তুলসীবনি সরোবর। বেলপাহাড়ি। নিজস্ব চিত্র।
পাহাড়-ডুংরি ঘেরা তুলসীবনি সরোবর। স্থানীয়রা বলেন ‘গহম বাঁধ’, অর্থাৎ গভীর জলাশয়। কেউ বলেন গজপাথর বাঁধ। বেলপাহাড়ির এই সরোবরটি জঙ্গলমহলের জেলা ঝাড়গ্রামের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র হয়ে উঠতে পারতো। তবে গাড়ি চলাচলের উপযোগী পথ না থাকায় প্রচারের আড়ালেই রয়েছে এই দর্শনীয় স্থানটি।
বেলপাহাড়ি ব্লক সদর থেকে তুলসীবনি সরোবরের দূরত্ব প্রায় ৭ কিলোমিটার। সরোবরের পাড়ে কয়েকটি খেজুর গাছ। সরোবরের ডানদিকে সজা ডুংরি (জনমানব শূন্য ছোট পাহাড়কে ডুংরি বলা হয়), সামনে শ্রীডুংরি, সেরেঞ ডুংরি আর খট্টাধরার অনুচ্চ পাহাড়। বাঁদিক ঘেঁষে রয়েছে খুদি মহুলি পাহাড়। পিছনে চাতন ডুংরি আর পলাশ বন। সরোবরে ফোটে সাদা শালুক, গোলাপি শালুক এবং সাদার সঙ্গে বেগুনি-গোপালি বিন্দুর শালুক। অপরূপ এলাকাটির খোঁজ পেয়ে এখন অবশ্য বাইকে করে পর্যটকদের কেউ কেউ সেখানে যান। তবে উপযুক্ত রাস্তার অভাবে পর্যটকদের গাড়ি সরোবর পর্যন্ত নিয়ে যাওয়াটা রীতিমতো সমস্যার।
স্থানীয়রা মনে করছেন, এলাকার সরু মোরাম পথটি চওড়া পাকা হলে দূরদূরান্তের পর্যটকরা অনায়াসেই সরোবরে পৌঁছতে পারবেন। তাঁরা জানালেন, পাহাড়গুলির চুঁয়ে পড়া জল থেকেই প্রাকৃতিক সরোবরটির বিস্তার। বেলপাহাড়ির প্রবীণ সুব্রত ভট্টাচার্য বলছেন, ‘‘ছেলেবেলা থেকে দেখে আসছি, গহম বাঁধের জল কখনও শুকোয় না। সব সময় টলটলে জল। বর্ষায় সরোবরের চেহারা টইটম্বুর হয়ে ওঠে।’’ বেলপাহাড়ি টুরিজম অ্যাসোসিয়েশনের মুখপাত্র বিধান দেবনাথ জানালেন, কয়েক বছর আগে ওই সরোবরে যাওয়ার উপযুক্ত রাস্তা তৈরি ও সেখানে পর্যটকদের আকর্ষণের জন্য নৌকাবিহার চালু করার জন্য প্রশাসনিক মহলে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। তবে কিছুই হয়নি।
ওই সরোবর দর্শনে কীভাবে যাওয়া যায়?
বেলপাহাড়ি ব্লক সদরের হদরা মোড় থেকে গাডরাসিনি পাহাড়ে যাওয়ার পিচ রাস্তায় কিছুটা গেলে বাঁদিকে মোরাম পথ ধরে ডোমগড় হয়ে কিছুটা পথ এগোলেই তুলসীবনি গ্রাম। এরপর তুলসীবনি প্রাথমিক বিদ্যালয় চত্বর থেকে একশো মিটার গেলেই সরোবর। স্থানীয়দের দাবি, তুলসীবনি থেকে গজপাথর, কুসুমডাঙা হয়ে বালিচুয়া পর্যন্ত তিন কিলোমিটার উপযুক্ত পাকা রাস্তা দরকার। তাহলে সহজেই পর্যটকদের গাড়ি এলাকায় ঢুকতে পারবে। তবে বিধান বলছেন, ‘‘ওদলচুয়া থেকে মহুলবনি হয়ে তুলসিবনি পর্যন্ত পাকা রাস্তা হলে পর্যটকরা বেলপাহাড়ি থেকে গাডরাসিনি পাহাড় দেখে আগুইবিল ও মহুলবনি হয়ে সরোবর এলাকায় সহজে যেতে পারবেন। আবার ওদলচুয়ার দিক থেকেও পর্যটকরা সহজে সরোবর দর্শনে আসতে পারবেন।" ঝাড়গ্রামের বাসিন্দা রোহন কুণ্ডু বলছেন, ‘‘সবাই বেলপাহাড়ির খাঁদারানি ঝিল দেখতে যান। কিন্তু তুলসীবনি সরোবরটিও অপরূপ। পর্যটন তালিকায় সরোবরটির স্থান পাওয়া উচিত। ওখানে বিধি সম্মত প্যাডেল বোটিংয়ের ব্যবস্থা করা হলে অনেক পর্যটক যাবেন। পর্যটকরা ওখানে গেলে স্থানীয়রাও পর্যটন-কেন্দ্রিক সহায়ক রুজিতে অর্থনৈতিক ভাবে উপকৃত হবেন।’’
মাস তিনেক হল বেলপাহাড়ির বিডিও-র দায়িত্বে এসেছেন সুমন ঘোষ। তিনি বলছেন, ‘‘প্রস্তাব খতিয়ে দেখে পদক্ষেপ করা হবে।’’