অস্বাস্থ্যকর: স্বাস্থ্য দফতরের অফিসের সামনেই জমছে আবর্জনা। দূষণ ছড়ালেও নজর নেই কারও। নিজস্ব চিত্র
জেলা জুড়ে থাবা বসিয়েছে ডেঙ্গি। পরিস্থিতি মোকাবিলায় সাফাই অভিযানে জোর দিচ্ছে স্বাস্থ্য দফতর। কিন্তু সেই স্বাস্থ্য দফতরের অফিস মেদিনীপুরের যে এলাকায় রয়েছে, সেখানকার পরিবেশই অস্বাস্থ্যকর। পাশেই বড়সড় ভ্যাটে আবর্জনার স্তূপ। গরু, কুকুর শুয়োরের উপদ্রবে জঞ্জাল নেমে এসেছে রাস্তায়। গোটা চত্বরে জমে রয়েছে নোংরা জলও। দুর্গন্ধে ওই পথে চলাফেরাই দায়।
পশ্চিম মেদিনীপুরে এ বার ভালই কামড় বসিয়েছে ডেঙ্গি। খড়্গপুরে তো মশাবাহী এই রোগের বাড়বাড়ন্ত। শহর ও গ্রামীণ এলাকা মিলিয়ে ইতিমধ্যে তিনজনের মৃত্যুও হয়েছে, আক্রান্ত শতাধিক। এই শহরে পুরসভার সঙ্গে হাত মিলিয়ে লাগাতার সাফাই অভিযান চালাচ্ছে জেলা স্বাস্থ্য দফতর। স্বাস্থ্য কর্তারা শহর ঘুরে দেখছেন, কোথায় জঞ্জাল জমে রয়েছে, কোথায় জমা জলে কিলবিল করছে মশার লার্ভা।
কিন্তু স্বাস্থ্য দফতরের দোরগোড়াতেই তো অস্বাস্থ্যের ছবি! জেলার সদর শহর মেদিনীপুরের শরৎপল্লিতে রয়েছে জেলা স্বাস্থ্য দফতরের কার্যালয়। এখানেই বসেন জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক-সহ অন্য স্বাস্থ্য কর্তারা। এই চত্বরে রয়েছে ‘ডিস্ট্রিক্ট ফ্যামিলি ওয়েলফেয়ার ব্যুরো’-র অফিস, জেলার মেডিসিন স্টোররুম, ট্রান্সপোর্ট অফিস। এই দফতরের ঠিক পাশেই রয়েছে বিশাল ভ্যাট। জেলার এক স্বাস্থ্য আধিকারিক নিজেই মানছেন, ‘‘ভ্যাটটি নিয়মিত পরিস্কার হয় না। আবর্জনার মধ্যে জল জমে ফলে দূষণ ছড়ায়। মশা, মাছির উপদ্রবে এলাকাবাসীও সমস্যায় পড়েন।’’ কেন এই আবর্জনা সাফাই করা হচ্ছে না? জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরীশচন্দ্র বেরার জবাব, ‘‘ওই ভ্যাট নিয়মিত পরিষ্কার করার জন্য পুরসভা ও জেলা প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি।’’ এলাকার কাউন্সিলর তথা মেদিনীপুরের উপ-পুরপ্রধান জিতেন্দ্রনাথ দাসও সমস্যার কথা মানছেন। তিনি জানান, ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের মধ্যে বাসিন্দারা কোথাও ভ্যাট তৈরি করতে দেননি। তাই ওয়ার্ডের সব আবর্জনা এক জায়গায় জমা করতে হচ্ছে। আর রাস্তার কাজ চলায় জল জমার সমস্যা রয়েছে বলেও মেনে নেন উপ-পুরপ্রধান। জিতেন্দ্রনাথবাবু বলেন, ‘‘সেন্ট্রাল ভ্যাট হওয়ায় ওখানে অনেক আবর্জনা জমা হয়। তবে একদিন ছাড়াই ট্রাক্টরে করে আবর্জনা সরিয়ে ফেলা হচ্ছে।’’
উপ-পুরপ্রধান নিয়মিত জঞ্জাল সাফাইয়ের দাবি করলেও এলাকার বাসিন্দারা কিন্তু উল্টো কথা বলছেন। ওই ভ্যাটের দক্ষিণ দিকে বাড়ি লীনা ঘোষের। তিনি বলেন, ‘‘নিয়মিত আবর্জনা পরিষ্কার হয় না। এত মশা-মাছির উপদ্রব যে দরজা-জানলা বন্ধ রাখি। ডেঙ্গি নিয়েও ভয়ে আছি।’’ ভ্যাটের পাশেই নতুন বাড়ি বানাচ্ছেন শিখা মাহাতো। তিনিও বলেন, ‘‘অনেকেই মরা কুকুর, বিড়াল ফেলে যায়। দুর্গন্ধে থাকা যায় না।’’ স্বাস্থ্য দফতরের কর্মীরাও এই জঞ্জাল-যন্ত্রণায় ভুগছেন। দফতরে কর্মরত রঞ্জন দাস, শ্যামল চক্রবর্তীরা বলেন, ‘‘জমা জলে মশা জন্মায়। ভয়ে অফিসের সব জানলা-দরজা বন্ধ রাখতে হয়। আর শুয়োর যাতে না ঢোকে সে জন্য তো অফিসের গেট অনেক সময় বন্ধ রাখতে হয়।’’
পুরসভা অবশ্য শহর জুড়ে জঞ্জাল সাফাই হচ্ছে বলেই দাবি করেছে। সেই অভিযানে স্বাস্থ্য দফতরের স্বাস্থ্য কবে ফেরে সেটাই দেখার!