বিরবাহা হাঁসদার ফেসবুক পেজ আগে এমন ছিল (বাঁ দিকে)। হ্যাক হওয়ার পর পেজটি হয়েছে এমনই (ডান দিকে)। নিজস্ব চিত্র
প্রতিমন্ত্রী বিরবাহা হাঁসদার ফেসবুক পেজটি হ্যাক হয়েছে। ঝাড়গ্রাম সাইবার ক্রাইম থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন বিরবাহা। তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ।
জেলা পুলিশ সুপার অরিজিৎ সিনহা বলছেন, ‘‘মন্ত্রীর অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত চলছে।’’ পুলিশের অনুমান, এ কাজ বড় মাপের কোনও হ্যাকারের। তদন্তে বিধাননগর সাইবার ক্রাইম শাখার বিশেষজ্ঞদের সাহায্য নেওয়া হচ্ছে। বিষয়টি ফেসবুক কর্তৃপক্ষকেও জানিয়েছেন প্রতিমন্ত্রী। পুলিশের তরফেও ফেসবুক পোর্টালে অভিযোগ করা হয়েছে।
প্রতিমন্ত্রীর ফেসবুক পেজের ফলোয়ার ও লাইকারের সংখ্যা সব মিলিয়ে প্রায় ২৬ হাজার। বিরবাহার বিভিন্ন কর্মসূচির ছবি ও তথ্য নিয়মিত পোস্ট করা হয় ওই পেজ-এ। তারপরও কী ভাবে পেজটি হ্যাক হয়ে গেল তা নিয়ে উদ্বিগ্ন খোদ প্রতিমন্ত্রী। বিরবাহা বলছেন, ‘‘ঝাড়গ্রাম সাইবার ক্রাইম থানায় অভিযোগ দায়ের করেছি। যাঁরা এমন ঘটনায় যুক্ত তাঁদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী কড়া পদক্ষেপের দাবি করছি। আমার রাজনৈতিক ও সামাজিক কাজে যাঁদের সমস্যা হচ্ছে তাঁরাই এমন কুকর্ম করেছেন।"
পঞ্চায়েত ভোটের আগে প্রতিমন্ত্রীর সমাজমাধ্যম পেজ হ্যাক হওয়ার পিছনে রাজনৈতিক ঈর্ষাও থাকতে পারে বলে মনে করছে বিরবাহার ঘনিষ্ঠ মহল। কারণ দলে ও প্রশাসনিক স্তরে বিরবাহার গুরুত্ব ক্রমাগত বেড়ে চলেছে। জঙ্গলমহলের জনপ্রতিনিধি ও মন্ত্রীদের মধ্যে একমাত্র বিরবাহার ফেসবুক পেজটি ব্লু-টিক মার্ক পাওয়া।
২০২১ সালের বিধানসভা ভোটে বিরবাহা ঝাড়গ্রামে জেতার পর তাঁর ফেসবুক পেজ হয়। প্রতিমন্ত্রী হওয়ার পর পেজটি ব্লু টিক মার্ক পায়। দলের তরফে দু’জন পেজটির দেখাশোনা করেন। সূত্রের খবর, গত ১৯ এপ্রিল পেজটি হ্যাক হয়ে যায়। প্রথমে মৌখিক ভাবে সাইবার ক্রাইম থানার পুলিশকে জানান প্রতিমন্ত্রী। দেখা যায় পেজ-এ বিরবাহার নাম উড়ে গিয়ে কেবল ‘হাঁসদা’ রয়েছে। আগে পেজটিতে বিরবাহার পরিচয় ছিল ‘পলিটিশিয়ান’। হ্যাক হয়ে সেটা হয়ে যায় ‘ব্লগার’। পুলিশের তরফে ফেসবুক পোর্টালে অভিযোগ জানানো হয়। তারপর পেজটি বন্ধ হয়ে যায়। এরপরই বুধবার পেজটি ফের অ্যাকটিভ হয়। দেখা যায়, পেজ-এর নাম পরিবর্তিত হয়ে গিয়ে একটি জাপানি নাম দেখা যাচ্ছে। বিরবাহার প্রোফাইল ছবি উধাও। তবে কভার ছবিতে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বিরবাহার নৃত্যরত ছবিটি রয়েছে। হ্যাকাররা পেজটির অ্যাডমিনকে রিম্যুভ করে দিলেও নোটিফিকেশন আসেনি। অথচ অ্যাডমিনের টু’স্টেপ ভেরিফিকেশন করা ছিল। পুলিশের অনুমান, পাকা মাথার হ্যাকার গোষ্ঠী কাজটি করেছে। পেজটির ইউআরএল (ইউনিফর্ম রিসোর্স লোকেটর) পরিবর্তন করে দিয়েছে হ্যাকাররা।
এর জন্য পরোক্ষে বিরোধীদের দায়ী করেছেন জেলা তৃণমূলের সভাপতি দুলাল মুর্মু। দুলালের দাবি, ‘‘ঘটনাটি উদ্বেগজনক। এর পিছনে বিরোধীদের চক্রান্তও থাকতে পারে।’’ জেলা বিজেপির সহ-সভাপতি দেবাশিস কুণ্ডু পাল্টা বলছেন, ‘‘তৃণমূল সবেতেই বিজেপির ভূত দেখছে। শাসকদলে এখন মুষল পর্ব চলছে। ঈর্ষান্বিত হয়ে দলের লোকেরাই এমন কাজ করেছে কি-না সেটা দুলালবাবুরা খতিয়ে দেখুন।’’