অনুমান রাসায়নিক বর্জ্য

চার ফুট উঁচু সাদা ফেনা অরণ্যশহরে

কালভার্টের তলায় নর্দমা থেকে গলগল করে বেরিয়ে আসছিল দলা পাকানো দুধসাদা ফেনার মতো পদার্থ। মুহূর্তে রাস্তার ধারে ফুট চারেক উঁচু আর ফুট বিশেক এলাকা জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে সাবানের ফেনার মতো থকথকে-চকচকে পদার্থটা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ০৩ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০১:১২
Share:

হঠাৎ ফেনা দেখে মজা লুটেছেন বাসিন্দারাও। নিজস্ব চিত্র

দোকান বন্ধ করে শুক্রবার রাতে বাড়ি ফিরছিলেন ঝাড়গ্রাম শহরের ওষুধ ব্যবসায়ী ইন্দ্রনীল ঘোষ। তথ্যকেন্দ্র মোড়ের কাছে আধো-অন্ধকার রাস্তায় কালভার্ট লাগোয়া বাড়ির সামনে প্রকাণ্ড কিছু একটা নড়াচড়া করছে দেখে চমকে ওঠেন ইন্দ্রনীলবাবু। সেই সময় উল্টোদিক থেকে আসছিলেন আর এক ব্যবসায়ী রাকেশ রিংসিয়া। থমকে দাঁড়ান তিনিও। বাইকের হেডলাইট ঘুরিয়ে রীতিমতো ঘামতে থাকেন তাঁরা।

Advertisement

কালভার্টের তলায় নর্দমা থেকে গলগল করে বেরিয়ে আসছিল দলা পাকানো দুধসাদা ফেনার মতো পদার্থ। মুহূর্তে রাস্তার ধারে ফুট চারেক উঁচু আর ফুট বিশেক এলাকা জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে সাবানের ফেনার মতো থকথকে-চকচকে পদার্থটা। হাওয়া দিতেই ঝাঁঝালো গন্ধের বুদবুদ উড়তে থাকে। আতঙ্কে আর সেখানে দাঁড়াননি ইন্দ্রনীলবাবুরা। মুহূর্তে অরণ্যশহরে ছড়িয়ে পড়ে রহস্য-ফেনার কথা।

শনিবার সকালে অবশ্য অরণ্যশহরের আরও কয়েকটি এলাকায় একাধিক কালর্ভাটের তলা থেকে বেরোতে থাকে ফেনার পাহাড়। ফেনার ঢাকা পড়ে যায় কালভার্ট সংলগ্ন কয়েকটি রাস্তা। নিকাশি নালা দিয়ে শহরের উপকন্ঠে চাষ জমিতেও ছড়িয়ে পড়ে ধবধবে সাদা প্রচুর ফেনা।

Advertisement

বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে স্পষ্ট হয়ে যায়, কালর্ভাটগুলির তলায় অবরুদ্ধ নিকাশিপথগুলি থেকেই এমন ফেনা বেরোচ্ছে। মুহূর্তে রঘুনাথপুর, মাঝিপাড়া, বাছুরডোবা মতো বিভিন্ন এলাকার ফেনা-চিত্র সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে যায়। অত্যুৎসাহী কেউ কেউ ফেনার সঙ্গে নিজস্বীও তুলতে শুরু করেন। কলেজ পড়ুয়া বুদ্ধদেব বেরার মতো কেউ আবার সাহস করে ফেনায় হাত দিয়েও পরখ করে দেখেন। শুক্রবার রাতের অভিজ্ঞতা শোনাতে গিয়ে ব্যবসায়ী ইন্দ্রনীল ঘোষ ও রাকেশ রিংসিয়া একযোগে বলেন, “এর আগে কখনও এমন দৃশ্য দেখিনি। আচমকা রাস্তার ধারে তিমি মাছের আকৃতির সাদা পদার্থটা দেখে খুবই ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম।”

শনিবার সকালে বাছুরডোবা শ্মশানকালী মন্দিরের কাছে কালর্ভাটটির তলা থেকে ফেনার পাহাড় বেরোতে শুরু করে। হাওয়ায় সেই ফেনা ছড়িয়ে পড়ে লাগোয়া চাষ জমিতেও। কিছুদূরে নিকাশি পথে শহরের উপকন্ঠে রাধানগর গ্রামীণ এলাকার চাষ জমিতেও ছড়িয়ে পড়ে ফেনা। চাষিরা অভিযোগ জানান কৃষি দফতরে। ঝাড়গ্রাম ব্লকের সহ কৃষি অধিকর্তা সুকুমার মুর্মু বলেন, “আমন ধান চাষের মরসুমে এমন ফেনা ছড়িয়ে পড়ায় চাষিরা খুবই উদ্বিগ্ন। কীসের ফেনা সেটাই বুঝতে পারছি না।” তবে প্রাথমিক ভাবে পুরসভার অনুমান, শহরের কোনও শিল্পসংস্থা থেকে নিকাশি নালায় বর্জ্য রাসায়নিক ছাড়ার ফলেই এমন ফেনার উৎপত্তি। উপপুরপ্রধান শিউলি সিংহ বলেন, “কীভাবে এই ফেনা ছড়িয়ে পড়ল তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”

রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের হলদিয়া দফতরের অধীনে রয়েছে ঝাড়গ্রাম। সেখানকার আধিকারিক কুণাল সাহুর সঙ্গে এ দিন চেষ্টা করেও ফোনে যোগাযোগ করা যায়নি। তবে ঝাড়গ্রাম রাজ কলেজের রসায়নের অধ্যাপক তাপসকুমার আদলদার বলেন, “ক্ষারক জাতীয় কোনও পদার্থের সঙ্গে জলের রাসায়নিক বিক্রিয়ায় এমন ফেনার সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এমন ক্ষেত্রে জলের স্রোতে বাধা পেলে অনেক বেশি পরিমাণে ফেনা তৈরি হতে পারে। এমন ফেনায় কিন্তু চাষের জমি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সমূহ আশঙ্কা রয়েছে।” ঝাড়গ্রামের মহকুমাশাসক (সদর) নকুলচন্দ্র মাহাতো বলেন, “রহস্য-ফেনার উৎস সন্ধানে জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর ও পুরসভাকে দিয়ে তদন্ত করানো হবে।”

দিনের শেষে অবশ্য রহস্য-ফেনা মিলিয়ে গিয়েছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement