বন্ধ খবরের চ্যানেল

তৃণমূল অফিসের টিভিতে পুরনো খেলা

ভরা ভোট মরসুম। মনোনয়ন শুরু হয়ে গিয়েছে। অথচ শাসক দলের কার্যালয়ের টিভিতে খবরের চ্যানেল নয়, চলছে খেলার চ্যানেল। তা-ও আবার লাইভ ম্যাচ নয়, হাইলাইটস্!

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১৬ মার্চ ২০১৬ ০২:০৭
Share:

কেরানিচটির তৃণমূল কার্যালয়ের টিভিতে চলছে পুরনো ক্রিকেট ম্যাচ। - নিজস্ব চিত্র

ভরা ভোট মরসুম। মনোনয়ন শুরু হয়ে গিয়েছে। অথচ শাসক দলের কার্যালয়ের টিভিতে খবরের চ্যানেল নয়, চলছে খেলার চ্যানেল। তা-ও আবার লাইভ ম্যাচ নয়, হাইলাইটস্!

Advertisement

নারদ নিউজের ভিডিও-র জেরে মঙ্গলবার এই ছবি দেখা গেল তৃণমূলের কেরানিচটির কার্যালয়ে। এ দিন সকালে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার আগে এই কার্যালয়ে এসেছিলেন শালবনির তৃণমূল প্রার্থী শ্রীকান্ত মাহাতো। তাঁকে দেখে এক কর্মী বলে ওঠেন, ‘পুরনো খেলা দেখে কী হবে! যে কোনও একটা খবরের চ্যানেল দিলে তো হয়!’’ সঙ্গে সঙ্গে ধমকে ওঠেন মেদিনীপুরের এক তৃণমূল, “সব চ্যানেলেই তো শুধু নারদ- নারদ। তার থেকে পুরনো খেলা দেখা ভাল। লোকজনকে তো ঘুষ-কাণ্ডের ব্যাখ্যা দিতে দিতেই তো সময় কেটে যাচ্ছে!”

এ দিন অস্বস্তির ছবি দেখা গিয়েছে রবীন্দ্রনগরে তৃণমূলের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা কার্যালয়েও। দুপুরে এখানে আসেন তৃণমূলের জেলা সভাপতি দীনেন রায়। দীনেনবাবুর সামনেই দলের এক কর্মীর জিজ্ঞাসা ছিল, ‘খবরের চ্যানেলগুলোয় যা দেখানো হচ্ছে সব ঠিক!’ দীনেনবাবু চুপ ছিলেন। তবে এক তৃণমূল নেতা বলে ওঠেন, “সব সাজানো! ভোটের সময় এমন কত ষড়যন্ত্র হয়!” ঘটনাচক্রে শাসক দলের জেলা কার্যালয়ের টেলিভিশনেও এ দিন খবরের চ্যানেল চলেনি। চলেছে খেলার চ্যানেল!

Advertisement

তৃণমূলের শীর্ষ নেতারা ঘুষ নিচ্ছেন, সোমবার এই দৃশ্য দেখার পর থেকে আলোড়িত গোটা রাজ্য। মঙ্গলবার সকালেও শাসক-বিরোধী দু’পক্ষের পার্টি অফিসে, রাস্তার মোড়ে মোড়ে, বাসে-ট্রেকারে-অটোতে শুধু ঘুষ-কাণ্ডের আলোচনা। কেউ বলছেন, এ সব প্রযুক্তির কারসাজি। কারও আবার ব্যাখ্যা, তৃণমূলের আসল চেহারাটা বাইরে এসে পড়েছে। বাম-কংগ্রেস বোঝাপড়া প্রায় চূড়ান্ত হওয়ায় এমনিতেই এখন উদ্বেগে রয়েছে শাসক দলের একাংশ। তার উপর তৃণমূলের ঘুষ-বিতর্ক যেন গোদের উপর বিষফোঁড়া। তৃণমূল নেতৃত্ব অবশ্য প্রকাশ্যে উদ্বেগের কথা মানছেন না। দলের জেলা সভাপতি দীনেন রায়ের বক্তব্য, “এই চক্রান্ত-ষড়যন্ত্রের জবাব মানুষ ইভিএমে দেবেন।”

