উপহারে ফুল। ঝাড়গ্রামে। নিজস্ব চিত্র
পাহাড়, সমুদ্রের চিন্তা পৌঁছেছে জঙ্গলেও। দার্জিলিং, দিঘায় পর্যটকদের বাধায় উদ্বিগ্ন ঝাড়গ্রামের পর্যটন ব্যবসায়ীরা। তবে পর্যটক আসার প্রথম দিনে বিপত্তি কিছু হয়নি।
আনলক-১ পর্বে ঝাড়গ্রামের কিছু সরকারি ও বেসরকারি অতিথিশালা খুলেছে। দরজা খুলেছে পর্যটন কেন্দ্রগুলিরও। তবে গ্রামীণ এলাকার ‘হোম স্টে’ এখনও চালু করা যায়নি। সূত্রের খবর, স্থানীয়দের একাংশের আপত্তিতে জেলার ৫টি ‘হোম স্টে’ খোলা হয়নি এখনও। অন্য দিকে, শনিবার থেকে ঝাড়গ্রামে আসতে শুরু করেছেন পর্যটকেরা। সংখ্যাটা হাতে গোনা হলেও আশায় বুক বাঁধছেন পর্যটন-পেশার সঙ্গে যুক্ত সকলেই।
এ দিন বিকেলে কলকাতা থেকে সড়ক পথে ঝাড়গ্রামে এসে পৌঁছন তিনজন পর্যটক। পর্যটন দফতর স্বীকৃত ‘ঝাড়গ্রাম ট্যুরিজম’-এর তরফে এ দিন ওই পর্যটকদের স্যানিটাইজ় করা ফুলের তোড়া দিয়ে স্বাগত জানানো হয়। তবে আশঙ্কাটা যাচ্ছে না। সংস্থার কর্তা সুমিত দত্ত বলেন, ‘‘যে সব এলাকায় যাওয়ার ক্ষেত্রে সমস্যা রয়েছে, ওই সব এলাকা এড়িয়ে পর্যটকদের ঝাড়গ্রামের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও দর্শনীয় জায়গাগুলি দেখানো হবে।’’ তবে সুমিতের দাবি, শহরের মধ্যে পর্যটকরা সরকারি ও বেসরকারি অতিথিশালায় নিশ্চিন্তে থাকতে পারবেন। এখানে দার্জিলিংয়ের মতো ঘটনার সম্ভাবনা নেই।
বেলপাহাড়ির পাহাড় জঙ্গল ঘেরা এলাকাগুলি বরাবরই পর্যটকদের কাছে মূল আকর্ষণ। ওই সব গ্রামীণ এলাকায় ভিন্ রাজ্য ফেরত পরিযায়ীদের নিয়ে কোথাও কোথাও সমস্যা হচ্ছে। কোনও কোনও এলাকায় নিভৃতবাস পর্ব সেরে ঘরে ফিরেও একঘরে হয়ে থাকতে হচ্ছে পরিযায়ী শ্রমিক ও তাঁদের পরিজনদের। ফলে, ওই সব এলাকায় পর্যটকেরা গেলে কী পরিস্থিতির মধ্যে পড়বেন তা নিয়ে আশঙ্কা রয়েছে। সুমিত বলেন, ‘‘আমরা পুলিশ-প্রশাসনকে জানিয়ে উপযুক্ত স্বাস্থ্যবিধি মেনেই পর্যটকদের দর্শনীয় জায়গাগুলি দেখাতে নিয়ে যাব।’’
ঝাড়গ্রাম হোটেল ওনার্স ওয়েল ফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মধুসূদন কর্মকার বলেন, ‘‘দার্জিলিংয়ের ঘটনাটি নিয়ে আমরাও চিন্তায় রয়েছি। মাওবাদী পর্বে এখানে পর্যটন ব্যবসা লাটে উঠেছিল। গত সাত-আট বছরে পর্যটনের ক্ষেত্রটা প্রশস্ত হয়। এখন করোনার জেরে জেলার পর্যটন ব্যবসা খুবই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। হাতে গোনা পর্যটক আসতে শুরু করেছেন। তাই পর্যটকরা যাতে নিরাপদে বেড়াতে পারেন, সেটা পুলিশ-প্রশাসনকে দেখতে হবে।’’
ভাড়ার গাড়ির চালক অর্ক প্রামাণিকের কথায়, ‘‘ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ সপ্তাহে পর্যটকদের নিয়ে বেলপাহাড়ির লালজল, কাঁকড়াঝোর, খাঁদারানি, ঢাঙিকুসুম নিয়ে গিয়েছিলাম। তারপর লকডাউনে দু’মাসের উপর বাড়িতে বসে রয়েছি। কয়েকটি গ্রামীণ এলাকার বাসিন্দারা বাইরের লোকজনকে গ্রামে ঢুকতে দিচ্ছেন না। ফলে পর্যটকদের নিয়ে যাওয়ার ঝুঁকি নেব কী করে!’’ জেলা পুলিশের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘ঝাড়গ্রামে পর্যটকেরা এসে সমস্যায় পড়ার কোনও অভিযোগ নেই। পরিস্থিতির উপর নজর রাখা হচ্ছে।’’