হলদিয়ায় অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। নিজস্ব চিত্র।
শ্রমিকদের মুখের গ্রাস কাড়া চলবে না। হয় ঠিকাদারি করুন, না হয় তৃণমূল। দু’টো একসঙ্গে নয়। হলদিয়ায় তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠনের সভামঞ্চ থেকে ঠিকাদারি সংস্থাগুলিকে এ ভাবেই হুঁশিয়ারি দিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। পাশাপাশি, নাম না করে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকে খোঁচাও দিয়েছেন অভিষেক। ১১ বছর বাদে দেওয়াল ভেঙে হলদিয়ার শ্রমিকদের সঙ্গে আত্মিক যোগ তৈরি হয়েছে বলেও শনিবার দাবি করেছেন অভিষেক।
শনিবার হলদিয়ার রানিচকের সংহতি ময়দানের জনসভায় যোগ দেন অভিষেক। সেখানে ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ বলেন, ‘‘আপনাদের প্রতিটা শব্দ আমার কাছে এসে পৌঁছেছে। আপনাদের ক্ষোভ, বিক্ষোভ, পরামর্শ আমি অক্ষরে অক্ষরে শুনেছি। কী করে শুনেছি তা আমার উপর ছেড়ে দিন। গতকাল যেমন এক জন তৃণমূল কর্মী বলছিলেন, ‘সমাবেশকে ঘিরে দল যে পরিশ্রম করেছে, তা যদি স্থানীয় নেতৃত্ব করত তা হলে আমরা হলদিয়ায় ৩০ হাজার ভোটে জিততাম।’ ভুল বলছি? আপনারা যা বলছেন তা আমাদের কানে পৌঁছেছে।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘কে অনুগামী সেজে দলের ভিতরে ঢুকে দলের বারোটা বাজিয়েছে তা আমার ফোনে সব রয়েছে। আমি আসতে আসতে পাঁচ-ছয় জন অনুগামীকে চিহ্নিত করেছি। তারা এই সভাতেও রয়েছে। পয়লা মে কে কোন কারখানায় পদ্মফুলের হয়ে বিএমএসের ঝান্ডা তুলেছে আর তৃণমূলে ছাপ দিয়েছে তার তথ্য আমার কাছে আছে।’’
নাম না করে শনিবার হলদিয়ার মাটিতে দাঁড়িয়ে শুভেন্দুকে নিশানা করেন অভিষেক। তাঁর জন্য শ্রমিকদের সর্বনাশ হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি। বলেন, ‘‘২০১১ সাল থেকে এক জন রাজ্য প্রশাসন আর দলের মাঝে দেওয়াল তুলে দাঁড়িয়েছিল। আমি আজ এসে এই দেওয়াল চূর্ণ করে দিয়ে গেলাম। আজ থেকে আপনাদের সঙ্গে আমার আত্মিক সম্পর্ক তৈরি হল।’’
এই সূত্রেই অভিষেকের বার্তা, ‘‘যারা ‘অনুগামী এমপ্লয়মেন্ট’ এক্সচেঞ্জ খুলে বসেছিল, আর ১৫-২০টা ঠিকাদারের সাহায্য নিয়ে শ্রমিকদের মাথায় ছড়ি ঘোরায় তাদের আমি হুঁশিয়ারি দিয়ে যাচ্ছি। যারা ভাবছে ঠিকাদারি করব, আর শ্রমিকদের মুখের গ্রাস কেড়ে নেব, তা হবে না। আমার কাছে পে স্লিপ রয়েছে, কোন ঠিকাদার টাকা কেটে নিচ্ছে।’’ এই সূত্রেই মঞ্চে একটি ঠিকাদারি সংস্থার নামও বলেন তিনি। একইসঙ্গে হলদিয়ায় কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে স্থানীয় ছেলেদের অগ্রাধিকার দেওয়ার দাবিও তোলেন তিনি। বলেন, ‘‘হলদিয়ার ছেলেরা ১২ ঘণ্টার চাকরি করে ৮ ঘণ্টার বেতন নেবে, তা হতে দেব না।’’
শ্রমিকদের বার্তা দিয়ে অভিষেক বলেন, ‘‘আপনারা ১১ বছর অপেক্ষা করেছেন। আমি তিন মাস সময় চাইছি। একটা ঠিকাদার থাকবে না। হয় ঠিকাদারি করুন নয় তৃণমূল, দু’টো এক সঙ্গে করতে হবে না। কোনও দাদার প্রতিনিধি নয়, নেত্রীর প্রতিনিধি হতে হবে। শ্রমিক সংগঠন করলে খেটে খাওয়া মানুষের প্রতিনিধি হতে হবে।’’ পাশাপাশি, অভিষেক আরও বলেন, ‘‘কথা দিচ্ছি, শ্রমমন্ত্রীকেও অনুরোধ করব, তিন মাসের মধ্যে চাটার্ড অব ডিমান্ড তৈরির সময় রাজ্য সরকারকে প্রস্তাব দেব সেখানে আগামি দিনে কোনও ঠিকাদার থাকবে না। শ্রমিকদের প্রতিনিধি থাকবে।’’ শ্রমিকদের স্বার্থ নিয়ে রাস্তায় নামার জন্য দলকেও বার্তা দিয়েছেন ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ।
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ।