তীর্থঙ্কর ভুঁইয়া। নিজস্ব চিত্র
মহিষাদল রাজ ময়দান বা হলদিয়ার আনারপুরে হাজার হাজার দর্শকের সামনে মাঠের মধ্যে দিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন তিনি। দর্শকেরা তাঁর সঙ্গে নিজস্বী তুলতে পাগল। কোথাও কোথাও তো মহিলা দর্শকদের হুড়োহুড়িতে আধ ঘণ্টা খানেক খেলাই বন্ধ করে দিতে হয়।
তিনি কোনও তারকা ক্রিকেটার নন, তিনি টেনিস বল ক্রিকেটের এক আম্পায়ার। নাম তীর্থঙ্কর ভুঁইয়া। বাড়ি পশ্চিম মেদিনীপুরের দাঁতনে।
সম্প্রতি হলদিয়ার একাধিক ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় আম্পায়ারের ভূমিকায় মাঠে নেমেছেন তীর্থঙ্কর। আম্পায়ার হিসাবে তাঁকে পেয়ে খুশি ক্রিকেট সংগঠকরাও। মহিষাদলের একটি ক্রিকেট প্রতিযোগিতার সংগঠক অনুপম ভৌমিক বলেন, ‘‘উনি মাঠে বাউন্ডারি এবং ওভার বাউন্ডারি হলে বিশেষ ধরনের নাচ করতে করতে চার ও ছয়ের সঙ্কেত দেন। সেটা দর্শকেরা উপভোগ করেন।’’ মহিষাদলের রাজ ময়দানে সম্প্রতি একটি ম্যাচে আম্পায়ার ছিলেন তীর্থঙ্কর। উদ্যোক্তাদের তরফে শেখ মানিক বলেন, ‘‘ওই আম্পায়ারের জন্য মাঠে দর্শকের সংখ্যাও অনেক বাড়ে। আসলে উনি নিখাদ আনন্দ দেন। উনি যেন নিডজিল্যান্ডের আম্পায়ার বিলি বাউডেনের দেশি সংস্করণ।’’ শেখ মানিক আরও জানালেন, একবার ব্যাটসম্যান ছয় মারার পরে নাচতে নাচতে বাউন্ডারির কাছে চলে গিয়েছিলেন তীর্থঙ্কর। এই বিনোদনের জন্য তাঁর চাহিদা এতটাই যে, খেলার প্রায় দু’ মাস আগে ‘ডেট বুক’ করতে হয় তাঁর। ম্যাচ পিছু তিনি দেড় হাজার টাকা নেন। সেই সঙ্গে যাতায়াত ও থাকা-খাওয়ার খরচ কমিটির।’’
নিজের এমন আম্পায়ারিং নিয়ে কী বলছেন তীর্থঙ্কর?
‘‘নিজে অলরাউন্ডার ছিলাম। কিন্তু দিনমজুর বাবার সন্তান হয়ে আর বেশিদূর এগনো হয়নি।’’— গলা কিছুটা খাদে নামে। তবে মাঠ এখনও ছাড়েননি। নিজের সঙ্গে ওয়েস্ট ইন্ডিজের আম্পায়ার স্টিভ বাকনারের মিল খুঁজে পান তীর্থঙ্কর। তাঁর কথায়, ‘‘এই করেই আমার সংসার চলে। শুধু রাজ্যে নয়, ভিন্ রাজ্যেও খেলাতে যাই। সেখানেও আমার একই ভূমিকা থাকে। আমার আম্পায়ারিংয়ে বিনোদনের রসদ পেয়ে দর্শকেরা যখন আমার সঙ্গে নিজস্বী তোলার আবদার করেন, তখন সত্যি ভাল লাগে।’’