অধরা খড়্গপুর, ভোটের ফলে হতাশা শাসকদলে

এ বারও অধরা থেকে গেল খড়্গপুর। শুধু তাই নয়, আগের তুলনায় আসনও কমল তৃণমূলের। আর সেখানে থাবা বসাল বিজেপি। স্বভাবতই হতাশ তৃণমূল নেতৃত্ব। ২০১০ সালের খড়্গপুর পুরসভায় ৩৫টি আসনের মধ্যে ১৫টি পেয়েছিল তৃণমূল। তখনও রাজ্যে শাসন ক্ষমতায় বামফ্রন্ট। এ বার তৃণমূল। যাতে এতটুকুও ফাঁক না থাকে সে জন্য দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক সুব্রত বক্সী, শিক্ষা মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়, জলসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্র, সাংসদ শুভেন্দু অধিকারীর মতো রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের পাশাপাশি দেব, দেবশ্রী, সন্ধ্যা রায়ের মতো তারকাদেরও প্রচারে এসেছেন।

Advertisement

সুমন ঘোষ

মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ২৯ এপ্রিল ২০১৫ ০১:১৪
Share:

জয়ের পর তৃণমূল প্রার্থী দেবাশিস চৌধুরী। — নিজস্ব চিত্র।

এ বারও অধরা থেকে গেল খড়্গপুর। শুধু তাই নয়, আগের তুলনায় আসনও কমল তৃণমূলের। আর সেখানে থাবা বসাল বিজেপি। স্বভাবতই হতাশ তৃণমূল নেতৃত্ব।

Advertisement

২০১০ সালের খড়্গপুর পুরসভায় ৩৫টি আসনের মধ্যে ১৫টি পেয়েছিল তৃণমূল। তখনও রাজ্যে শাসন ক্ষমতায় বামফ্রন্ট। এ বার তৃণমূল। যাতে এতটুকুও ফাঁক না থাকে সে জন্য দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক সুব্রত বক্সী, শিক্ষা মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়, জলসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্র, সাংসদ শুভেন্দু অধিকারীর মতো রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের পাশাপাশি দেব, দেবশ্রী, সন্ধ্যা রায়ের মতো তারকাদেরও প্রচারে এসেছেন। তবু গণনা শেষে দেখা গেল, কমেছে ৪টি আসন।

পরিসংখ্যানের নিরিখে চারটি হলেও তৃণমূলের পরাজয় হয়েছে আরও বেশি। জয় ধরে রাখা যায়ানি ৬টি ওয়ার্ডে। দীর্ঘদিনের কাউন্সিলর ময়না চট্টোপাধ্যায় (২ নম্বর) বা বাবলা সেনগুপ্ত (১ নম্বর) নিজেদের স্ত্রীকে প্রার্থী করেছিলেন। ময়নাবাবুর স্ত্রী শিপ্রাদেবী হেরেছেন ৫৬৬ ও বাবলাবাবুর স্ত্রী অনিমাদেবী হেরেছেন ৫১৮ ভোটে। সব মিলিয়ে ১, ২, ৫, ১৮, ২৬ ও ৩৩ ওয়ার্ড হেরেছে তৃণমূল। পরিবর্তে কংগ্রেসকে হারিয়ে জয়ী হয়েছে ২০ নম্বর ওয়ার্ড এবং ৩ নম্বরে সিপিআইয়ের জয়ী প্রার্থী তৈমুর আলি খানকে দলে নিয়ে সেই আসনেও জয় পেয়েছে। ফলে বোঝা যায় খড়্গপুর পুরসভায় আসলে শাসক তৃণমূল পিছিয়ে গিয়েছে অনেকটাই।

Advertisement

কিন্তু কেন? দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, হারের পিছনে প্রধান কারণ তিনটি। এক, পুলিশের প্রতি নির্ভরতা, দুই, এলাকায় বহিরাগত ঢোকানো, তিন, গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব।

এ ছাড়া দল মনে করছে রাজ্যে ক্ষমতায় আসার আগে কাউন্সিলরেরা যে ভাবে জনসংযোগ ও উন্নয়নের উপর জোর দিতেন, এখন আর ততটা নজর দেন না। অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস ভোটারদের সঙ্গে দুরত্ব তৈরি করেেছ। দুর্নীতিও রয়েছে।

অন্যদিকে শহরের অবাঙালি ভোটারদের মন জয় দূরে অস্ত তাঁদের কাছেই পৌঁছতে পারেনি তৃণমূল। যেখানে অবলীলায় ঢুকেছে বিজেপি।

দলের এক নেতার কথায়, “সকলের আশা ছিল, দুর্বল এলাকার বুথগুলিতে পুলিশি সাহায্যে ছাপ্পা দেওয়া যাবে। আগে ঝাড়গ্রাম ও মেদিনীপুর পুরসভার ক্ষেত্রে যেমনটা সকলের শোনা ছিল। কিন্তু বিরোধী দল শক্ত হওয়ায় খড়্গপুরে পুলিশ সে ঝুঁকি নেয়নি।’’ ফলে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে হারতে হয়েছে। নেতার আক্ষেপ উল্টে বহিরাগতদের ভিড় দেখে স্থানীয় মানুষও ক্ষিপ্ত হয়ে তৃণমূলের বিরুদ্ধেই ভোট দিয়েছে।”

