প্রতীকী চিত্র
করোনা-যোগ পাওয়ার পরে পশ্চিম মেদিনীপুরের বিভিন্ন এলাকায় চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের সতর্ক করেছে জেলা স্বাস্থ্য দফতর। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরীশচন্দ্র বেরা বলছেন, ‘‘সব ব্লককেই সতর্ক থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এ সংক্রান্ত কিছু শুনলে জেলায় জানাতে বলা হয়েছে। তারপরে জেলা থেকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হবে।’’
এই রোগের ক্ষেত্রে প্রথমেই জরুরি হল বিশেষ আইসোলেশন ওয়ার্ড। পরীক্ষা-নিরীক্ষার সময় থেকেই রোগীকে আলাদা ভাবে পর্যবেক্ষণে রাখা আবশ্যিক। কিন্তু পশ্চিম মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রাম দুই জেলাতেই এই ব্যবস্থার অভাব রয়েছে। জেলার যে যুবককে বেলেঘাটা আইডি-তে পাঠানো হয়েছে, তিনি খড়্গপুর মহকুমার প্রান্তিক একটি ব্লকের বাসিন্দা। তাই করোনা নিয়ে সতর্ক রয়েছে খড়্গপুর মহকুমা হাসপাতাল ও ডেবরা সুপার স্পেশ্যালিটি কর্তৃপক্ষ। যদিও সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল হওয়া সত্ত্বেও ডেবরায় বিশেষ কোনও পরিকাঠামো নেই। ২০টি শয্যার আইসোলেশন ওয়ার্ড থাকলেও সিসিইউ চালু না হওয়ায় সংক্রমণে কী সুবিধা মিলবে সেই প্রশ্ন রয়েছে। ডেবরার ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক আরিফ হাসান বলেন, “করোনার কোনও আলাদা চিকিৎসা তো নেই। স্বাস্থ্য দফতর থেকেও আমাদের কাছে কোনও পরিকাঠামো গড়ার জন্য নির্দেশিকা আসেনি। যদি এমন কোনও রোগী আসেন তবে আইসোলেশন ওয়ার্ডে রেখেই যেটুকু চিকিৎসা সম্ভব দেওয়া হবে।”
খড়্গপুর মহকুমা হাসপাতালে আবার সংক্রমণের আশঙ্কা রয়েছে, এমন রোগী এলেই জেলা স্বাস্থ্য দফতরের নির্দেশ মেনে কিছু প্রশ্ন করা হচ্ছে। তেমন বুঝলে মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিককে জানানো হচ্ছে। কেউ চিন ফেরত হলে পরীক্ষার জন্য বেলেঘাটায় পাঠানো হচ্ছে। এই হাসপাতালে ৩৫ শয্যার আইসোলেশন ওয়ার্ড রয়েছে। কিন্তু এখানেও আইসিসিইউ চালু না হওয়ায় প্রবল শ্বাসকষ্ট হলে বিপদের আশঙ্কা রয়েছে। তাছাড়া আইসোলেশনের পরিকাঠামোয় পৃথক কক্ষ না থাকায় অন্য রোগীদের মধ্যে সংক্রমণ ছড়ানোর আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। সুপার কৃষ্ণেন্দু মুখোপাধ্যায় বলেন, “আইসোলেশন ওয়ার্ডে করোনা আক্রান্তকে রেখে প্রাথমিক চিকিৎসা করা যেতে পারে। তবে পৃথক ঘরের ব্যবস্থা আমাদের নেই।”
ঝাড়গ্রাম জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, জেলা সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য প্রকাশ মৃধা বলেন, ‘‘জেলায় এখনও করোনা আক্রান্তের খবর নেই। রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি। আইসোলেশন ওয়ার্ডগুলিকে তৈরি রাখা হচ্ছে।’’
তবে ঘাটাল সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে এই সংক্রান্ত কোনও পদক্ষেপ এখনও হয়নি। শুধু চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের সতর্ক করা হয়েছে। ঘাটাল মহকুমার কয়েক হাজার যুবক অন্যত্র কর্মরত। তাই করোনা সংক্রমণের খোঁজ পেলেই বেলেঘাটা আইডি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে। ঘাটাল সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালের সুপার কুণাল মুখোপাধ্যায় মানছেন, “আমরা তেমন কারও খোঁজ পেলে বেলেঘাটা আইডি-তে পাঠিয়ে দেব, এমনই নির্দেশ রয়েছে। তবে চিকিৎসক-সহ সংশ্লিষ্ট সব স্বাস্থ্যকর্মীদের সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।”
গড়বেতা গ্রামীণ হাসপাতাল, গোয়ালতোড়ের কেওয়াকোল গ্রামীণ হাসপাতাল, চন্দ্রকোনা রোডের দ্বারিগেড়িয়া গ্রামীণ হাসপাতালে অবশ্য আইসোলেশন ওয়ার্ড নেই। তবে বাইরে থেকে জ্বর, সর্দি, কাশি নিয়ে কেউ এলে, তাঁর খোঁজ নিয়ে দ্রুত চিকিৎসার কথা বলা হয়েছে আশা, এএনএম ও স্বাস্থ্যকর্মীদের। অনেক জায়গায় আবার নির্দেশও পৌঁছয়নি। নারায়ণগড় ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক আশিস মণ্ডল যেমন বলছেন, ‘‘জেলা থেকে কোনও নির্দেশ এখনও আসেনি। তাছাড়া আমাদের এখানে তেমন কোনও পরিষেবা দেওয়ার পরিকাঠামো নেই।’’