পুকুর থেকে তুলে আনা হচ্ছে দেহ। নিজস্ব চিত্র
সিভিক ভলান্টিয়ারের বাড়ির পাশের পুকুর থেকে উদ্ধার হল শিশু কন্যার দেহ। আর তা ঘিরে কাঁথি সফিয়াবাদে দিনভর টানাপড়েন চলল গ্রামবাসী এবং পুলিশের মধ্যে।
কাঁথি থানার সিভিক ভলান্টিয়ার শুভজিৎ পইড়্যার ১২ দিনের শিশুকন্যা গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে নিখোঁজ। তার খোঁজে পুলিশ কুকুর এনে তল্লাশি থেকে শুরু করে গ্রেফতার করা হয়েছে ওই ভলান্টিয়ারকে। মঙ্গলবার সকালে শুভজিতের বাড়ির পাশের পুকুরে কচুরিপানায় আটকে থাকা একটি শিশুর দেহ দেখা যায়। খবর পেয়ে তা উদ্ধারে যায় কাঁথি থানার পুলিশ। কিন্তু সেখানে গিয়ে গ্রামবাসীরদের বিক্ষোভের মুখে পড়ে তারা।
পুলিশ সূত্রের খবর, পুকুরে নেমে ওই শিশুটির দেহ উদ্ধার করা হয়। দেহটি একটি শিশু কন্যার। মৃতদেহটি কাঁথি থানায় আনতে উদ্যোগী হতেই ক্ষোভে ফেটে পড়েন গ্রামবাসীরা। কয়েকশো গ্রামবাসী পুলিশকে ঘিরে ধরেন। কাঁথি থানার আইসি সুনয়ন বসুর গাড়ি আটকানোর জন্য গ্রামের মহিলারা গাছের গুড়ি, শুকনো ডাল এবং বাঁশ দিয়ে রাস্তা অবরোধ করেন। গ্রামবাসীদের দাবি জানান, ওই সিভিক ভলান্টিয়ার শুভজিৎ এবং তার পরিবারের সদস্যদের গ্রামে মধ্যে আনতে হবে। তারাই ওই শিশু কন্যাকে হত্যা করেছে বলে অভিযোগ।
গ্রামের এক বাসিন্দা প্রণব পইড়্যা বলেন, “সেই সিভিক ভলেন্টিয়ারের পরিবার পুলিশকে বারবার ভুল তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত করছে। আমরা ওদের সামনাসামনি বসিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করতে চাই।’’ উল্লেখ্য, ইতিমধ্যেই পুলিশ শুভজিৎ, তার স্ত্রী সীমা, বাবা সুপ্রভাত, মা মৃণালকলি এবং শাশুড়ি জ্যোৎস্নাকে গ্রেফতার করেছে। জ্যোৎস্না জামিনে ছাড়া পেলেও বাকিরা পুলিশি হেফাজতে রয়েছে।
এ দিন বিক্ষোভ চলাচালীন পুলিশের উদ্দেশ্যে উড়ে আসে গ্রামবাসীদের একাধিক প্রশ্ন। অভিযুক্তদের তাঁদের হাতে তুলে দেওয়ার পাশাপাশি গ্রামবাসীরা প্রশ্ন করেন, আগেও ওই পুকুরে তল্লাশি চালানো হয়েছিল। তখনও কোনও দেহ মিলল না কেন? এছাড়া, পুলিশ কুকুর এনে তল্লাশির সময় কুকুর উত্তর দেউলপোতা গ্রামের চারফুকার সেতু পর্যন্ত গন্ধ শুঁকে গেল কেন? আইসি বিক্ষোভকারীদের বোঝানোর চেষ্টা করেন ওই সিভিক ভলান্টিয়ার জেরায় বারবার পুলিশকে বিভ্রান্ত করছে। তবে ওই যুক্তিতে অখুশি গ্রামবাসীরা পুলিশকে ঘিরেই রাখেন। খবর পেয়ে বিশাল পুলিশ বাহিনী নিয়ে ঘটনাস্থলে আসেন কাঁথি মহকুমা পুলিশ আধিকারিক পার্থ ঘোষ, কাঁথি দেশপ্রাণের বিডিও মনোজ মল্লিক, কাঁথি দেশপ্রাণ পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি তরুণ জানা। তারপর পুলিশ মৃতদেহ নিয়ে কাঁথি থানায় আসে।
যদিও দেহটি শুভজিতের নিখোঁজ হওয়া শিশু কি না, সে বিষয়ে এখনই নিশ্চিত নয় পুলিশ। মহকুমা পুলিশ আধিকারিক পার্থ ঘোষ বলেন, “গ্রামবাসীরা দাবি করেছিলেন, এই দেহ শুভজিতের সন্তান কি না, তা খতিয়ে দেখা হোক। তাই কাঁথি থানার পুলিশ শিশুটির ডিএনএ টেস্ট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আপাতত দেহ কাঁথি মহকুমা হাসপাতালে ময়নাতদন্তে পাঠানো হচ্ছে। শিশুটি ওই সিভিক ভলেন্টিয়ারের প্রমাণিত হলে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে খুনের মামলা দায়ের করবে পুলিশ।’’