ভূত তাড়াতে ‘অনলাইন’ দাওয়াই

ফর্ম তুলতে লম্বা লাইন, জমা দিতেও তাই। চড়া রোদে একের পর এক কলেজে ঘুরে ছাত্রছাত্রী ও তাদের অভিভাবকদের দমবন্ধ দশা। তারপরেও উচ্চ মাধ্যমিকে ভাল নম্বর নিয়ে কলেজে ভর্তি হতে না পারার অভিজ্ঞতা অনেক পড়ুয়ারই রয়েছে।

Advertisement

বরুণ দে

মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ১৬ মে ২০১৬ ০২:০৫
Share:

ফর্ম তুলতে লম্বা লাইন, জমা দিতেও তাই। চড়া রোদে একের পর এক কলেজে ঘুরে ছাত্রছাত্রী ও তাদের অভিভাবকদের দমবন্ধ দশা। তারপরেও উচ্চ মাধ্যমিকে ভাল নম্বর নিয়ে কলেজে ভর্তি হতে না পারার অভিজ্ঞতা অনেক পড়ুয়ারই রয়েছে। অথচ, কোন এক ভুতুড়ে নিয়মে কম নম্বর পেয়েও অনেক পড়ুয়া কলেজে ভর্তি হয়ে যায়। অভিযোগ, টাকার লেনদেন আর শাসক দলের ছাত্র সংগঠনের সঙ্গে কলেজ কর্তৃপক্ষের যোগসাজশেই এই কাণ্ড চলে।

Advertisement

এই সব অস্বচ্ছতায় দাঁড়ি টানতেই অনলাইনে ভর্তি প্রক্রিয়া বাধ্যমূলক করেছে বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়। আজ, সোমবার উচ্চ মাধ্যমিকের ফলপ্রকাশ। তারপরই শুরু বে ভর্তি প্রক্রিয়া। বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন দুই মেদিনীপুরের মোট ৫৪টি কলেজ রয়েছে। এ বার এই প্রতিটি কলেজেই স্নাতক স্তরে ভর্তি প্রক্রিয়া চলবে অনলাইনে। ফর্ম তুলে জমা দেওয়ার কোনও বন্দোবস্তই থাকছে না। গত বছর থেকেই এই পদ্ধতি শুরু হয়েছে। তবে তাতেও নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছিল।
তাই এ বার আগাম আঁটোসাঁটো ব্যবস্থা করে আসরে নেমেছেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সূত্রে খবর, দিন কয়েক আগে কলেজ অধ্যক্ষকদের নিয়ে এক বৈঠক হয়। সেখানে ভর্তি প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে কলেজগুলোকে স্পষ্টই জানিয়ে দেওয়া হয়, স্বচ্ছতার সঙ্গেই ভর্তি প্রক্রিয়া চালাতে হবে। এ নিয়ে কোনও রকম অভিযোগ যেন না ওঠে। বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য রঞ্জন চক্রবর্তী বলেন, “স্বচ্ছতার সঙ্গেই ভর্তি প্রক্রিয়া চলবে। ইতিমধ্যে কলেজ অধ্যক্ষদের নিয়ে বৈঠকে ভর্তি প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এ জন্য যা যা পদক্ষেপ করণীয় কলেজগুলো তা করছে।” তাদের অধীন সব কলেজে যাতে একই সময়ে ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়, সে জন্য নির্দিষ্ট নির্ঘন্ট বেঁধে দিয়েছেন কলেজ কর্তৃপক্ষ। ওই সূচি অনুযায়ী, আগামী ২০ মে থেকে কলেজে ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু হবে।

Advertisement

এক বছর আগেও কলেজে ভর্তি ছিল রীতিমতো ঝক্কির ব্যাপার। দুর্নীতির অভিযোগও উঠত বিস্তর। সে সব ঠেকাতে অনলাইনে ভর্তির দাবি ওঠে। কলকাতার কলেজগুলিতে তা বেশ কয়েক বছর আগে চালু হয়ে গেলেও মেদিনীপুরের মতো মফস্সলে হয়নি। শেষমেশ ২০১৪ সালে আওতাধীন কলেজগুলোয় অনলাইনে ভর্তি প্রক্রিয়া চালু করার পরিকল্পনা করে বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়। প্রাথমিক প্রস্তুতি শুরু হয়। সবক’টি কলেজে ‘অনলাইন কমিটি’ গঠন করার পরামর্শ দেওয়া হয়। ছাত্রছাত্রীদের খুঁটিনাটি জানাতে ‘হেল্প- ডেস্ক’ চালু করার পরামর্শ দেওয়া হয়। দুই মেদিনীপুরের ১০টি কলেজকে ‘নোডাল সেন্টার’ করারও পরিকল্পনা হয়। তবে বিশ্ববিদ্যালয়েরই এক সূত্রে খবর, ২০১৪ সালের এপ্রিলের এই সিদ্ধান্ত বদলে যায় ওই বছর জুনে। কলেজগুলোকে জানিয়ে দেওয়া হয়, অনলাইনে ভর্তি প্রক্রিয়া বাধ্যতামূলক নয়। এ নিয়ে অসন্তোষও দেখা দেয়। পরিস্থিতি দেখে ২০১৫ সাল থেকে কলেজগুলোয় অনলাইন ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু করা হয়।

তারপরেও অবশ্য গত বছর কলেজে ছাত্র ভর্তিতে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। এ বার কি এই সব অভিযোগ এড়ানো যাবে? এক কলেজের অধ্যক্ষ বলছেন, “ভর্তির সময় ছাত্র সংসদ একটু তৎপর হয়ই। সংসদের অতি-তৎপরতা ঠেকাতে অনলাইন পদ্ধতিই উপযুক্ত দাওয়াই!”

মেধার ভিত্তিতে কলেজগুলোয় ছাত্রছাত্রী ভর্তি হওয়ার কথা। কিন্তু সব ক্ষেত্রে তা হয় না। একাংশ কলেজ মেধা তালিকার বাইরে গিয়ে ছাত্রছাত্রীদের ভর্তি করে বলে অভিযোগ। এ ক্ষেত্রে শাসক দলের ছাত্র সংগঠনের নেতাদের মাধ্যমে চাপ সৃষ্টি করা হয় বলে অভিযোগ। অনেক সময়ই টাকা লেনদেন অভিযোগও ওঠে। ফলে, মেধাবী ছাত্রছাত্রীরা বঞ্চিত হন। অনলাইনে ভর্তি প্রক্রিয়া চললে স্বচ্ছতা থাকবে। উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী এক ছাত্রের কথায়, “অনলাইনে ভর্তি চললে দুর্নীতি যে একেবারে হবে না তা নয়। তবে এতে দুর্নীতির সুযোগ কম। এটাই ভরসা।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement