ভোটের ফল বেরোনোর পর থেকেই রাজ্যে শাসকদলের নেতা-কর্মীদের অনেকেই এখন বিজেপিমুখী। কেউ ইতিমধ্যেই বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। কেউ এখনও অপেক্ষার তালিকায়। এমন আবহে ‘অধিকারী গড়’-এ জেলা পরিষদের খাদ্য-সরবরাহ কর্মাধ্যক্ষ সিরাজ খান এবং শহিদ মাতঙ্গিনী পঞ্চায়েত সমিতির প্রাক্তন সহ-সভাপতি বামদেব গুছাইতের বিজেপিতে যোগদান নিয়ে জল্পনা তুঙ্গে উঠেছে জেলায়। যে জল্পনার পিছনে রয়েছে সোস্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া একটি ছবি। যেখানে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতা কৈলাস বিজয়বর্গীর সঙ্গে হাসতে দেখা যাচ্ছে সিরাজ খানকে। রয়েছেন তমলুক লোকসভায় পরাজিত বিজেপি প্রার্থী সিদ্ধার্থ নস্করের হাসিমুখের ছবি। যদিও ওই ছবির সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার।
সোস্যাল মিডিয়ায় এই ছবি দিয়ে সেখানে সিরাজের নাম উল্লেখ করে বলা হয়েছে, ‘ইনি তৃণমূলের পূর্ব মেদিনীপুরের চারজন এমএলএ-কে নিয়ে বিজেপিতে যোগ দেওয়ার জন্য কৈলাশজীর সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন’। এরপরই সিরাজ ও বামদেব বিজেপি যোগ দেবেন কি না তা নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে তৃণমূলের অন্দরে। জেলা নেতৃত্ব দু’জনের কাছেই এই নিয়ে জবাবদিহি চেয়েছেন বলে দলীয় সূত্রে খবর।
কে এই সিরাজ খান?
শহিদ মাতঙ্গিনী ব্লকে মেচেদা বাজার সংলগ্ন শান্তিপুরের বাসিন্দা সিরাজ মাছ ও হোটেল ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিতর পাশাপাশি রাজনীতির সঙ্গেও জড়িত। ২০১৬ সালে নন্দকুমার বিধানসভা থেকে নির্দল প্রার্থী হিসেবে তৃণমূলের সুকুমার দে’র বিরুদ্ধে ভোটে লড়ে হেরে যান। ২০১৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে তৃণমূল সিরাজকে পাঁশকুড়া পশ্চিম এলাকা থেকে জেলা পরিষদে প্রার্থী করে। ভোটে জেতার পর খাদ্য কর্মাধ্যক্ষের পদও দেওয়া হয় তাঁকে। জেলার রাজনীতিতে শুভেন্দু অধিকারীর ঘনিষ্ঠ হিসেবেই পরিচিত সিরাজের সঙ্গে বিজেপির যোগ প্রকাশ্যে আসায় বেশ অস্বস্তিতে তৃণমূল।
বিজেপি নেতাদের দেখা হওয়ার কথা অস্বীকারও করেননি সিরাজ ও বামদেব। তবে সোস্যাল মিডিয়ায় তাঁদের ছবি প্রসঙ্গে সিরাজের দাবি, ‘‘ওঁরা আমার হোটেলে এসেছিলেন। আমি সেখানে দাঁড়িয়ে থাকার সময় কেউ ছবি তুলে সোস্যাল মিডিয়ায় দিয়েছে। দলীয় নেতৃত্ব আমার কাছে এ বিষয়ে জানতে চেয়েছিলেন। আমি তাঁদের বুঝিয়ে বলেছি।’’ যদিও একই সঙ্গে তাঁর যুক্তি, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও তো জ্যোতিবাবুর সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন। তাহলে কি তিনি সিপিএম হয়ে গিয়েছিলেন? বিজেপি নেতাদের সঙ্গে ছবি তোলা হলেও আমি বিজেপিতে যোগ দিইনি। বিষয়টি নিয়ে যদি দল জলঘোলা করে তা হলে দল ছাড়ার কথা ভাবতে হবে।’’
আর বামদেবের দাবি, ‘‘সিরাজের হোটেলে বিজেপি নেতারা এসেছিলেন। তাঁরা সেখানে থাকলে বিতর্ক হতে পারে, সেটা বোঝানোর জন্যই সিরাজ আমাকে ডেকেছিলেন। সৌজন্য দেখাতেই হোটেল ছবি তোলা হয়েছিল।’’ প্রসঙ্গত, বামদেবের স্ত্রী জয়শ্রী গুছাইত বর্তমানে খারুই-২ গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূল সদস্যা।
তমলুকের বিজেপি প্রার্থী সিদ্ধার্থ নস্করের কথায়, ‘‘কয়েক দিন আগে মেচেদার একটি হোটেলে গিয়েছিলাম। ওটা সিরাজের বলে জানতাম না। হোটেলে সিরাজ ও বামদেবের সঙ্গে দেখা হলেও সেখানে কৈলাশ বিজয়বর্গীয় ছিলেন না। কোন ছবি নিয়ে বলা হচ্ছে, বুঝতে পারছিনা।’’
বিজেপির জেলা সভাপতি (তমলুক) প্রদীপ দাস বলেন, ‘‘পূর্ব মেদিনীপুরে তৃণমূলের অনেক নেতাই বিজেপিতে আসার জন্য যোগাযোগ করছেন। সিরাজ ওই তালিকার বাইরে আছেন বলে মনে হয় না।’’ এই বিষয়ে জেলার তৃনমূল সভাপতি শিশির অধিকারী বলেন, ‘‘এ বিষয়ে কিছু জানি না। সিরাজ খান যা বলেছেন সেটা ওঁর কথা।’’
শহিদ মাতঙ্গিনী ব্লক তৃণমূলের আহ্বায়ক শরৎ মেট্যা বলেন, ‘‘লোকসভা নির্বাচনের সময় থেকেই বামদেবের সঙ্গে বিজেপির ঘনিষ্ঠতার কথা শোনা যাচ্ছে। তাই ওঁকে আর দলের বৈঠকে ডাকা হয়নি। তবে সিরাজের বিষয়টি আমরা জেলা নেতৃত্বকে জানিয়েছি।’’ তমলুকের তৃণমূল সাংসদ দিব্যেন্দু অধিকারী বলেন, ‘‘বিজেপি নেতাদের সঙ্গে সিরাজের ছবি দেখেছি। বিষয়টি নজর রাখা হচ্ছে।’’