চরম বিপদসীমার উপরে বইছে কাঁসাই নদীর জল। নিজস্ব চিত্র
বৃষ্টি কমেছে। কিন্তু গত কয়েকদিনের বর্ষণে পুষ্ট হওয়া নদীর জলই এখন মাথাব্যথার কারণ তীরবর্তী এলাকার বাসিন্দাদের। কিছু এলাকায় নদী বাঁধ উপচে ইতিমধ্যেই জল জনবসতি এলাকায় ঢুকেছে। তো কিছু এলাকায় বাঁধ ভেঙে যাওয়ারও পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। জলমগ্ন এলাকায় দুর্গতদের উদ্ধারের জন্য জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর (এনডিআরএফ) দু’কোম্পানী এবং রাজ্য বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর (এসডিআরএফ) দু’টি দল জেলায় এসেছে।
কেলেঘাই, কাঁসাই, চণ্ডীয়া নদীর জলস্তর চরম বিপদসীমার উপর দিয়ে বইছে। বেশ কয়েকটি এলাকায় ইতিমধ্যেই জল ঢুকছে। পটাশপুর-১ ব্লক থেকে ২০ হাজার, পটাশপুর-২ ব্লকে ১২ হাজার, ভগাবনপুর-১, এগরা-১ ব্লকে পাঁচ হাজার এবং পাঁশকুড়া, ময়না এলাকায় ১০ হাজার বাসিন্দাকে অন্যত্র স্থানান্তর করা হয়েছে। জেলাশাসক পূর্ণেন্দু মাজি বলেন, ‘‘বুধবারের চেয়ে এদিন জেলার পরিস্থিতি অবনতি হয়েছে। কাঁসাই, কেলেঘাই ও চণ্ডীয়া নদীর জলস্তর বৃদ্ধি পেয়ে বিভিন্ন এলাকায় নদী বাঁধের উপর দিয়ে এলাকায় জল ঢুকছে। নদী বাঁধ রক্ষার জন্য সেচ দফতর যুদ্ধকালীন ভিত্তিতে কাজ করছে। উদ্ধার কাজের জন্য এনডিআরএফ ও এসডিআরএফ দল এসেছে। বিভিন্ন এলাকা থেকে লোকজনকে সরানো হয়েছে।’’
চণ্ডীয়া নদীর জল বিপদ সীমা পেরিয়ে পূর্ব মেদিনীপুরের ময়না ও পশ্চিম মেদিনীপুরের পিংলার মাঝে থাকা চণ্ডীয়া নদীর সেতুর উপর দিয়ে বইছে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে। সেতুর উপর প্রায় দু’ফুট উঁচু দিয়ে জল বইতে থাকায় যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়ে। ময়না-মেদিনীপুর রাজ্য সড়কে যানবাহন চলাচল করতে না পারায় দুই জেলার মধ্যে যোগাযোগ ছিন্ন হয়ে গিয়েছে।
বুধবার রাতেই বিপদ সীমার ওপর দিয়ে বইতে শুরু করে কংসাবতী নদী। বৃহস্পতিবার সকালে তা চরম বিপদসীমা ছাড়িয়ে যায়। সেচ দফতরের পাঁশকুড়া-২ শাখার এসডিও অভিনব মজুমদার বলেন, ‘‘গত কুড়ি বছরেও কংসাবতীর জলস্তর এরকম জায়গায় পৌছয়নি। বহু জায়গায় নদী বাঁধে ফাটল দেখা দিয়েছে।সর্বত্র বাঁধ মেরামতির কাজ চলছে।’’
পাঁশকুড়ার রাধাবল্লভচক এলাকার একাধিক জায়গায় নদী বাঁধে গর্ত তৈরি হয়। সেগুলি দিয়ে জল ঢুকতে শুরু করে এলাকায়। সেচ দফতর দ্রুত বাঁধ মেরামত করে। নদীর জলস্তর বেড়ে যাওয়ায় রাধাবল্লভ চক জুনিয়র হাইস্কুল চত্বর জলমগ্ন হয়ে পড়ে। পাঁশকুড়ার ডোমঘাট এলাকায় বাঁধ ছাপিয়ে নদীর জল ঢুকতে শুরু করে এলাকায়। বাঁধের ওপর বালির বস্তা ফেলে জল আটকায় সেচ দফতর। পাঁশকুড়ার উদয়পুর এলাকায় কংসাবতীর ফেরি বাঁধ ভেঙে গিয়ে জল ঢুকে যায় চৈতন্যপুর-২ এলাকার একাংশে। রানিহাটি এলাকায় ফেরি বাঁধ ছাপিয়ে জল ঢুকে জলমগ্ন হয়ে যায় অন্তত ৩০টি বাড়ি।
সোমবার প্রশাসনের তরফে পটাশপুরে বাগুইখাল ও কেলেঘাই নদী বাঁধে ধস মেরামতির কাজ করা হয়। এ দিন বাগুই খালের জলস্ফীতির কারণে বন্যা পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার ধারন করেছে। পটাশপুর থানা এলাকার ১৬ গ্রাম পঞ্চায়েত এখন জলের তলায়। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে নৈপুর, পটাশপুর, পশুরামপুর, বারচৌকা-সহ একাধিক গ্রাম। বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর তিনটি দল স্পিড বোটে উদ্ধার কাজে নামে।
জরুরি ভিত্তিতে পটাশপুরে প্রশাসনিক আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠক করেন সেচমন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্র। তিনি বলেন, ‘‘পটাশপুরে কেলেঘাই নদী বাঁধের দু’টি জায়গায় এবং পাঁশকুড়া ব্লকে কাঁসাই নদী বাঁধের তিনটি জায়গায় পরিস্থিতি বিপজ্জনক রয়েছে। ময়নায় চণ্ডীয়া নদী বাঁধের কয়েকটি জায়গায় ধস নেমেছে। তবে সেচ দফতরের কর্মীরা বাঁধ মেরামতির কাজ করছেন।’’