নির্দল কাঁটা বিঁধলেও বোর্ড তৃণমূলের

কোথাও তৃণমূল প্রার্থীর কাছে হারের ব্যবধান মোটে ১১। আবার কোথাও খোদ তৃণমূল পুরপ্রধানকে ৭২২ ভোটের ব্যবধানে হারিয়ে জয়ী হলেন নির্দল প্রার্থী। ২০ আসনের তমলুক পুরসভার ১৩ টি আসনে তৃণমূলের সঙ্গে লড়াই হয়েছে নির্দল প্রার্থীদের। এর মধ্যে তিনটি আসনে জয়লাভ করেছে নির্দল প্রার্থীরা। আর এই জয়ের মধ্যে সবথেকে উল্লেখযোগ্য হল ১৭ নম্বর ওয়ার্ডে বিদায়ী পুরপ্রধান দেবিকা মাইতিকে ৭২২ ভোটের ব্যবধানে হারিয়ে নির্দল প্রার্থী অলক সাঁতরার জয়।

Advertisement

আনন্দ মণ্ডল ও কৌশিক মিশ্র

তমলুক ও এগরা শেষ আপডেট: ২৯ এপ্রিল ২০১৫ ০১:১৮
Share:

তমলুকের গণনাকেন্দ্রের বাইরে তৃণমূল সমর্থকদের উচ্ছ্বাস। পার্থপ্রতিম দাসের তোলা ছবি।

কোথাও তৃণমূল প্রার্থীর কাছে হারের ব্যবধান মোটে ১১। আবার কোথাও খোদ তৃণমূল পুরপ্রধানকে ৭২২ ভোটের ব্যবধানে হারিয়ে জয়ী হলেন নির্দল প্রার্থী। ২০ আসনের তমলুক পুরসভার ১৩ টি আসনে তৃণমূলের সঙ্গে লড়াই হয়েছে নির্দল প্রার্থীদের। এর মধ্যে তিনটি আসনে জয়লাভ করেছে নির্দল প্রার্থীরা। আর এই জয়ের মধ্যে সবথেকে উল্লেখযোগ্য হল ১৭ নম্বর ওয়ার্ডে বিদায়ী পুরপ্রধান দেবিকা মাইতিকে ৭২২ ভোটের ব্যবধানে হারিয়ে নির্দল প্রার্থী অলক সাঁতরার জয়।

Advertisement

তমলুক পুরসভার নির্বাচনে এ বার তৃণমূলের টিকিট না পেয়ে দলীয় প্রার্থীদের বিরুদ্ধে নির্দল প্রার্থী হিসেবে লড়াই করেছিলেন এক বিদায়ী কাউন্সিলর-সহ বেশ কয়েকজন তৃণমূল কর্মী। সব মিলিয়ে পুরসভার ২০ টি আসনের ৮৫ জন প্রার্থীর মধ্যে নির্দল প্রার্থী ছিলেন ২০ জন। দলীয় প্রচারে জেলা তৃণমূল নেতৃত্বের নিশানা হয়ে ওঠেন এইসব নির্দল প্রার্থীরা। দলের বিক্ষুদ্ধদের নির্দল প্রার্থী হওয়া নিয়ে কড়া বার্তা দিতে এক বিদায়ী কাউন্সিলর-সহ তিন তৃণমূল নেতাকে বহিষ্কারও করা হয়েছিল। কিন্তু পুরসভার ভোটের ফলে দেখা যাচ্ছে ওই বহিষ্কৃত নেতাদের প্রতি এলাকার জনসমর্থন তৃণমূলের সঙ্গে রীতিমত পাল্লা দিয়েছে।

পুরসভার ১৭ নম্বর ওয়ার্ডে বিদায়ী পুরপ্রধান দেবিকা মাইতির বিরুদ্ধে একমাত্র নির্দল প্রার্থী ছিলেন অলক সাঁতরা। ভোটের ফলে দেখা যাচ্ছে ৭২২ ভোটের ব্যবধানে জিতেছেন অলকবাবু। হারের কারণ নিয়ে দেবিকাদেবী বলেন, ‘‘ওয়ার্ড ও পুরসভা এলাকায় প্রচুর কাজ করেছি। আমাকে হারাতে বিরোধীদলগুলি তো বটেই আমাদের দলের একাংশ চক্রান্ত করে জোট করেছিল। হারের পিছনে দলের অন্তর্ঘাত রয়েছেই।’’ পুরপ্রধানকে হারানো বিজয়ী প্রার্থী অলক সাঁতরার দাবি, ‘‘পুরপ্রধান উন্নয়নের কাজে ব্যর্থ। আমাকে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল সমর্থন করেছিল। সাধারণ মানুষ আমাকে সমর্থন করায় জয়লাভ করেছি।’’ পুরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডে উপ-পুরপ্রধান দীপেন্দ্রনারায়ণ রায়ের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে দ্বিতীয় স্থান পেয়েছেন আরেক নির্দল প্রার্থী অনিমেষ মিশ্র। তবে নির্দল প্রার্থী অনিমেষ মিশ্রকে ২৪৬ ভোটের হারিয়ে জয়ী হয়েছেন দীপেন্দ্রনারায়নবাবু। তমলুক পুরসভার ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে তৃণমূল প্রার্থী সুব্রত রায়ের বিরুদ্ধে নির্দল হয়ে লড়াই করেছিলেন ওই ওয়ার্ডের বিদায়ী তৃণমূল কাউন্সিলর জয়া দাস নায়ক। সুব্রতবাবুর কাছে মাত্র ১১ ভোটে হেরে গিয়েছেন জয়াদেবী। পুরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডে তৃণমূল প্রার্থী ঝড়ুপদ বর্মণের কাছে ৯৬ ভোটের ব্যবধানে হেরে দ্বিতীয় স্থান পেয়েছে নির্দল প্রার্থী বিশ্বজিৎ কয়াল। এভাবে পুরসভার ২, ৪, ৯, ১০, ১৪, ১৫, ২০ নম্বর ওয়ার্ডে তৃণমূলের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে স্থান পেয়েছে নির্দল প্রার্থীরা।

Advertisement

অন্য দিকে, এগরাতে উপ-পুরপ্রধানের হারের সম্ভাবনা আগে থেকেই আঁচ করেছিল তৃণমূল। কিন্তু পুরপ্রধান নিজেও যে হারতে পারেন এমন কথা স্বপ্নেও ভাবেনি দল। পুরবোর্ড দখল করলেও এই নক্ষত্র পতনে দল যথেষ্ট উদ্বিগ্ন। তৃণমূল যে ক’টি ওয়ার্ড হারিয়েছে তার মধ্যে সবথেকে উল্লেখযোগ্য বিগত পুরবোর্ডের প্রধান স্বপন নায়ক ও উপ-প্রধান বীরেন নায়ক।

কেন হারলেন দুই সেনাপতি? ৪ নম্বর ওয়ার্ডে এক তৃণমূল সমর্থক জানিয়েছেন, দলীয় প্রার্থী হিসেবে বীরেন নায়কের নাম ঘোষণার পর থেকে বীরেন-বিরোধীরা সক্রিয় হয় উঠেন। তাঁর কথায়, ‘‘বীরেনবাবু হারছেন, সেটা ভোটের আগেই জানা ছিল। প্রচারে দলের নেতা শুভেন্দু অধিকারী প্রকাশ্যে তা স্বীকারও করেছিলেন।’’ অনেকেই জানিয়েছেন বীরেনবাবুর ব্যক্তিগত জীবন যাপনও এই ভোটে প্রভাব ফেলেছে। বাম সমর্থিত নির্দল প্রার্থী তপন হাতি জয়ের কারণ হিসেবে অবশ্য এলাকার অনুন্নতির কথাই তুলে ধরেছেন

কিন্তু পুরপ্রধান স্বপন নায়কের পরাজয় কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না দলীয় সমর্থকরা। কার্যত ভেঙে পড়েছেন স্বপনবাবু নিজেও। তিনি বলেন, ‘‘দলীয় অন্তর্ঘাতই দায়ী। নিজের লোকেরাই হারিয়ে দিল আমাকে।’’ আসলে ৩ নম্বর ওয়ার্ডে স্বপনবাবুর বিরুদ্ধে জয় লাভ করেছেন বিজেপি প্রার্থী রামচন্দ্র পণ্ডা। রামচন্দ্রবাবু আগে তৃণমূলেই ছিলেন। তাঁর দাবি, ‘‘দলীয় কর্মীদের স্বপনবাবু কোনও সম্মান দিতেন না। উন্নয়নেও মন ছিল না। শুধু অর্থ লেনদেন।’’ তবে শুধু বিজেপি-র ভোট যে তিনি পাননি সে কথা স্বীকার করে নিয়েছেন রামচন্দ্রবাবুও। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, পুরশহর হলেও পুর-পরিযেবা নিয়ে বরাবরই অভিযোগ ছিল। আর তারই ছাপ পড়েছে এবারের ভোটে।

তৃণমূলের অন্যান্য নক্ষত্রদের মধ্যে পতনের তালিকায় রয়েছেন ৭ নম্বরে প্রথম প্রার্থী হওয়া জেলা যুবনেতা জয়ন্ত সাউ। তবে তিনি বামেদের হেভিওয়েট প্রার্থী নবকুমার করণের কাছে মাত্র ৭টি ভোটে পরাজিত হয়েছেন। এগরায় তৃণমূলের ফল এবং প্রধান ও উপ-প্রধানের হার প্রসঙ্গে পুরভোটে তৃণমূলের আহ্বায়ক সমরেশ দাস বলেন, ‘‘আমরা এগরাতে পুরবোর্ড পেয়েছি। তবে প্রাক্তন দুই প্রধান প্রতিনিধির হারে আমরা মর্মাহত।এ ব্যাপারে দলীয় স্তরে আলোচনা করব।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement