হলদিয়ায় সভামঞ্চে দমকলমন্ত্রী সুজিত বসু ও রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। নিজস্ব চিত্র।
রবিবার তৃণমূলের মিছিলের হাত ধরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাট আউটের ‘প্রত্যাবর্তন’ দেখা গেল হলদিয়ায়।
গত দেড়-দু’বছরে শিল্পশহর থেকে কার্যত উধাও হয়ে গিয়েছিল মুখ্যমন্ত্রীর ছবি। আগে তৃণমূলের সভা সমিতি বা সরকারি অনুষ্ঠান মানেই মুখ্যমন্ত্রীর নাম ও ছবি দিয়ে সাজানো হত মঞ্চ। ধীরে ধীরে সেই ছবি ফিকে হতে শুরু করে সবার অলক্ষ্যে। গত ছ’মাসে সেই জায়গায় হলদিয়ার রাস্তাঘাট ভরে ওঠে ‘দাদার অনুগামীদের’ টাঙানো শুভেন্দু অধিকারীর কাট আউটে। মুখ্যমন্ত্রীর ছবি সরিয়ে 'দাদা'র পোস্টারে কার্যত শহরের মুখ ঢেকেছিল শিল্পশিহর।
রবিবার হলদিয়ার যুব তৃণমূলের মিছিল ছিল কার্যত জনপ্লাবন। মিছিলে উপস্থিত ছিলেন দমকল মন্ত্রী সুজিত বসু এবং বনমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। ছিলেন হলদিয়া শহর যুব তৃণমূল সভাপতি শেখ আসগর আলি, হলদিয়া শহর তৃণমূল সভাপতি সুধাংশু শেখর মণ্ডল, সহ-সভাপতি দেবপ্রসাদ মণ্ডল, পুর পারিষদ স্বপন নস্কর প্রমুখ। কদমতলা মোড় থেকে সিটি সেন্টার মোড় পর্যন্ত মিছিলে কয়েক হাজার মানুষ পা মেলান। মিছিল শেষে প্রকাশ্য সভায় রাজ্য সরকারের দুই মন্ত্রী একটিই বার্তা দিলেন। তা হল তৃণমূল কংগ্রেসে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই শেষ কথা। মমতার নেতৃত্বে ২০২১-এ তৃতীয়বারের জন্য সরকার গঠন করবে তৃণমূল। তবে মঞ্চে মন্ত্রী থেকে স্থানীয় নেতৃত্ব কেউই অধিকারী পরিবারের কোনও সদস্যের নাম উচ্চারণ করেননি।
মন্ত্রী সুজিত বসু তীব্র কটাক্ষ করেন বিজেপিকে। উল্লেখ্য, কিছুদিন আগেই হলদিয়ায় সভা করে গিয়েছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। দিলীপের নাম না করে মন্ত্রী সুজিত বসু বলেন, ‘‘তার নামে কিছু কথা বলতে আমার নিজের রুচিতে বাধে। কেন্দ্রে জনবিরোধী সরকার চলছে। কৃষকদের লাঠিপেটা করেছে। পেট্রল- ডিজেল সহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস অগ্নিমূল্য। নোটবন্দি, জিএসটিতে গরিব মানুষের ক্ষতি হয়েছে।’’ তিনি জানান, পশ্চিমবঙ্গে একটা ভাল সংস্কৃতি চলছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে। কেউ বা কারা ষড়যন্ত্র করে নষ্ট করতে চাইছে। রাজ্য সরকার মানুষের জন্য কন্যাশ্রী, খাদ্যসাথী, স্বাস্থ্যসাথীর মতো উন্নয়নমূলক প্রকল্প এনেছে। বিজেপি বলছে তারা নাকি সোনার বাংলা গড়বে। মমতার নেতৃত্বেই হবে সোনার বাংলা। তৃতীয়বারের জন্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বেই সরকারক গড়া হবে। সিঙ্গুর নন্দীগ্রামের আন্দোলনের নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিকল্প হয় না।’’
রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘পৃথিবীতে শিল্পশহর হলদিয়ায নাম উজ্জ্বল হয়ে আছে। কিছু লোক শাসন করার জন্য ক্ষমতা চায়। কিন্তু তৃণমূল ক্ষমতা পেয়ে সেবক হিসেবে সবার পাশে থাকতে চায়। যে জনপ্লাবন আজ ঘটেছে তা দেখে বোঝা যায় আগামী দিনে শিল্পশহর হলদিয়াকে আরও ভালভাবে গড়ে তোলার জন্য সবাই পাশে থাকবেন।’’
তবে এ দিন মিছিলে হলদিয়ার পুরপ্রধানসহ বেশ কিছু কাউন্সিলার অনুপস্থিত ছিলেন। মঞ্চে দেখা যায়নি তৃণমূলের হলদিয়া বিধানসভার কো-অর্ডিনেটর আনন্দময় অধিকারীকেও। ফলে তাঁরা কোন দিকে, সেই প্রশ্ন উঠে গিয়েছে।
হলদিয়ার মিছিল নিয়ে বিজেপির তমলুক সাংগঠনিক জেলা সভাপতি নবারুণ নায়েক বলেন, ‘‘তৃণমূলের মন্ত্রীরা হলদিয়া শিল্পাঞ্চলের শ্রমিকদের সামনে কেন কৃষি আইন নিয়ে কথা বলছেন? কৃষকদের সামনে বলতে পারতেন। যে সরকার মানুষের ভোটাধিকার কেড়ে নেয় সেই সরকারের মুখে গণতন্ত্র কথাটা মানায় না। ২০২১-এ মে মাসে বিজেপি ক্ষমতায় এসে পশ্চিমবঙ্গে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করবে।’’