গোলমাল: বোমাবাজিতে খাউখাণ্ডা গ্রামে ভেঙে গিয়েছে বাড়ি । নিজস্ব চিত্র
তৃণমূলের গোষ্ঠীকোন্দলে রবিবারই উত্তপ্ত হয়েছিল সবংয়ের দশগ্রাম। সোমবার সকালেও দশগ্রামের খাউখাণ্ডা গ্রামে শাসকদলের দুই গোষ্ঠীর দ্বন্দ্বে চলল বোমাবাজি। গোলমাল চলাকালীন বোমাবাজির মধ্যে পড়ে কার্তিক মণ্ডল (৪৫) নামে এক ব্যক্তির মৃত্যুর অভিযোগও উঠেছে। তৃণমূল কর্মী কার্তিকবাবু জেলা কর্মাধ্যক্ষ অমূল্য মাইতির অনুগামী হিসেবে এলাকায় পরিচিত। সোমবারই তিনদিনের জেলা সফরে ঝাড়গ্রামে এসেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এরমধ্যেই গোষ্ঠী কোন্দলে দলীয় কর্মীর মৃত্যুর ঘটনায় অস্বস্তিতে তৃণমূলের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা নেতৃত্ব।
ঘটনার সূত্রপাত গত শনিবার। ওই দিন সবংয়ের অনাথবন্ধু অডিটোরিয়ামে বিজয়া সম্মিলনীর আয়োজন করেছিলেন যুব তৃণমূলের ব্লক সভাপতি আবু কালাম বক্স। উপস্থিত ছিলেন সাংসদ মানস ভুঁইয়াও। অনুষ্ঠানে অবশ্য ব্লক সভাপতি প্রভাত মাইতি ও স্থানীয় তৃণমূল নেতা অমূল্যবাবু ছিলেন না। খাউখাণ্ডা গ্রাম থেকে মানসবাবুর অনুগামী হিসেবে পরিচিত বেশ কয়েকজন দলীয় কর্মীও অনুষ্ঠানে যোগ দেন। রবিবার সকালে সভায় যাওয়া তৃণমূলের কিষান খেত মজদুর সংগঠনের অঞ্চল সভাপতি রঞ্জন ঘোড়ই-সহ দু’জনকে মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। ঘটনায় নাম জড়ায় অমূল্যবাবুর অনুগামী হিসেবে পরিচিত গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান সঞ্চিতা বাগের বিরুদ্ধে।
রবিবার গোলমাল মিটে গেলেও সোমবার ফের তেতে ওঠে খাউখাণ্ডা। অভিযোগ, এ দিন মানসবাবুর অনুগামী হিসেবে পরিচিত দলের কর্মীরা অমূল্যবাবুর অনুগামীদের ওপর চড়াও হয়। শুরু হয় বোমাবাজি। গোলমালের মধ্যে পড়ে বোমাবাজিতে ঘটনাস্থলেই কার্তিকবাবুর মৃত্যু হয় বলে অভিযোগ। ঘটনায় জখম হয়েছেন পড়শি অম্বরী মণ্ডল-সহ আরও দু’জন। তাঁদের প্রথমে সবং গ্রামীণ হাসপাতাল ও পরে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। মৃতের পরিবারের পক্ষ থেকে সবং থানায় ঘটনার অভিযোগ দায়ের হয়। এই ঘটনার পরে মানসবাবুর অনুগামী কয়েকজনের বাড়িতে ভাঙচুর চালানো হয় বলেও অভিযোগ।
মৃতের স্ত্রী বুল্টি মণ্ডলের অভিযোগ, “বাড়ির বাইরে গৌরাঙ্গ, নিতাই মণ্ডল-সহ ২৫-৩০ জন এসে বাড়ির কাছে বোমাবাজি করছিল। বাইরে ছোট মেয়ে ঘুরছে দেখে ওকে আমার স্বামী আনতে গিয়েছিল। সেই সময়ে ওকে লক্ষ্য করে বোমা মেরে খুন করা হয়। আমি ওঁদের
শাস্তি চাই।”
মৃতের ভাইয়ের বউ রীতাদেবীরও অভিযোগ, “জল নেব বলে বাড়ির বাইরে দাঁড়িয়েছিলাম। সেই সময় রঞ্জন ঘোড়ইয়ের বৌ মঞ্জরী-সহ কয়েকজন গৌর হাজরা নামে একজনকে মারধর করছিল। বোমাবাজিও চলছিল। দাদা বাড়ি থেকে বেরোতেই বোমা মেরে তাঁকে খুন করা হয়েছে।”
ঘটনার খবর পেয়ে দুপুরে ঘটনাস্থলে আসেন অমূল্যবাবু। তিনি বলেন, “বোমা মেরে আমাদের এক কর্মীকে খুন করা হয়েছে। এই ঘটনায় মানস ভুঁইয়ার সরাসরি যোগাযোগ নেই। তবে মানস ভুঁইয়ার অনুগামীরা এই ঘটনা ঘটিয়েছে। পুলিশকে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে বলেছি।” এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে মানসবাবুর সংক্ষিপ্ত জবাব, “এটি একটি গ্রাম্য বিবাদ।” একইসুরে এই ঘটনাকে গ্রাম্য বিবাদ আখ্যা দিয়ে তৃণমূলের জেলা সভাপতি অজিত মাইতির বক্তব্য, “আমি খোঁজ নেব। পুলিশ ঘটনার তদন্ত করবে।”