শৌচালয় বন্ধ কোতোয়ালি বাজারে।
মূল বাজারের এলাকা সামান্য। চাতালে বড় জোর ৫০ জন বসতে পারে। রয়েছে বেশ কয়েকটি গুদামঘরও।
বাজারের কলেবর অবশ্য এর বাইরেই। এঁকেবেঁকে গলি ছাপিয়ে বসতবাড়ির দেওয়াল ঘেঁষে একের পর এক দোকান বসছে। নিয়মিত টাকা গুনেই ব্যবসা করছেন বিক্রেতারা। মূল বাজারের বাইরে যে সব সব্জি বিক্রেতারা বসেন তাঁরা দিনে ১০ টাকা করে ভাড়া দেন। চাতাল বা গুদামের ভাড়া বেশি, মাসে তিনশো টাকা। কিন্তু বিনিময়ে ব্যবসায়ীরা কোনও পরিষেবা পান না বলেই অভিযোগ। কয়েক বছর আগে তৈরি শৌচাগার যেন নরক। গুদামের ছাদ ফেটে গিয়েছে। বর্ষায় জল পড়ে। চাতালগুলির অবস্থাও তথৈবচ। স্থানে স্থানে ফাটল। এক পশলাতেই জল জমে যায়। মাছ ও মাংসের দোকানের পাশ দিয়ে চলা যায় না। নাকে রুমাল চাপা দিয়ে জিনিস কিনতে হয়। বিশেষ করে এই বর্ষায় জলকাদা ভেঙে, দুর্গন্ধ সয়ে সাতসকালে বাজার করতে যাওয়াটা যেন দুর্ভোগ।
এই অবস্থা মেদিনীপুর শহরের রাজাবাজারের। ক্রেতা-বিক্রেতা প্রত্যেকে রোজ ভুগছেন। অথচ হেলদোল নেই পুর-কর্তৃপক্ষের। মেদিনীপুরের উপ-পুরপ্রধান জিতেন্দ্রনাথ দাসের বক্তব্য, “সমস্যার কথা তো আমাদের কেউ জানাননি।’’
বেশ কয়েকবছর আগে পুরসভা বাজারে চাতাল ও গুদামঘর বানিয়ে দিয়েছিল। ছিল দু’টি শৌচাগারও। কিন্তু রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে এখন সব বেহাল। শহরের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ রোজ আসেন রাজাবাজারে। আর তাঁদের প্রত্যেকেরই অভিজ্ঞতা, এখানে বাজার করা নরক-যন্ত্রণার সামিল। বিশেষ করে শৌচাগার না থাকায় বড্ড সমস্যা হয়। রবীন্দ্রনগরের বাসিন্দা চঞ্চল মল্লিকের আক্ষেপ, “ন্যূনতম একটা শৌচাগার আর বাজারের পরিচ্ছন্নতার দিকটা কেন দেখা হয় না, বলতে পারব না। নাক চাপা দিয়ে বাজার করাটা যেন অভ্যেসে পরিণত হয়ে যাচ্ছে।”
শৌচালয়ের মধ্যেই মাছ বিক্রেতাদের জিনিস রাজাবাজারে। জঞ্জাল সাফাই হয় না রাজাবাজারে।
শুধু ক্রেতা নন, ভোগান্তির শিকার বিক্রেতারও। বরং তাঁদের সমস্যা আরও বেশি, কারণ গোটা দিনটা তাঁরা এই বাজারে কাটান। সাতসকালে কেউ পাথরা, কেউ হাতিহলকা, কেউ নেপুরা, কেউ গোপগড় থেকে সব্জি বেচতে আসেন। অনেক মহিলা সব্জি বিক্রেতাও আছেন। শৌচাগার না থাকায় তাঁদের চরম সমস্যা হয়। এক মহিলা সব্জি বিক্রেতার কথায়, “লোকের বাড়ি যাওয়া ছাড়া উপায় নেই। দু’-একদিন সেটা করা যায়। তাছাড়া অনেকে বাড়ির শৌচাগার বাইরের লোককে ব্যবহার করতে দিতেও চায় না। পুরসভা সব জেনেও যদি ব্যবস্থা না করে, কী করব।’’
পুরসভার সরাসরি তত্ত্বাবধানে রাজাবাজার ছাড়া মেদিনীপুরের আরও একটি বাজার রয়েছে। সেটি হল কোতোয়ালি বাজার। কোতোয়ালি বাজার পুরসভায় দোরগোড়ায় বলে তা-ও মাঝেমধ্যে সাফসুতরো করা হয়। কিন্তু রাজাবারের ভাগ্যে সে শিকে ছেঁড়ে না। এর বাইরেও মেদিনীপুরে একাধিক বাজার রয়েছে। স্কুলবাজার, মিঁয়াবাজার, গেটবাজার, কুইকোটা বাজার। কোথাও রাস্তার ধারে বাজার বসে, নিত্য যানজট। কোথাও আবর্জনার স্তূপ সরানোর ব্যাপারে নজর নেই কারও। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, পুরসভা নিজের দু’টি বাজার থেকে আয় করেও যেখানে পরিষেবা দেয় না, সেখানে অন্য বাজারে কিছু করবে সে আশা করবেন কী করে? কংগ্রেস কাউন্সিলর শম্ভুনাথ চট্টোপাধ্যায় ও সিপিএম কাউন্সিলর অসিত মহাপাত্রের আবার বক্তব্য, “বাজার কমিটির উপর পুরসভার নিয়ন্ত্রণ না থাকায় এমন ঘটছে। বিক্রেতাদের থেকে টাকা নিলে তো পরিষেবা দিতেই হবে।’’
উপ-পুরপ্রধানের অবশ্য আশ্বাস, ‘‘শীঘ্রই বাজারের পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে উপযুক্ত পদক্ষেপ করা হবে।’’ মেদিনীপুরবাসীও চান পুরসভা দ্রুত পদক্ষেপ করুক। আদৌ তা হল কিনা সময়েই মিলবে তার উত্তর।
ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল।