তুলে নিয়ে গিয়ে দুই সিপিএম কর্মীকে বেধড়ক মারধরের অভিযোগ উঠল তৃণমূলের বিরুদ্ধে। কেশপুরের মহিষদায় প্রহৃত দুই সিপিএম কর্মী ছাকু কিস্কু এবং বরুণ সাঁতরাকে হাসপাতালে ভর্তি হতে দেওয়া হয়নি, এমনকী পুলিশের কাছে মামলা রুজু করতে দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ।
মহিষদায় সিপিএমের শাখা অফিসের হাতবদল হয়েছে বিধানসভা নির্বাচনের ফলপ্রকাশের পরে। শুক্রবার রাতে সেই পার্টি অফিসে তুলে এনেই দু’জনকে বেধড়ক মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। বাঁশ দিয়ে চেপে একজনের পা ভেঙে দেওয়ারও চেষ্টা হয়। হাসপাতালে যেতে না পারায় শনিবার জখম ওই দুই সিপিএম কর্মীর চিকিৎসা গ্রামীণ চিকিৎসককে দিয়ে করানো হয়েছে বলে স্থানীয় সূত্রের খবর। সিপিএমের জেলা সম্পাদক তরুণ রায় বলেন, ‘‘মহিষদায় দু’জনকে মারধর করা হয়েছে। ওদের অপরাধ ওরা সিপিএমের হয়ে কাজ করেছিল। হাসপাতালে গেলে কিংবা পুলিশকে বললে গ্রামছাড়া করে দেওয়ার হুমকিও দেওয়া হয়েছে।’’ তৃণমূল অবশ্য অভিযোগ মানতে নারাজ। দলের জেলা সভাপতি অজিত মাইতি বলেন, ‘শনিবার গড়বেতায় গিয়েছিলাম। ওখানে দলের কর্মসূচি ছিল। কেশপুরে কী হয়েছে জানি না। খোঁজখবর নিচ্ছি। না জেনে কিছু বলতে পারব না।’’ আর তৃণমূলের ব্লক সভাপতি সঞ্জয় পানের দাবি, ‘‘মহিষদায় মারধরের কোনও ঘটনা ঘটেনি।’’
কেশপুর বিধানসভায় এ বার লক্ষাধিক ব্যবধানে জিতেছেন তৃণমূল প্রার্থী শিউলি সাহা। তবে মহিষদার একাধিক বুথে কম ভোট পেয়েছে তৃণমূল। তাই এই অত্যাচার বলে অভিযোগ। জখমরা অভিযোগ না করলেও ঘটনার খবর পেয়ে শুক্রবার রাতে মহিষদায় গিয়েছিল কেশপুর থানার পুলিশের একটি দল। জেলা পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘ওখানে একটা ঘটনা ঘটেছে। তবে কেউ কোনও অভিযোগ জানাননি। অভিযোগ এলে নিশ্চয়ই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’ স্থানীয় সূত্রে খবর, মারধরের ঘটনায় অভিযুক্তরা এক সময় সিপিএমই করত। পরে জার্সি বদল করে তৃণমূলে নাম লেখায়। ঘটনার কথা শুনে জেলা তৃণমূলের এক নেতার মন্তব্য, “সিপিএমের কিছু লোক তৃণমূলে এসে দলের বদনাম করছে। এতে দলেরই ক্ষতি হচ্ছে।’’
বিধানসভা নির্বাচনের ফলপ্রকাশের পরে এলাকায় শান্তি বজায় রাখার আর্জি জানিয়েছিলেন তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব। তারপরেও অবশ্য শাসক দলের একাংশ কর্মী গোলমালে জড়িয়ে পড়ছেন। বিরোধীদের অফিস দখল, অগ্নিসংযোগ, লুঠ, বিরোধী দলের কর্মীদের মারধরের মতো ঘটনা ঘটছেই। সিপিএমের দাবি, ঘরছাড়াদের সংখ্যা এখন প্রায় তিন হাজারে পৌঁছেছে। সেই সঙ্গে মারধর, হামলা চলছেই। সিপিএমের জেলা সম্পাদক তরুণবাবুর অভিযোগ, “শাসক দলের লোকজন তালিকা তৈরি করে ধরে ধরে মারধর করছে বলে শুনেছি।’’ যদিও তৃণমূলের জেলা সভাপতির দাবি, “তৃণমূল সব সময় শান্তির পক্ষে।”