মেদিনীপুর কলেজের সামনে সার দিয়ে বসেছে মূর্তি। ইনসেটে, ওই রাস্তায় সরস্বতী পুজোর চেনা ছবি। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল
মূর্তি রাখি না পুজো! সরস্বতী পুজো নিয়ে সঙ্কট কলেজ মোড়ে।
পুজো হলে আড়াল হবে মূর্তি। আবার মূর্তির জন্য পুজোয় প্রভাব পড়লেও তৈরি হতে পারে বিতর্ক। তাই আপাতত মধ্যবর্তী পথের সন্ধান চলছে।
সামনে সরস্বতী পুজো। হাতে আর মাত্র কয়েকটা দিন। অথচ, কলেজ মোড়ের ছবিটা দেখে তা বোঝার উপায় নেই। এখনও বাঁশই পড়েনি। প্যান্ডেল তৈরি তো দূরের কথা। পুজো উদ্যোক্তারা বুঝতে পারছেন না তাঁদের কী করণীয়। এক পুজো উদ্যোক্তার কথায়, ‘‘কোথায় পুজো হবে সেটাই তো বুঝতে পারছি না! প্যান্ডেল তৈরি করে ফের যদি খুলতে হয়!’’
এমন সমস্যা এই প্রথম দেখা দিয়েছে কলেজ মোড়ে। কেন? এখানে রাস্তার দু’ধারে কুড়িটিরও বেশি সরস্বতী পুজো হয়। গত বছর অগষ্টে রাস্তার একধারে সৌন্দর্যায়ন প্রকল্পে কিছু কাজ করেছে পুরসভা। বসানো হয়েছে আবক্ষ মূর্তি। মূর্তি আড়াল করে পুজো অসম্ভব। এই পরিস্থিতিতে বিপাকে পড়েছেন পুজো উদ্যোক্তারা। এক সূত্রে খবর, আজ, বুধবার পুজো উদ্যোক্তাদের নিয়ে এক বৈঠক হওয়ার কথা। পুলিশের উদ্যোগে মেদিনীপুর কোতোয়ালি থানায় এই বৈঠক হতে পারে। বৈঠকে সমস্যার সমাধানসূত্র খোঁজা হতে পারে। প্রয়োজনীয় নির্দেশ দেওয়া হতে পারে। যদিও এ ব্যাপারে এখনই কিছু বলতে নারাজ পুলিশ। জেলা পুলিশের এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘এখন কিছু বলব না।’’
এক পুজোর উদ্যোক্তা শেখ সরফরাজ বলেন, ‘‘কী করব কিছুই বুঝতে পারছি না। হাতে তো আর মাত্র কয়েকটা দিন। কী ভাবে যে সব হবে। এখনও তো প্যান্ডেলই শুরু হল না!’’ আরেক পুজোর উদ্যোক্তা বুদ্ধ মণ্ডলের কথায়, ‘‘আগে কখনও এমন সমস্যা হয়নি। গত বছর আবক্ষ মূর্তিগুলো বসানো হল। তাই এ বার এমন সমস্যা দেখা দিয়েছে।’’ রাস্তার পাশেই রয়েছে কলেজ- কলেজিয়েট স্কুলের মাঠ। উদ্যোক্তাদের অনেকে মনে করেছিলেন, পুজোগুলো হয়তো মাঠে সরানো হবে। তবে সেই সম্ভাবনাও কম। কারণ, কাল, বৃহস্পতিবার জঙ্গলমহল কাপের পুরস্কার বিতরণ রয়েছে। সেই জন্য মাঠে প্যান্ডেল হয়েছে। পরে আবার এখানেই হস্তশিল্প মেলা শুরু হবে। জঙ্গলমহল কাপের পুরস্কার বিতরণের পরের দিন থেকেই মেলার প্যান্ডেল বাঁধা শুরু হবে এই মাঠে।
মেদিনীপুরের সরস্বতী পুজোর অন্যতম আকর্ষণ এই কলেজ মোড়ের পুজোই। এখানকার সরস্বতী পুজো একটু অন্য রকম। প্রায় প্রতিটি পুজোর সঙ্গে জড়িয়ে থাকে কোনও না- কোনও রাজনৈতিক দলের ছাত্র- যুব সংগঠন। কোথাও পুজোর নেপথ্যে থাকে টিএমসিপি, সিপি। কোথাও বা এসএফআই, এবিভিপি। পুজোয় উঠে আসে সাম্প্রতিক বিভিন্ন বিষয়। মডেলের পাশে লেখা থাকে ব্যাঙ্গাত্মক কিছু বাক্য। রাজনৈতিক চাপানউতোরের আবহে পুজো জমে ওঠে। থিমযুদ্ধে একে অপরকে টেক্কা দেওয়ার লড়াই!
শহরের গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলোর মধ্যে এই কলেজ মোড় অন্যতম। গত বছর অগষ্টে এখানে স্বাধীনতা সংগ্রামের ঐতিহাসিক আন্দোলনের আবক্ষ মূর্তি বসানো হয়েছে। শহরের সৌন্দর্যায়নে এই পদক্ষেপ করে পুরসভা। তিনটি ঐতিহাসিক আন্দোলনের আবক্ষ মূর্তি বসানো হয়। মোহনদাস কর্মচন্দ গাঁধীর নেতৃত্বে ডান্ডি অভিযান, মাতঙ্গিনী হাজরার নেতৃত্বে ভারত ছাড়ো আন্দোলন এবং রানি শিরোমণির নেতৃত্বে চূয়াড় বিদ্রোহ।
এরপরই ওই সমস্যা সামনে এসেছে। সূত্রের খবর, পুজো রাস্তার ধারেই হতে পারে। মূর্তিগুলো বাদ রেখে আশেপাশে অন্যত্র মণ্ডপ করতে বলা হতে পারে।