জয়ী: গণনাকেন্দ্রের বাইরে তৃণমূল প্রার্থীরা। ছবি: আরিফ ইকবাল খান
ভোটের দিন সকালে পোলিং এজেন্ট স্বামীকে নিয়ে বুথে ঢুকতে গিয়ে তৃণমূলের বাধায় তাঁকে ফিরতে হয়েছিল। নিজের ভোটটাও দিতে পারেননি হলদিয়ার সিপিএম বিধায়ক তাপসী মণ্ডল। ওই ওয়ার্ডের প্রার্থী তাপসীদেবী পেয়েছেন ১০১টি ভোট। তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী তৃণমূলের প্রশান্ত দাস পেয়েছেন ৩৫৮৪ ভোট। আর বিজেপির সীতারাম মণ্ডল পেয়েছেন ৫৬টি ভোট। কংগ্রেসের চিরঞ্জিত কর পেয়েছেন ১০টি ভোট।
তৃণমূল প্রার্থী প্রশান্ত দাসের প্রাপ্ত ভোটের হার ৯৫.৫৪ শতাংশ ও তাপসীদেবীর প্রাপ্ত ভোটের হার ২.৬ শতাংশ। অথচ মাত্র দেড় বছর আগে বিধানসভা ভোটে এই ওয়ার্ডে তাপসীদেবী প্রায় ১৪০০ ভোটে এগিয়ে ছিলেন তৃণমূল প্রার্থীর চেয়ে। ভোটের দিন তৃণমূলের বিরুদ্ধে ছাপ্পা ভোটের অভিযোগ তুলেছিলেন তাপসীদেবী। ভোটের ফল বেরোনোর পর ক্ষুব্ধ তাপসীদেবী বলেন, ‘‘এটা কি পুরসভার ভোট হয়েছে? নিজের ৪০ নম্বর বুথে আমি মাত্র ২৬টি ভোট পেয়েছি। বাকি তিনটি বুথে যথাক্রমে ১১, ১৪ ও ৫০টি। সারা ওয়ার্ডের চারটি বুথে মিলিয়ে ১০১ ভোট। ভাবা যায়!’’
তাপসীদেবীর ব্যাখ্যা, ‘‘ভোটের দিন সকালে এলাকার কিছু বাসিন্দা বুথে গিয়ে নিজের ভোট দিতে পেরেছিলেন। সেটাই সাকুল্যে ওই ১০১টি ভোট। তারপর তৃণমূলের লোকজন বুথের দখল নিয়ে ছাপ্পা দিয়েছে।’’ তাপসীদেবীর ওয়ার্ডের পাশাপাশি হলদিয়া পুরসভার আরও কিছু ওয়ার্ডে তৃণমূল প্রার্থীরা ৯০ শতাংশের বেশি ভোট পেয়েছেন। তাঁদের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বীরা ১০০ টিও ভোট পাননি। যেমন ১৭ নম্বর ওয়ার্ডে মোট ভোট পড়েছে ৪৯৫৮টি। এর মধ্যে তৃণমূল প্রার্থী সেখ আসগর আলি পেয়েছেন ৪৯২৩টি ভোট। প্রদত্ত ভোটের ৯৯.২৯ শতাংশ। তাঁর প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী সিপিএম প্রার্থী ইসরাফিল ইসলাম খান পেয়েছেন ৩২টি ভোট। ওই ওয়ার্ডের আরও দুই প্রার্থী সেখ সিবাকুল্লা পেয়েছেন ৩টি ও সেখ আনোয়ার হোসেনের প্রাপ্ত ভোট শূন্য। একইভাবে পুরসভার ২০ নম্বর ওয়ার্ডে মোট ভোট পড়েছে ২২৪৫টি। এর মধ্যে তৃণমূল প্রার্থী গোপাল দাস পেয়েছেন ২১৮৮টি ভোট। অর্থাৎ ৯৭.৪৬ শতাংশ। তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী বিজেপি প্রার্থী চিন্ময় হাজরা পেয়েছেন ৩৮টি। এই ওয়ার্ডে সিপিএম প্রার্থী মহীতোষ মাজি পেয়েছেন ১৪টি ভোট। একইভাবে পুরসভার ১৫ নম্বর ওয়ার্ডে মোট ভোট পড়েছে ৪১৬৪। তৃণমূল প্রার্থী আজিজুর রহমান পেয়েছেন ৩৯৭১ ভোট অর্থাৎ ৯৫.৩৬ শতাংশ ভোট। প্রতিদ্বন্দ্বী বিজেপি প্রার্থী পেয়েছেন ২.৩৫ শতাংশ এবং বামফ্রন্ট প্রার্থী পেয়েছেন ২.২৮ শতাংশ।
হলদিয়া পুরভোট
২০১৭
মোট ওয়ার্ড-২৯
তৃণমূল-২৯
২০১২
মোট ওয়ার্ড-২৬
(বামফ্রন্ট ১৫, তৃণমূল-১১)
হলদিয়া পুরসভার ২৫ নম্বর ওয়ার্ডে এবার তৃণমূল প্রার্থী ছিলেন বন্দরের শ্রমিক নেতা শ্যামল আদক। এই ওয়ার্ডে মোট ভোট পড়েছে ২৮৭৭ টি। জয়ী শ্যামলবাবু পেয়েছেন ২৭৬৩টি ভোট। অর্থাৎ প্রদত্ত ভোটের ৯৬.০৩ শতাংশ। প্রতিদ্বন্দ্বী সিপিএমের অচিন্ত্য শাসমল পেয়েছেন ৮৮টি ভোট অর্থাৎ ৩.০৫ শতাংশ। হলদিয়া পুরসভার ২৯ টি ওয়ার্ডে তৃণমূলের নিরঙ্কুশ জয়ের পাশাপাশি পাঁশকুড়া পুরসভার ১৮ টি ওয়ার্ডের ১৭ টিতেই জয়ী তৃণমূল। এর মধ্যে পুরসভার চারটি ওয়ার্ডে বিরোধীরা ১০০র কম ভোট পেয়েছে। পাঁশকুড়ার ৯ নম্বর ওয়ার্ডে তৃণমূল প্রার্থী সইদুল ইসলাম খান পেয়েছেন ১৬৭০ টি ভোট। তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী কংগ্রেস প্রার্থী তথা প্রাক্তন উপ-পুরপ্রধান আশুতোষ চক্রবর্তী পেয়েছেন ৯৬টি ভোট। পুরসভার ১৬ নম্বর ওয়ার্ডে তৃণমূল প্রার্থী আশিকুর রহমান পেয়েছেন ১৭৬০ ভোট। তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী বিজেপি’র কুশধ্বজ বর্মণ পেয়েছেন ৯৩ টি ভোট। ১৭ নম্বর ওয়ার্ডে তৃণমূল প্রার্থী দেবব্রত আচার্য পেয়েছেন ৮৯৯ ভোট। তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী বিজেপি’র প্রতীক পাখিরা পেয়েছেন ৯৫ টি ভোট। ১৮ নম্বর ওয়ার্ডে তৃণমূল প্রার্থী পেয়েছেন ১৩৬০ ভোট। তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী সিপিএমের নকুল চাউলিয়া পেয়েছেন৯১ টি ভোট।
বিজেপি জেলা সভাপতি মলয় সিংহের অভিযোগ, ‘‘পুলিশ-প্রশাসনকে কাজে লাগিয়ে তৃণমূল ভোট লুঠ করেছে। এই ফলেই তার প্রমাণ। এতে মানুষের রায়ের কোনও প্রতিফলন হয়নি।’’