কীর্তনে সুরে নাচ দিব্যেন্দুর। নিজস্ব চিত্র
দাদা বিধায়ক, রাজ্যের দাপুটে মন্ত্রী। নানা কাজের মাঝে কীর্তনে গলা মেলাতে বা খঞ্জনিতে সুর তুলতে দেখা যায় তাঁকে।
ভাই সাংসদ। তাঁকে নাচ গানের আসরে সেভাবে এত দিন দেখা যায়নি। সেই ভাই দিব্যেন্দু অধিকারীকেই রাসপূর্ণিমার অনুষ্ঠানে একেবারে অচেনা ভূমিকায় দেখল দাদা শুভেন্দু অধিকারীর খাসতালুক নন্দীগ্রাম।
রাস উৎসব উপলক্ষে নন্দীগ্রামে হয় নগরকীর্তন। বুধবার সন্ধ্যায় সেখানে যান তমলুকের সাংসদ দিব্যেন্দু। অনুষ্ঠানে স্থানীয়দের অনুরোধে মহিলাদের সঙ্গে সাংসদ কীর্তনের ছন্দে কিছুক্ষণ নাচেন। সাংসদের ওই ভূমিকায় যেমন মুগ্ধ স্থানীয়েরা, তেমনই রাজনৈতিক মহলে শুরু হয়েছে চর্চা। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশের বক্তব্য, এভাবে আদতে জনসংযোগই সারলেন সাংসদ।
স্থানীয় সূত্রের খবর, ২০১৫ সাল থেকে নন্দীগ্রামে ওই রাস উৎসব হয়ে আসছে। দু’দিনব্যাপী উৎসবে নগর কীর্তন চলে দিনভর। উৎসব কমিটির সভাপতি বনশ্রী খাঁড়া হলেন নন্দীগ্রাম ৪ নম্বর অঞ্চলের গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান। রাস উৎসব কমিটি সূত্রের খবর, এ বছর প্রায় ১০ হাজার মানুষকে অন্ন বিতরণ করা হয়েছে।
এমন ধর্মীয় অনুষ্ঠানে দিব্যেন্দুর উপস্থিতি এবং নাচে ‘অবাক’ স্থানীয় বাসিন্দা থেকে দলের নেতৃত্বও। কারণ, এর আগে সাংসদকে এ রকম অনুষ্ঠানে যেমন দেখা যায়নি, তেমনই দাদার খাসতালুক নন্দীগ্রামেও তাঁকে সাধারণত আসতে দেখা যায় না। তৃণমূলের স্থানীয় ব্লক সভাপতি মেঘনাদ পালের কথায়, ‘‘ওঁকে আগে এত স্বতস্ফূর্ত ভাবে নাচে অংশ নিতে দেখেনি। এতে অবশ্য দলের তরফে এলাকায় এ রকম জনসংযোগও হয়ে গিয়েছে। খুবই ভাল সাড়া মিলেছে।’’
হিসাব মতো নন্দীগ্রাম দিব্যেন্দুর সংসদ এলাকা তমলুকের মধ্যেই পড়ে। কিন্তু দাদা শুভেন্দুর বিধানসভা এলাকা হওয়ায় আগে কখনই নন্দীগ্রামে এভাবে ‘জনসংযোগ’ সারতে দেখা যায়নি। এতে প্রশ্ন উঠেছে, তাহলে কি বিধানসভা নির্বাচনের আগে নন্দীগ্রামে নিজেদের জমি শক্ত করতেই কি দিব্যন্দুকে দেখা গেল দাদা শুভেন্দুর ভূমিকায়!
দিব্যেন্দুর অবশ্য দাবি, এর সঙ্গে রাজনীতির যোগ নেই। তাঁর কথায়, ‘‘রাস উৎসবে এই প্রথমবার নন্দীগ্রামে গিয়েছি। কিন্তু এর সঙ্গে রাজানীতির যোগ নেই।’’ একই দাবি বনশ্রীরও। তিনি বলেন, ‘‘অন্য বছর এই উৎসব এত বড় করে হয় না। জন প্রতিনিধি হিসেবে যাঁরা এসেছিলেন, অন্য বছর তাঁদেরও আমন্ত্রণ জানানো হয় না।’’
দিব্যেন্দুর নন্দীগ্রামে যাওয়া এবং এভাবে নাচগানকে জনসংযোগ ছাড়া আর কিছু মনে করছে না বিজেপি। বিজেপি’র জেলার সভাপতি (তমলুক) নবারুণ নায়েক বলেন, ‘‘সামনে ভোট আসতে ওদের টনক নড়েছে। কিন্তু ভেলকিবাজি দেখিয়ে মানুষের মন পাওয়া যাবে না। আগামী দিনে ভোট বাক্স তা প্রমাণ করবে।’’