আহত তনুশ্রী দলপতি।
বেআইনিভাবে খাল কেটে ভ্যানামেই (চিংড়ির প্রজাতি) চাষের ভেড়িতে নোনাজল ঢোকানোর চেষ্টার ঘটনাকে কেন্দ্র করে শনিবার রাতে উত্তেজনা ছড়াল ভগবানপুরের মহম্মদপুরে। অভিযোগ, ক্ষিপ্ত গ্রামবাসীরা ভাঙচুর, লুটপাট চালায় ভেড়ি চাষি তথা তৃণমূল নেতা তাপস দলপতির বাড়িতে। বাড়ির এক মহিলাকে মারধর করা হয় হলেও অভিযোগ। পরিস্থিতি সামাল দিতে এলাকায় পৌঁছয় র্যাফ। গ্রামবাসীদের ছত্রভঙ্গ করতে কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে পুলিশ। প্রসঙ্গত এই মহম্মদপুরেই ভেড়ি কাণ্ডে খুন হন তৃণমূল নেতা নান্টু প্রধান।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে খবর, মহম্মদপুর-১ এবং ২ গ্রাম পঞ্চায়েতে প্রায় হাজার বিঘা ধান জমি রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে প্রায় ৮০ বিঘা ভেনামি ভেড়ি। চাষিদের অভিযোগ, গত বছর ভেড়িতে নোনো জল ঢোকানোর কারণে তা চাষের জমিতে ঢুকে ফসল নষ্ট করেছে। ফলন না হওয়ায় ধান চাষের খরচের টাকা তুলতে পারেননি বহু চাষি। ভেড়ির মালিকেরা ধানচাষিদের ক্ষতিপূরণ দেবে বলে ঘোষণা করেছিল। কিন্তু আজ পর্যন্ত ক্ষতিপূরণ দেয়নি তারা। গ্রামবাসীরা আরও জানান, ভ্যানামেই চাষের জন্য দেড়েদিঘির খাল কেটে নোনাজল মাঠে না ঢোকানোর সিদ্ধান্ত হয় গ্রাম সংসদে। অভিযোগ গায়ের জোরে শনিবার বিকেলে তাপস দলপতি সহ কয়েকজন ভ্যানামেই চাষি দেড়েদিঘি খাল কেটে নোনা জল ঢোকানোর চেষ্টা করে। তাতে বাধা দেয় মহম্মদপুর এলাকার গ্রামবাসীরা। অভিযোগ, তাঁদের হুমকি দেয় তাপস দলপতি সহ কয়েকজন। এরপরই সন্ধ্যায় মহম্মদপুর মধ্যমপাড়ার লোকজন ক্ষিপ্ত হয়ে তাপসের বাড়ি ঘেরাও করে। অভিযোগ, সেই সময় তাপসের বাড়ির লোকেরা গ্রামবাসীদের উপর বঁটি, কাটারি নিয়ে চড়াও হয়। পাল্টা গ্রামবাসীরা ক্ষিপ্ত হয়ে তাপসের বাড়িতে ভাঙচুর, লুটপাট চালায় ও মহিলাদের মারধর করে বলে অভিযোগ। বাড়ি ভাঙচুরের ঘটনায় তাপস দলপতির বৌমা (ভাইয়ের স্ত্রী ) তনুশ্রী দলপতি আহত হয়ে ভগবানপুর ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসাধীন। গোলমালের খবর পেয়ে ভগবানপুর থানায় বিশাল পুলিশ বাহিনী এবং র্যাফ নিয়ে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে।
রাতে ভগবানপুর থানায় গ্রামবাসী এবং স্থানীয় বিজেপি নেতাদের বিরুদ্ধে মহিলাদের শ্লীলতাহানি এবং লুটপাট, বাড়ি ভাঙচুরের অভিযোগ দায়ের করে তাপস দলপতির পরিবার। অভিযুক্তদের ধরতে পুলিশ দফায় দফায় তল্লাশি চালায়। পুলিশের তল্লাশিতে শঙ্খধ্বনি করে পাল্টা প্রতিরোধ গড়ে তোলে গ্রামবাসীরা। উত্তেজিত গ্রামবাসীদের ছত্রভঙ্গ করতে কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটায় পুলিশ। পরে নন্দন মাইতি নামে এক যুবককে পুলিশ গ্রেফতার করে। স্থানীয় চাষিদের দাবি, অবিলম্বে মাঠে নোনা জল ঢোকা বন্ধ করা হোক। ধান চাষের হাল ফিরুক।
ভগবানপুর-১ ব্লকের তৃণমূল সভাপতি মদনমোহন পাত্র বলেন, ‘‘এখানে খাল কেটে ভেড়িতে নোনাজল ঢোকানোর কোনও ব্যাপার নেই। বিজেপি পরিকল্পনা করে গায়ের জোরে গ্রামবাসীদের ঢাল করে তৃণমূলের উপর আক্রমণ করছে। এলাকায় সন্ত্রাসের পরিবেশ সৃষ্টি করছে। আমাদের কর্মীদের সংযত থাকতে বলা হয়েছে।’’ ভগবানপুর -১ ব্লকের বিজেপির মণ্ডল সভাপতি দেবব্রত কর বলেন, ‘‘পুলিশকে নিয়ে তৃণমূল নিরীহ গ্রামবাসীর উপর রাতের অন্ধকারে আক্রমণ চালিয়েছে। চাষিরা জমিতে নোনা জল ঢোকানোর প্রতিবাদ করায় পুলিশ তাদের উপর হামলা করছে। এখানে বিজেপির কোনও ব্যক্তি যুক্ত নয়। আসলে ভগবানপুর থানা তৃণমূলের পার্টি অফিসে পরিণত হয়েছে।’’
এগরার এসডিপিও শেখ আখতার আলি বলেন, ‘‘ভেড়ির সঙ্গে এই ঘটনার সম্পর্ক নেই। বিজেপি লোকেরা রাতে তৃণমূলের এক নেতার বাড়িতে ভাঙচুর, লুটপাট চালায় এবং মহিলার শ্লীলতাহানি করে বলে অভিযোগ ওঠে। পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশ গেলে গ্রামবাসীরা পুলিশকে বোমা মারার চেষ্টা করে। গ্রমবাসীদের ছত্রভঙ্গ করতে কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটানো হয়। ঘটনায় এক জন গ্রেফতার হয়েছে।’’