লন্ডভন্ড সরঞ্জাম। নিজস্ব চিত্র
করোনা রোগীদের চিকিৎসায় পাঁশকুড়ার বড়মা হাসপাতাল গত কয়েক মাসে বেশ জনপ্রিয় হয়েছে। ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ছড়ানোর শুরুর দিকে পূর্ব, পশ্চিম মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম— তিন জেলারই আক্রান্তদের ভরসা ছিল বড়মা। সেই হাসপাতালেই রোগী ভর্তিকে কেন্দ্র করে রবিবার রাতে ভাঙচুর চালাল একদল ব্যক্তি। ঘটনায় কলকাতা- সহ মেচগ্রামের চার ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
বড়মা হাসপাতাল সূত্রের খবর, রবিবার রাত সাড়ে ১২টা নাগাদ পাঁশকুড়ার দিক থেকে দুটি গাড়ি এসে বড়মা হাসপাতালের মূল ফটক খুলে ভেতরে ঢুকে যায়। যেহেতু দিনরাত ধরে কোভিড আক্রান্তদের বড়মায় নিয়ে আসা হয়, সে জন্য হাসপাতালের মূল দরজায় তালা দেওয়া থাকে না। ওই দুটি গাড়িতে তিনজন মহিলা-সহ ১২ জন ছিল বলে জানা গিয়েছে। গাড়ির আরোহীরা দাবি করে, তাদের মধ্যে এক মহিলার তীব্র শ্বাসকষ্ট হচ্ছে। তাকে দ্রুত অক্সিজেন দিতে হবে।
ওই সময় হাসপাতালের নিরাপত্তারক্ষীরা জানান, বড়মা একটি করোনা হাসপাতাল। এখানে কোভিড আক্রান্ত ছাড়া কাউকে ভর্তি নেওয়ার নিয়ম নেই। এই কথা শুনে ওই ব্যক্তিরা নিরাপত্তারক্ষীদের ওপর চড়াও হয় বলে অভিযোগ। হাসপাতালের হুইল চেয়ারে রোগীকে বসিয়ে তারা নিজেরাই হাসপাতালের দোতালায় আইসিইউ-তে চলে যায়। অভিযোগ, আইসিইউ-তে ঢোকার সময় নিরাপত্তারক্ষীরা বাধা দিলে সেখানে অভিযুক্তেরা তাঁদের এূং ভিতরে ঢুকে কর্তব্যরত চিকিৎসকদের মারধর করে। শুরু হয় আইসিইউ-র জিনিসপত্র ভাঙচুর।
বড়মা হাসপাতাল সূত্রে খবর, হামলাকারীরা প্রত্যেকেই অত্যন্ত মদ্যপ অবস্থায় ছিল। ভাঙচুর শুরু হওয়ায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ পাঁশকুড়া থানায় খবর দেন। বড়মা কোভিড হাসপাতালের টেকনিক্যাল অফিসার দেবোপম হাজরা বলেন, ‘‘নিরাপত্তারক্ষী ও চিকিৎসক সকলে ওঁদের ফিরে যেতে বলেন। তবুও ওরা কথা শোনেনি। আইসিইউ-তে ভাঙচুর করেছে। নিরাপত্তারক্ষী ও চিকিৎসকের গায়ে হাত তোলা হয়েছে। প্রত্যেকেই মদ্যপ অবস্থায় ছিল।’’
রাতেই পুলিশের পাশাপাশি হামলার খবর পেয়ে হাসপাতালে আসেন পাঁশকুড়ার বিডিও ধেনধুপ ভুটিয়া। যে মহিলার শ্বাসকষ্ট হয়েছিল বলে দাবি, তাঁকে পাঁশকুড়া সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য একটি গাড়িতে যেতে দেয় পুলিশ। তবে চারজন হামলাকারীকে আটক করে নিয়ে আসা হয় পাঁশকুড়া থানায়। পরে তাঁদের গ্রেফতার করা হয়। ধৃতেরা হল কলকাতার যাদবপুরের মৃত্যুঞ্জয় কর্মকার। লেক গার্ডেনসের রঞ্জিত কুমার পাসোয়ান। নিমতার সৌম্য চক্রবর্তী এবং পাঁশকুড়ার দক্ষিণ মেচগ্রামের বাসিন্দা প্রত্যয় বর্ধণ।
পুলিশ সূত্রে খবর, মেচগ্রামে এক আত্মীয়ের আমন্ত্রণে কলকাতা থেকে দুটি গাড়িতে করে ওই ব্যক্তিরা রবিবার পাঁশকুড়ায় একটি গেস্ট হাউসে এসে উঠেছিলেন। অনুষ্ঠান চলাকালীন একজন মহিলা অসুস্থ হয় বলে দাবি।ধৃতদের সোমবার তমলুক আদালতে তোলা হয়। বিচারক তাদের তিন দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন।
ঘটনায় পূর্ব মেদিনীপুর জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক নিতাইচন্দ্র মণ্ডল বলেন, ‘‘অনভিপ্রেত ঘটনা। পুলিশকে হাসপাতালের নিরাপত্তা বাড়ানোর জন্য বলেছি।’’