
শুধু খরিদা নয়, ইন্দা, ঝাপেটাপুর, আয়মা, নিমপুরা, মালঞ্চ, তালবাগিচা, রবীন্দ্রপল্লি এলাকাতেও এ দিন জলশূন্য পরিস্থিতির শিকার হয়েছেন স্থানীয়রা। রবীন্দ্রপল্লির বাসিন্দা গৃহবধূ কল্যাণী দে বলেন, “এভাবে জল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় দূরে কুঁয়ো থেকে জল টেনে আনতে হচ্ছে।’’
তবে পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, এই জল সরবরাহ বন্ধের পিছনে রয়েছে অন্য কারণ। শুক্রবার থেকে কেশপালে জলপ্রকল্পের পাম্প চালু করা যায়নি।
স্থানীয় গ্রামবাসীরা ওই জলপ্রকল্প এলাকায় কাজের দাবিতে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন। তাঁদের অভিযোগ, ওই এলাকায় চলা জলপ্রকল্পে বাইরে থেকে লোক নিয়ে এসে চাকরি দেওয়া হচ্ছে। অথচ প্রকল্প গড়ার সময়েই স্থানীয়দের চাকরি দেওয়া হবে বলে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়। এখনও পর্যন্ত কেবল দু’জন গ্রামবাসী কাজ পেয়েছেন। আবার প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী এলাকায় রাস্তা তৈরি না হওয়া ও পাইপলাইন ফেটে রাস্তা ভেসে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
খড়্গপুরের জল বিষয়ক পুর-পারিষদ তৈমুর আলি খান বলেন, “কেশপালে জলপ্রকল্পে চাকরির জন্য গ্রামবাসীরা বিক্ষোভ দেখাচ্ছে। ওঁরাই জলপ্রকল্প বন্ধ করে রাখায় এমন অবস্থা। আমরা পুলিশের হস্তক্ষেপে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছি।”