প্রতীকী ছবি।
বিজেপির রাজ্য সভাপতির খাসতালুক খড়্গপুর শহরে গত বিধানসভা উপ-নির্বাচনে শুভেন্দু অধিকারীর নেতৃত্বে জিতেছিল তৃণমূল। সেই শুভেন্দুর রাজনৈতিক অবস্থান নিয়ে এখন জল্পনা চলছে। তিনি মন্ত্রীত্ব থেকেও ইস্তফা দিয়েছেন।
সেই আবহেই পাশের শহর মেদিনীপুরে আসছেন তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই পরিস্থিতিতে রেলশহর খড়্গপুর যে এখনও তাঁদের ঘাঁটি তা বোঝাতে চেষ্টার কসুর করছে না তৃণমূল।
রবিবার খড়্গপুর শহরের একটি কমিউনিটি হলে দলনেত্রীর সভার প্রস্তুতি বৈঠকের আয়োজন করেছিল জেলা তৃণমূল। সেখানে জেলার প্রতিটি ব্লকের পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি, দলের ব্লক সভাপতি ও বিধায়কদের থাকতে বলা হয়েছিল। তবে এ দিনও ছিলেন না দলের বিরুদ্ধে ‘বিদ্রোহ’ ঘোষনা করা জেলার সহ-সভাপতি তথা প্রাক্তন পুরপ্রধান জহরলাল পাল। শুভেন্দু ‘ঘনিষ্ঠ’ জহর গত কয়েক মাস ধরেই দলের কোনও কর্মসূচিতেই যাচ্ছেন না। এমনকি শুভেন্দুর মন্ত্রীত্ব থেকে ইস্তফার পরে দলনেত্রী থেকে জেলা নেতৃত্বের বিরুদ্ধে সরবও হয়েছেন বর্ষীয়ান এই তৃণমূল নেতা।
গত বছর এই রেলশহরের বিধানসভায় প্রথমবার তৃণমূলের জয় এসেছিল মূলত শুভেন্দু অধিকারীর নেতৃত্বে। তারপরে এই ২৯ নভেম্বরেই শহরে এসে ভোটারদের কৃতজ্ঞতা জানিয়ে জয় উৎসর্গ করেছিলেন শুভেন্দু। ঘটনাচক্রে এক বছর পরে ঠিক সেই দিনেই জেলার প্রস্তুতি বৈঠক করল তৃণমূল। তবে পরিস্থিতি এ বার ভিন্ন। এ দিন তৃণমূলের জেলা সভাপতি অজিত মাইতি বলেন, “আমাদের কাছে খড়্গপুরের গুরুত্ব যথেষ্ট। সেটা বিজেপি ও দিলীপ ঘোষকে বুঝিয়ে দিতে জেলার সব বিধায়ক, পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি, ব্লক সভাপতিদের নিয়ে এই প্রস্তুতি বৈঠক খড়্গপুরে করলাম।’’ তাঁর দাবি, ‘‘আগামী নির্বাচনে এই শহরে ২১ হাজারেরও বেশি লিড আমরা পাব। তার আগে দিদির জনসভায় দেড় লক্ষ ভিড়ের লক্ষ্যমাত্রা ছাপিয়ে ২ লক্ষ করার শপথও এই খড়্গপুরেই নিলাম।”
তৃণমূলের দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিনের প্রস্তুতি বৈঠক থেকে দলনেত্রীর জনসভায় প্রতিটি ব্লক থেকে ১০ হাজার করে লোক আনার লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে দেওয়া হয়। নারায়ণগড়, দাঁতন, মোহনপুর, ঘাটাল, কেশপুরের মতো দূরবর্তী ব্লক থেকে ১০০টি করে বাস দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। মেদিনীপুর শহরের কাছেপিঠের ব্লক থেকে ৩০টি বাস ও বিপুল সংখ্যক ছোট গাড়িতে লোক আনতে বলা হয়েছে। অজিত বলেন, “আমার ধারণা পিংলা, কেশপুরের মতো ব্লক থেকে ১৫ হাজার করে লোক আসবে।”
রাজনৈতিক মহলের অনুমান, শুভেন্দুর মন্ত্রীত্ব ছাড়ার পরে বর্তমান পরিস্থিতিতে মমতার জনসভায় লোক জমায়েত কতটা হবে সেই নিয়ে তৃণমূল নেতারাও চিন্তায় আছেন। তৃণমূলের জেলা মুখপাত্র দেবাশিস চৌধুরীও বলেন, “দলের মধ্যে একটা ধন্দ তৈরি করার চেষ্টা চলছে। সেই ধন্দ কাটাতেই স্বয়ং নেত্রী আমাদের জেলায় আসছেন। তাই এই জনসভায় লোক জমায়েত আমাদের কাছে একটা চ্যালেঞ্জ। এই লড়াই জিততেই হবে।”
এ দিন জেলা তৃণমূলের কো-অর্ডিনেটর তথা রেলশহরের বিধায়ক প্রদীপ সরকার দাবি করেন, “খড়্গপুর শহর একটা বড় অংশ বাইকে জনসভায় যাবে। ওই দিনই বিজেপি বুঝে যাবে শহরে তাঁদের অস্তিত্ব শেষ। এখানে এই প্রস্তুতি সভা করে সেই প্রক্রিয়া শুরু হল।” মন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্র বলেন, “খড়্গপুরের সঙ্গে জেলার ১৫টি আসনেই আমরা জিতব। তার আগে আগামী ৭ নভেম্বর দিদির সভায় জনপ্লাবন হবে।”