তৃণমূলের এক জয়ী প্রার্থীর কথায়, স্পষ্ট গোষ্ঠী কোন্দলের তত্ত্ব, “আমাকে হারাতে দলেরই দুই নেতা ঘুরে ঘুরে বস্তির মানুষকে, ক্লাবকে টাকা দিয়েছে।’’ গত পুরসভার ৩৫ আসনের মধ্যে ১২টি ছিল কংগ্রেসের। ৬ টি বাম, বিজেপি ও নির্দল পেয়েছিল ১টি করে। আর তৃণমূল পেয়েছিল ১৫টি। এ বার সেখানে কংগ্রেস ও তৃণমূল ১১টি করে পেয়েছে। বিজেপি এক লাফে বেড়ে হয়েছে ৭টি। বামফ্রন্ট অবশ্য নিজেদের আসন ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছে। ফল জানার পর খড়্গপুর পুরসভা নিয়ে দলের জেলা সভাপতি দীনেন রায়ের সংক্ষিপ্ত বক্তব্য, “ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা হবে।’’

খড়্গপুরের ফলে কিছুটা হতাশ হলেও জেলার বাকি ৫টি পুরসভার ফলের ক্ষেত্রে তৃণমূল নেতৃত্ব খুশি। ২০১০ সালে তৃণমূল এককভাবে খড়ার পুরসভার দখল নিয়েছিল। আর বিজেপি-র সঙ্গে জোট করে দখলে রেখেছিল রামজীবনপুর। ক্ষীরপাই, চন্দ্রকোনা ও ঘাটাল ছিল বামফ্রন্টের। কিন্তু ২০১১ সালে রাজ্যে ক্ষমতায় আসার পরই দল বদলের হিড়িক পড়ে। রামজীবনপুর পুরসভার ১১টি ওয়ার্ডে মহাজোট গড়ে যেখানে পুরসভার দখল নিয়েছিল, সেখানে এককভাবে জোটের কাউন্সিলরদেরই নিজেদের দিকে টেনে নেয় তৃণমূল। শেষ পর্যন্ত সিপিএম, কংগ্রেস ও বিজেপি থেকে নিজেদের ৫ থেকে ৯ তে নিয়ে যায় তৃণমূল। এ বার ৯টি ওয়ার্ড ধরে রাখা দূরের কথা, সংখ্যালঘু হয়ে গিয়েছে তৃণমূল। বিরোধী জোট পেয়েছে ৬টি। সেখানে তৃণমূল পেয়েছে মাত্র ৫টি আসন। যদিও একে হার বলে মানতে নারাজ তৃণমূল। জেলা সভাপতি দীনেন রায়ের কথায়, “একক শক্তি হিসাবে আমাদের ক্ষমতা বেড়েছে।’’ কিন্তু অন্য দল ভাঙিয়ে নিজেদের শক্তি বৃদ্ধি করেও কেন জয় মিলল না? তার কোনও সদুত্তর মেলেনি নেতাদের কাছে।

অনেকেই বলছেন বাম আমলে যাঁদের উপর ভরসা করেছিলেন মানুষ, ক্ষমতায় আসার পরেই তাঁদের আঙুল ফুলে কলাগাছ। চূড়ান্ত দুর্নীতি দেখে তাঁদের সরিয়ে দিতেও দ্বিধা করেননি মানুষ। চন্দ্রকোনাতে অবশ্য ফল হয়েছে ভাল। ১২টির মধ্যে ১১টি পেয়েছে তৃণমূল। ১৭ আসনের ঘাটালে তৃণমূল ৪টি আসন পেয়েছিল। পরে অন্যদলের কাউন্সিলর যোগ দেওয়ায় দলীয় কাউন্সিলরের সংখ্যা বেড়ে হয় ১০। এ বারও ১০টি আসনই ধরে রাখতে পেরেছে তৃণমূল। খড়ারে নির্বাচনের সময় ১০টি আসনের মধ্যে তৃণমূল পেয়েছিল ৬টি। বাকি চারটি বামফ্রন্ট। পরবর্তীকালে কাউন্সিলর ভাঙিয়ে নিজেদের পক্ষে ৯ জনকে নিয়ে চলে আসে। এবারও নির্বাচনে তৃণমূল ৬টি-র বেশি আসন পেল না। ১০ আসনের ক্ষীরপাইয়ে নির্বাচনের সময় বামফ্রন্ট ৭টি আসন পেয়ে পুরসভার ক্ষমতা দখল করলেও পরবর্তীকালে সিপিএম থেকে ৫জন কাউন্সিলর ভাঙিয়ে তৃণমূল ৮ হয়। এ বার যদিও ৮টি আসন মেলেনি। তৃণমূলকে আটকে থাকতে হয়েছে ছয়েই। দলের এক নেতার কথায়, “এই ফলেই যদি তুষ্ট থাকতে হয় তাহলে শাসক দল হিসাবে এত প্রচার, পুলিশের সাহায্য, এত খরচ, বাইরে থেকে লোক ঢোকানোর কী দরকার ছিল।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement