—ফাইল চিত্র।
জমিতে জল না থাকায় আমন চাষ এখনও শুরু হয়নি। হাতে কাজ না পেয়ে অনেকে একশো দিনের কাজের আশায় পঞ্চায়েতে আবেদনে জানালেও কাজ দিতে পারেনি পঞ্চায়েত। এমনই ছবি পূর্ব মেদিনীপুরের বিভিন্ন পঞ্চায়েতে।
জব কার্ড থাকা সত্ত্বেও কাজ না পেয়ে বিপাকে পড়েছেন ওই শ্রমিকেরা। জেলার ২২৩টি গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রায় সবই রাজ্যের শাসকদল তৃণমূলের দখলে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মানুষের সমস্যা ও মতামত জানার জন্য ‘দিদিকে বলো’ কর্মসূচি চালু করেছেন। কর্মসূচি অনুযায়ী তৃণমূল বিধায়ক, ব্লক সভাপতি-সহ পুরসভা ও পঞ্চায়েতের প্রতিনিধিদের এলাকায় গিয়ে সাধারণ মানুষের সমস্যার কথা শুনতে হবে। এই অবস্থায় শাসক দলের নেতা ও জনপ্রতিনিধিদের কাছে গ্রামের মানুষ এই সমস্যা তুলে ধরতে পারেন। তাই আশঙ্কায় পঞ্চায়েতের জনপ্রতিনিধিরা। শুধু ১০০ দিনের কাজ নয়, পঞ্চায়েতের মাধ্যমে যে সরকারি প্রকল্পের সুবিধা পেতেন গ্রামের মানুষ সে সব কাজেরও গতি কমেছে বলে অভিযোগ।
কিন্তু কেন?
সম্প্রতি কাটমানি ইসুতে শাসক দলের বিভিন্ন নেতানেত্রীর বিরুদ্ধে যে ভাবে অভিযোগ উঠেছে। কিছু ক্ষেত্রে নেতা-নেত্রীদের যে ভাবে সেই টাকা ফেরত দিতে দেখা গিয়েছে, তাতে নিঃসন্দেহে অস্বস্তিতে শাসক দল তৃণমূল। আর এ সবের প্রেক্ষিতেই একশো দিনের কাজ, আবাস যোজনা প্রভৃতি প্রকল্পে কাজের গতি কমেছে বলে মত তৃণমূলেরই একাংশ নেতার। কারণ এই দু’টি ক্ষেত্রেই কাটমানির অভিযোগ উঠেছে।
বিরোধীদের অভিযোগ, একশো দিনের কাজ ও আবাস যোজনা প্রভৃতি প্রকল্পে উপভোক্তাদের কাছ থেকে কাটমানি নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে তৃণমূল নেতাদের বিরুদ্ধে। এই সব প্রকল্পে আর্থিক দুর্নীতি নিয়ে জেলায় জেলায় ক্ষোভ রয়েছে। কাটমানি নেওয়ার অভিযোগ তুলে বেশ কিছু পঞ্চায়েতে পোস্টারও পড়েছে। সেই ক্ষোভ এড়াতেই পঞ্চায়েত এই সব প্রকল্পের কাজ আপাতত বন্ধ রেখেছে। জেলা পরিষদের প্রাক্তন সভাধিপতি তথা সিপিএমের জেলা সম্পাদক নিরঞ্জন সিহির অভিযোগ, ‘‘একশো দিনের কাজ, গরিবদের বাড়ি তৈরির প্রকল্পে শ্রমিকদের কাজ দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। কিন্তু ওই সব প্রকল্পে আর্থিক দুর্নীতি ও কাটমানি নিয়ে বাসিন্দারা সরব হওয়াতেই পঞ্চায়েতগুলি ওই সব কাজে আগ্রহ দেখাচ্ছে না। তাই পঞ্চায়েতের কাজে গতি কমেছে।’’
জেলা সভাধিপতি দেবব্রত দাস বলেন, ‘‘একশো দিনের কাজের প্রকল্পে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের আর্থিক সহায়তা থাকে। রাজ্য টাকা দিলেও কেন্দ্রীয় সরকার সময়মত অর্থ দিচ্ছে না। ফলে কাজের অসুবিধা হচ্ছে। তা সত্ত্বেও এবছরও গড়ে ৩৪ দিনের কাজ হয়েছে। যিনি আর্থিক দুর্নীতির কথা বলছেন তাঁর আমলে জেলায় একশো দিনের কাজে কী ভাবে অনিয়ম হয়েছিল তা জেলার মানুষ জানেন।’’
শহিদ মাতঙ্গিনী ব্লক তৃণমূল আহ্বায়ক তথা বল্লুক-১ গ্রামপঞ্চায়েতের প্রধান শরৎ মেট্যা বলেন, ‘‘একশো দিনের কাজে গতি কিছু কম এটা ঠিক। কারণ এই প্রকল্পে আগে পুকুর ও নিকাশিখাল সংস্কারের মাটি কাটার কাজ করা যেত। এর ফলে শ্রমদিবস তৈরির সুযোগ হত। কিন্তু নতুন নিয়য়ে এই সব কাজ করা যায় না। তাই সামাজিক বনসৃজন, কলা, লেবু-পেয়ারা বাগান তৈরি, আচ্ছাদন তৈরি সহ বিভিন্ন প্রকল্পে জোর দেওয়া হয়েছে। প্রকল্প অনুমোদনের জন্য সময় লাগায় কাজে দেরি হচ্ছে।’’ তিনি জানান, চলতি বছরে আবাস যোজনায় বাড়ি তৈরির জন্য এখনও টাকা বরাদ্দ হয়নি। তাই নতুন বাড়ির কাজ শুরু হয়নি। এর সঙ্গে কাটমানি ইসুর কোনও সম্পর্ক নেই।
নন্দকুমার ব্লকের কুমরচক পঞ্চায়েতের প্রধান বাসুদেব মন্ত্রী বলে, ‘‘চাষের কাজ শুরু না হওয়ায় বাসিন্দারা একশো দিনের কাজ করতে চাইছেন। কিন্তু এখন নিকাশি খাল সংস্কার কিংবা পরিষ্কার করার মতো শ্রমিক নির্ভর কাজের সুযোগ কমেছে। তাই এই সময় সে ভাবে কাজ দেওয়া যাচ্ছেনা। ফলে আগের চেয়ে কাজের গতি কমেছে।’’
জেলাশাসক পার্থ ঘোষ বলেন, ‘‘একশো দিনের কাজের প্রকল্পে স্থায়ী সম্পদ সৃষ্টিতে জোর দেওয়া হয়েছে। তাই এখন কাজের গতি কিছুটা কম মনে হলেও পরে কাজের গতির বাড়বে।’’