বিরোধীরা অবশ্য নারদ-কাণ্ডের ফসল ঘরে তুলতে আসরে নেমে পড়েছে। এ দিন মেদিনীপুর মহকুমার চার বামপ্রার্থী গড়বেতার সরফরাজ খান, শালবনির শ্যাম পাণ্ডে, কেশপুরের রামেশ্বর দোলুই এবং মেদিনীপুরের সন্তোষ রাণা যে মিছিল করে এসে মনোনয়নপত্র জমা দেন, সেখানেও স্লোগান ওঠে, ‘চোরেদের সরকার, আর নেই দরকার’, কখনও আবার রব ওঠে, ‘ওয়ান টু থ্রি ফোর, তৃণমূলের সবাই চোর’। তৃণমূল যে বলছে সব চক্রান্ত, ষড়যন্ত্র? সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য দীপক সরকারের জবাব, “চোর কখনও কি বলে আমি চুরি করেছি!” দীপকবাবুর আরও সংযোজন, “এক সময় ওরা রাস্তায় নেমে প্ল্যাকার্ড নিয়ে মিছিল করেছে। প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল, ‘আমরা সবাই চোর’। এখন মানুষ বুঝতে পারছেন ওদের সবাই সত্যিই চোর!” মঙ্গলবার বিকেলে মেদিনীপুরে মিছিল করে বামপন্থী ছাত্র- যুব সংগঠন। এই মিছিল থেকেও স্লোগান ওঠে, ‘লুঠ হয়েছে হাজার কোটি, খেয়েছে কে? হাওয়াই চটি’। ঘাটালের কংগ্রেস নেতা জগন্নাথ গোস্বামীর আবার যুক্তি, “মুখ্যমন্ত্রী কিন্তু এই ভিডিও যে ভুয়ো তা প্রমাণের কোনও চেষ্টা করছেন না। রাজ্যের মানুষ কিন্তু বোকা নন।”

তবে ঘুষ-কাণ্ড নিয়ে পাল্টা পথে নেমেছে তৃণমূলও। তৃণমূল ছাত্র পরিষদ এ দিন দুপুরে মেদিনীপুরে মিছিল করে। ছিলেন তৃণমূলপ্রার্থী মৃগেন মাইতি, টিএমসিপির জেলা সভানেত্রী দেবলীনা নন্দী। মিছিলের স্লোগান ছিল, ‘হাত-হাতুড়ি-পদ্ম, দিদি করবে জব্দ’। টিএমসিপির মিছিলে অনেকেরই মুখ ছিল রুমালে ঢাকা। এসএফআইয়ের এক জেলা নেতার কটাক্ষ, “এরপর ওরা আর মুখ দেখাবে কী করে!” টিএমসিপি পরিচালিত বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক স্বদেশ সরকার অবশ্য বলছেন, “মিছিলে থাকা সকলের মুখ রুমাল দিয়ে ঢাকা ছিল না। কারও কারও হয়তো ছিল। আসলে যা গরম পড়েছে!” যুব তৃণমূলের জেলা সভাপতি রমাপ্রসাদ গিরির আবার দাবি, “এই স্টিং অপারেশন ভোটে কোনও প্রভাবই ফেলবে না। সারদা নিয়ে অপপ্রচারের পরে লোকসভায় ৪২-এর মধ্যে ৩৪টি আসন পেয়েছি। এ বারও ভোটের ফল আগের থেকে ভাল হবে।”

নেতারা প্রকাশ্যে যা-ই বলুন, গোপন ক্যামেরায় তোলা ভিডিও ফুটেজে শুভেন্দু অধিকারী,সৌগত রায়ের মতো সাংসদদের নাম জড়িয়ে যাওয়ায় হতাশ তৃণমূলের ছাত্র- যুবরা। ঘাটাল কলেজের এক ছাত্র নেতার আক্ষেপ, “আমার বাবা কট্টর সিপিএম সমর্থক। কলেজে ঢুকে শুভেন্দুদাকে দেখেই তৃণমূল করতে শুরু করি। দাদাকে ভীষণ শ্রদ্ধা করতাম। কিন্তু যা দেখলাম রাতেই দল ছেড়ে দেওয়ার প্রস্তুতি নিয়ে ফেলেছি।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement