দুশো বছরে ধুমধাম। পরের বছরে করোনা আবহে উৎসাহে প্রায় ভাটা পড়তে চলেছিল। শেষ মুহূর্তে পরিকল্পনা বদল। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের দ্বিশত জন্মবার্ষিকীর সমাপ্তি অনুষ্ঠান পালন করতে তৎপর হল জেলা প্রশাসন। বীরসিংহ গ্রামে এ বার সিংহশিশুর জোড়া জন্মদিন। ২৬ ও ২৯ সেপ্টেম্বর। মূল আয়োজনে থাকবে বীরসিংহ স্মৃতিরক্ষা কমিটি, বীরসিংহ লাইব্রেরি। সহযোগিতায় ঘাটাল পঞ্চায়েত সমিতি, বীরসিংহ গ্রাম পঞ্চায়েত।
সরকারি মতে বিদ্যাসাগরের জন্মদিন ২৬ সেপ্টেম্বর। বীরসিংহ স্মৃতিরক্ষা কমিটি এবং বীরসিংহ লাইব্রেরি অবশ্য ২৯ সেপ্টেম্বর (বাংলা ১২ আশ্বিন) বিদ্যাসাগরের পালন করে। জোড়া জন্মদিন পালন অন্য তাৎপর্য পাচ্ছে একটি জল্পনাকে কেন্দ্র করে। ২৯ তারিখ নাকি বীরসিংহে আসতে পারেন শুভেন্দু অধিকারী। তাঁর অনুগামীদের সূত্রে এমনই খবর মিলেছে। সরকারি অনুষ্ঠান নয়। পৃথক অনুষ্ঠানেই সিংহশিশুর গ্রামে যাবেন মেদিনীপুরের ভূমিপুত্র। যেমনটা তিনি করছেন ইদানীং। এমনকি, গত ২৯ জুলাইও বিদ্যাসাগরের মৃত্যুদিনে বীরসিংহে তাঁর প্রতিনিধি পাঠিয়েছিলেন শুভেন্দু। ঘাটালের তাঁর এক অনুগামী বলেন, ‘‘দাদা (শুভেন্দু) ২৯ সেপ্টেম্বর বীরসিংহে আসতে পারেন। এ ব্যাপারে প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। আমরা কয়েকজন প্রাথমিক আলোচনা করেছি।’’ তবে ওই অনুগামী মনে করিয়ে দিতে ভোলেননি, এ পরিকল্পনা বাতিল হতে পারে একেবারে শেষ মুহূর্তে।
গত বছর শিক্ষা দফতরের উদ্যোগে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের দ্বিশত জন্মবার্ষিকী উৎসবের সূচনা হয়েছিল। বীরসিংহে এসে তার উদ্বোধন করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ২৪ সেপ্টেম্বর উৎসব শুরু হয়েছিল। সাতদিনের অনুষ্ঠান শেষ হয়েছিল ২৯ সেপ্টেম্বর। একবছর ধরে দুশো বছর পূর্তি উৎসবকে ঘিরে নানা অনুষ্ঠান হয়েছে বীরসিংহে। তাছাড়া একাধিক কমিটি, সংস্থাও বছরভর অনুষ্ঠান করে। ঘটা করে সমাপ্তি অনুষ্ঠান হওয়ারও কথা ছিল। কিন্তু করোনার কারণে অনুষ্ঠান ঘিরে তৈরি হয়েছিল ধোঁয়াশা। দিন কয়েক আগে পর্যন্ত সরকারি তরফে তেমন কোনও সক্রিয়তা লক্ষ্য করা যায়নি। ফলে ঠিক ছিল, প্রতিবারের মতো এ বারও বীরসিংহ স্মৃতিরক্ষা কমিটি এবং বীরসিংহ লাইব্রেরি সমাপ্তি অনুষ্ঠান করবে। কিন্তু সম্প্রতি হঠাৎ সক্রিয় হয় প্রশাসন। সিদ্ধান্ত হয়, সমাপ্তি অনুষ্ঠানে সহযোগী ভূমিকা পালন করা হবে। পঞ্চায়েত সমিতি, গ্রাম পঞ্চায়েত ছাড়াও অংশ নেবে তথ্য সংস্কৃতি দফতরও। প্রশাসনের ব্যাখ্যা, রাজ্য জুড়ে ২৬ সেপ্টেম্বর বিদ্যাসাগরের জন্মদিন পালন করা হয়। আর বীরসিংহের মানুষের আবেগকে সম্মান জানিয়ে ২৯ তারিখও সরকারি ভাবে জন্মদিন পালন করা হবে।
বৃহস্পতিবার বীরসিংহ গ্রামে বিদ্যাসাগর স্মৃতি মন্দিরে এক প্রস্তুতি বৈঠক হয়। সেখানে উপস্থিত ছিলেন ঘাটালের মহকুমা শাসক অসীম পাল, ঘাটালের বিধায়ক শঙ্কর দোলই, ঘাটালের বিডিও অরিন্দম দাশগুপ্ত, পঞ্চায়েত সমিতির সহ সভাপতি দিলীপ মাঝি-সহ অন্যরা। ২৬ , ২৯ দু’দিন অনুষ্ঠান। মাঝের দু’দিন বিকেলের দিকে স্থানীয় ভাবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন মন্ত্রী সৌমিন মহাপাত্র, জেলাশাসক রশ্মি কমল,পুলিশ সুপার দীনেশ কুমার, সভাধিপতি উত্তরা সিংহ হাজরারা। ঘাটালের মহকুমা শাসক অসীম পাল বলেন, “ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের দ্বিশত তম জন্মবার্ষিকীর সমাপ্তি অনুষ্ঠান পালিত হবে। প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। ২৬ সেপ্টেম্বর সরকারি ভাবে অনুষ্টান হবে। ২৯ সেপ্টেম্বর ও অনুষ্ঠান হবে। মাঝের দু’দিন বিকেলের দিকে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হবে।”