সমরেশ দাস।
এক মাস ধরে হাসপাতালের ঠান্ডা ঘরে অদৃশ্য শত্রুর সঙ্গে লড়াইয়ে অবশেষে হার মানল জীবন।
সোমবার ভোরে সল্টলেকের একটি বেসরকারি হাসপাতালে মৃত্যু হল করোনায় আক্রান্ত এগরার ৭৭ বছরের তৃণমূল বিধায়ক সমরেশ দাসের। প্রিয়জনের মৃত্যুর সংবাদ পৌঁছতেই শোকস্তব্ধ এগরা ২ নম্বর ব্লকের বাসুদেবপুর গ্রাম। দলীয় বিধায়কের মৃত্যুতে শোকপ্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ট্যুইট করে জানান, ‘বিধায়ক শ্রী সমরেশ দাসের মৃত্যুতে আমি গভীরভাবে শোকাহত। তাঁর প্রয়াণে রাজনৈতিক জগতে এক অপূরণীয় শূন্যতা সৃষ্টি হল। তাঁর নিকটাত্মীয় ও অনুরাগীদের আন্তরিক সমবেদনা জানাই’। স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, আইএমএ-র রাজ্য শাখার সম্পাদক শান্তুনু সেনও এ দিন প্রয়াত বিধায়ককে শ্রদ্ধা জানাতে হাসপাতালে গিয়েছিলেন।
তৃণমূলের পূর্ব মেদিনীপুর জেলা সভাপতি শিশির অধিকারীর প্রতিক্রিয়া, ‘‘নিজের এক প্রিয়জনকে হারালাম। সমবায় আন্দোলনে অপূরণীয় ক্ষতি হল। সৎ ও নিষ্ঠার সঙ্গে রাজনীতি করেছেন। শিক্ষক হিসেবেও সমান জনপ্রিয় ছিলেন। ওঁর আত্মার চিরশান্তি ও পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাই।’’
এগরা বিধানসভায় লাগাতার তিনবার তৃণমূল বিধায়ক নির্বাচিত হয়েছিলেন সমরেশ। তৃণমূলের বিধায়ক হলেও রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে দলমত নির্বিশেষে মানুষের সুবিধা-অসুবিধায় পাশে দাঁড়াতেন। একদিকে পোড় খাওয়া রাজনীতিবিদ ও সমবায় আন্দোলনের নেতা। অপরদিকে এলাকায় জনপ্রিয় শিক্ষক হিসেবেও পরিচিত ছিলেন। ১৪ জুলাই বালিঘাই বাজারে দলীয় সভায় উপস্থিত থাকার পরই তাঁর শরীরে জ্বর ও সর্দি-কাশি উপসর্গ দেখা দেয়। ১৭ জুলাই এগরা সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে তাঁর লালা রসের নমুনা সংগ্রহ করা হয়। ১৮ জুলাই করোনা পজ়িটিভ রিপোর্ট আসে। তবে বিধায়কের পরিবারের সদস্যদের সকলেরই করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট নেগেটিভ এসেছিল। ওই দিনই সন্ধ্যায় সমরেশকে পাঁশকুড়া বড়মা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। ১৯ জুলাই তাঁকে কলকাতার বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হলেও তাঁর শারীরিক অবস্থা তখনও স্বাভাবিক ছিল। ২১ জুলাইয়ের পরে শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকে। বাড়তে থাকে শ্বাসকষ্টের সমস্যা। ২৪ জুলাই তাঁকে সল্টলেকের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভেন্টিলেশনে রাখা হয়। কিন্তু সেখান থেকে আর ঘুরে দাঁড়াতে পারলেন না তিনি। টানা ৩১ দিনের লড়াই শেষে হার মানলেন তিনি।
পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, শ্বাসকষ্ট জনিত পুরনো সমস্যা ছিল তাঁর। প্রতিদিন দু’বেলা ইনহেলার নিতে হত। এ দিন গ্রামের বাড়িতে মৃত্যু সংবাদ পৌঁছলে কান্নায় ভেঙে পড়েন স্ত্রী, দুই মেয়ে, চার ছেলে, নাতি-নাতনি-সহ গোটা পরিবার। ছোট ছেলে বিশ্বসারথি দাস বলেন, ‘‘বাবাকে যে এ ভাবে হারাতে হবে ভাবিনি।’’
(জরুরি ঘোষণা: কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের জন্য কয়েকটি বিশেষ হেল্পলাইন চালু করেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। এই হেল্পলাইন নম্বরগুলিতে ফোন করলে অ্যাম্বুল্যান্স বা টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত পরিষেবা নিয়ে সহায়তা মিলবে। পাশাপাশি থাকছে একটি সার্বিক হেল্পলাইন নম্বরও।
• সার্বিক হেল্পলাইন নম্বর: ১৮০০ ৩১৩ ৪৪৪ ২২২
• টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-২৩৫৭৬০০১
• কোভিড-১৯ আক্রান্তদের অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-৪০৯০২৯২৯)