অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় নব জোয়ার কর্মসূচীতে নেই ঝাড়গ্রামের নেতা। — ফাইল চিত্র।
অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সফর সূচি থেকে সম্ভবত বাদ পড়ল নেতাই!
আগামী ২৬ মে শুক্রবার নবজোয়ার কর্মসূচিতে ঝাড়গ্রাম জেলায় আসছেন অভিষেক। তবে তাঁর একদিনের কর্মসূচি অতি সংক্ষিপ্ত। এখনও পর্যন্ত খবর, অন্য জেলায় যেভাবে অভিষেক ধর্মস্থান দর্শন করেছেন, ঝাড়গ্রামে যাত্রাপথে কোনও মন্দির, গরাম থান অথবা জাহের থান দর্শন সূচিতে নেই। আপাত চূড়ান্ত সফর সূচি দেখে তৃণমূলের অন্দরেই চলছে জল্পনা। তবে কি জঙ্গলমহলের সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতে সতর্ক পদক্ষেপ করছেন অভিষেক?
বেশ কয়েক বছর আগে বেলপাহাড়ির জনসভায় কিসেনজির মৃত্যু নিয়ে অভিষেকের মন্তব্যে সমালোচনা হয়েছিল। ‘কিসেনজিকে মেরে’ জঙ্গলমহলে শান্তি স্থাপনের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে অসতর্ক মন্তব্য করেছেন অভিষেক, এমনই দাবি ছিল বিরোধীদের। এ বার তৃণমূলের ঝাড়গ্রাম জেলা নেতৃত্ব চেয়েছিলেন, অভিষেক লালগড়ের নেতাই গ্রামে নব জোয়ারে আসুন। প্রস্তাবিত প্রাথমিক সূচিও তৈরি হয়েছিল। তৃণমূলের একাংশ দলের অন্দরে সওয়াল করেছিলেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর আজ পর্যন্ত নেতাইয়ে তাঁর কর্মসূচি হয়নি। শুভেন্দু অধিকারী বিজেপিতে যাওয়ার পর নেতাই নিয়ে তৃণমূল-বিজেপি দড়ি টানাটানিও চলছে। নেতাইয়ের জখমদের একাংশ উপযুক্ত চাকরির দাবিতে সরব। শাসকের বিরুদ্ধে ক্ষোভের চোরাস্রোতের পাশাপাশি এটাও সত্যি যে নেতাইয়ের একাংশ বাসিন্দা এখনও ‘ব্যক্তি শুভেন্দু’ সম্পর্কে দুর্বল। ফলে, নেতাইয়ে অভিষকের পদার্পণ জরুরি ছিল, মনে করছেন তৃণমূলের একাংশ। তবে শেষমেশ নেতাইকে ব্রাত্য রেখেই জেলায় অভিষেকের সফর সূচি চূড়ান্ত হয়েছে বলে খবর।
ঝাড়গ্রামের বিধায়ক তথা মন্ত্রী বিরবাহা হাঁসদা মানছেন, ‘‘একশো কিলোমিটারের কর্মসূচিতে নেতাই থাকলে অন্য কর্মসূচি বাদ পড়ে যেত। সব দিক খতিয়ে দেখেই সূচি তৈরি হয়েছে।’’ জেলা তৃণমূল সভাপতি দুলাল মুর্মুও বলছেন, ‘‘বেলপাহাড়ি থেকে নেতাই হয়ে নয়াগ্রাম পর্যন্ত কর্মসূচি ঠিক করা হয়েছিল। কিন্তু সময় সংক্ষেপে কর্মসূচি কাটছাঁট করা হয়েছে। বিভিন্ন ধর্মীয় স্থানেও যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সেগুলি বাতিল করা হয়েছে।’’
তৃণমূল ও আই প্যাক সূত্রে জানা গিয়েছে, জেলার চারটি বিধানসভার মধ্যে বিনপুর, ঝাড়গ্রাম ও গোপীবল্লভপুর এই তিনটি ছুঁয়ে হবে অভিষেকের নব জোয়ার। নয়াগ্রাম বিধানসভায় কর্মসূচি নেই। অথচ নয়াগ্রামের বিধায়ক হলেন জেলা তৃণমূল সভাপতি দুলাল মুর্মু। এখানে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বও প্রকট। দুলালের সঙ্গে জেলা তৃণমূলের প্রাক্তন এক কো-অর্ডিনেটরের ‘দূরত্ব’ আসন্ন পঞ্চায়েত ভোটে প্রভাব ফেলবে বলে আশঙ্কা।
তৃণমূল সূত্রের খবর, আগে ঠিক ছিল জেলায় দু’দিন থাকবেন অভিষেক। কিন্তু পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে একদিনের কর্মসূচি হবে জেলায়। সব মিলিয়ে ঝাড়গ্রামে অভিষেক ১০৯ কিমি সফর করবেন। আগামী শুক্রবার পুরুলিয়ার বান্দোয়ান থেকে বিনপুর বিধানসভার বেলপাহাড়িতে পৌঁছবেন অভিষেক। বিকেল ৩টে নাগাদ বেলপাহাড়ির ইন্দিরাচকে সাঁওতাল, কুড়মি, ভূমিজ, মুন্ডা লোকসংস্কৃতির নৃত্যের মাধ্যমে অভিষেককে স্বাগত জানানো হবে। ইন্দিরাচক থেকে বেলপাহাড়ি থানা পর্যন্ত কিলোমিটার খানেক রাস্তায় জনসংযোগ কর্মসূচি করবেন অভিষেক। বিকেল সাড়ে ৪টা নাগাদ ঝাড়গ্রাম বিধানসভার বিনপুরের দহিজুড়ি বাজার এলাকায় আধঘন্টা মতো রোড শো হবে। তারপর গোপীবল্লভপুর বিধানসভার অন্তর্গত ঝাড়গ্রাম গ্রামীণ ব্লকের গজাশিমূল মাঠে জনসভা করবেন অভিষেক। সেখানে জেলার ৪টি বিধানসভার ৭৯টি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকা থেকে লোকজন আসবেন।
তারপর মানিকপাড়ায় হবে গ্রাম পঞ্চায়েত ভিত্তিক অধিবেশন। পঞ্চায়েতের প্রার্থী বাছাইয়ে সেখানেই মতামত নেওয়া হবে। রাতে মানিকপাড়া হাইস্কুল মাঠে নৈশভোজ ও রাত্রিযাপন। শনিবার পশ্চিম মেদিনীপুর রওনা দেবেন অভিষেক। জেলা সভাপতি দুলাল জানাচ্ছেন, সূচিতে না থাকলেও বেলপাহাড়ি থেকে দহিজুড়ির মাঝে পড়িহাটিতেও জমায়েত থাকবে। সেখানে থামতে পারেন অভিষেক। দুলাল আরও জানান, কষানো দিশি মুরগি, শালপাতায় মোড়া খাসির মাংসের মতো কিছু স্থানীয় উপাদেয় খাবার থাকবে নৈশভোজে।