সেই কারখানা। নিজস্ব চিত্র ।
বিদ্যাসাগর শিল্পতালুকে প্রস্তাবিত একটি প্লাস্টিক বোতলের পুনর্ব্যবহার প্রকল্পের হাত ধরে এল ব্রিটিশ লগ্নি। পরিবেশবান্ধব এই প্রকল্পে সরাসরির পাশাপাশি পরোক্ষ কর্মসংস্থানেও গুরুত্ব দিচ্ছে ‘ম্যাগপেট’ শিল্পসংস্থা। অবশ্য কর্মসংস্থানের প্রতিশ্রুতি পূরণ নিয়ে চলছে
রাজনৈতিক চাপানউতোর।
ম্যাগনাম শিল্পগোষ্ঠীর ম্যাগপেট পলিমার যে ‘রিসাইকেলড পলিইথিলিন টেরিপথ্যালেট’ প্রকল্প চালু করতে চলেছে তাতেই ব্রিটিশ সরকারের মাধ্যমে মিলেছে ২০৫ কোটির লগ্নি। প্রথমবার এই রাজ্যে প্লাস্টিক বোতল পুনর্ব্যবহারের এমন কারখানা গড়ার বিষয়টিকে বাড়তি গুরুত্ব দিয়ে সামনে রাখতে চাইছে এই সংস্থা। ম্যাগপেটের সিইও ইন্দ্রনীল গুহ বলেন, “সত্যি বলতে এই রাজ্যে শিল্পের সম্ভাবনা যথেষ্ট। আমাদের আরও একটি প্লাস্টিক বোতল তৈরির কারখানা চলছে হুগলির সিঙ্গুরে। এ বার রাজ্যে প্রথম আমরা প্লাস্টিক বোতলের পুনর্ব্যবহারের এত বড় প্রকল্প চালু করতে চলেছি। রাজ্যে পরিবেশবান্ধব প্রকল্পের লক্ষ্যেই এই উদ্যোগ। সেই বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে যে ভাবে আমাদের হাতে ব্রিটিশ ইন্টারন্যাশনাল ইনভেস্টমেন্ট এসেছে, তা বড় সাফল্য। এই ব্রিটিশ লগ্নি সার্বিক ভাবে রাজ্যের শিল্প ভাবমূর্তি আরও উজ্জ্বল করবে বলে মনে করি।”
রাজ্যে শিল্পায়ন নিয়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হল কর্মসংস্থান। প্রস্তাবিত অধিকাংশ কারখানার ক্ষেত্রে অতীতে দেখা গিয়েছে কর্মসংস্থানের প্রতিশ্রুতি পূরণ হয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে। এমনকি বিদ্যাসাগর শিল্পতালুক এলাকায় জমিদাতা পরিবারের কর্মসংস্থানের প্রতিশ্রুতি নিয়েও নানা বিতর্ক রয়েছে। প্রস্তাবিত প্রকল্পে সব মিলিয়ে ৩০০জনের সরাসরি কর্মসংস্থানের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে এগোচ্ছে এই সংস্থা। প্রথম পর্যায়ে ২০ হাজার মেট্রিক টন উৎপাদনের জন্য ৮০-১০০জনের কর্মসংস্থান হবে বলে সংস্থার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। কারিগরি যোগ্যতা থাকা কর্মপ্রার্থীদের নিযুক্ত করা হবে। এ ছাড়াও কিছু ঠিকাশ্রমিক নিয়োগ করা হবে।
পরোক্ষ কর্মসংস্থানের বিষয়টিকেই বেশি গুরুত্ব দিয়েছে ওই শিল্পসংস্থা। তাদের দাবি, এই সংস্থায় কাঁচামাল হিসাবে বোতল প্রয়োজন। বোতল কুড়ানোর কাজে পরোক্ষভাবে ১০ হাজার কর্মসংস্থান হতে চলেছে। ইন্দ্রনীল বলেন, ‘‘যাঁদের পরোক্ষ কর্মসংস্থান হবে তাঁদের জন্য সামাজিক নানা কাজ করব। আমরা বোতল সংগ্রহে বেশি টাকা দেব। আর বিগত দিনে আমাদের যে প্রকল্পগুলি এই রাজ্য বা ভিন্ রাজ্যে রয়েছে সেখানে আমরা যে কর্মসংস্থানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম তার থেকে কিছু বেশি সংখ্যক কর্মসংস্থান দিয়েছি। এ ক্ষেত্রেও সেটাই হবে বলে আশা।”
যদিও শিল্পসংস্থার কর্মসংস্থানের প্রতিশ্রুতি নিয়ে সংশয়ী আইটাকের জেলা সম্পাদক বিপ্লব ভট্ট বলেন, “এই বিদ্যাসাগর শিল্পতালুক আমাদের সময়ে গড়ে উঠেছিল। আমাদের সময়ে আমরা স্থানীয়দের কাজ, কর্মসংস্থানের প্রতিশ্রুতি শিল্পসংস্থাকে পূরণ করাতে বাধ্য করতাম। কিন্তু এখন শাসকদল তৃণমূল দালালি করছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই প্রতিশ্রুতি পূরণ হচ্ছে না।’’ তিনি যোগ করেন, ‘‘এর আগে দেখেছি এই শিল্পতালুকে একটি স্টিল সামগ্রী তৈরির সংস্থা ৫হাজার কর্মসংস্থানের প্রতিশ্রুতি দিয়ে তা পূরণ করতে পারেনি। সেই শিল্পসংস্থা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। তাই এ সব প্রতিশ্রুতি পূরণ নিয়ে আমি সংশয়ে রয়েছি।” আইএনটিটিইউসির জেলা সভাপতি গোপাল খাটুয়া বলেন, “আমাদের সরকার আসার পরে শিল্পায়নের ক্ষেত্রে সর্বাধিক গুরুত্ব কর্মসংস্থানেই দিয়েছে। বহু নতুন সংস্থা এই বিদ্যাসাগর শিল্পতালুকে এসেছে, আসছে। তাঁরা প্রতিশ্রুতি মতোই কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছে। স্থানীয়রা কাজ পেয়েছে। বিরোধীরা মাটি হারিয়ে এখন কুৎসা
অপপ্রচার চালাচ্ছে।” (চলবে)