দ্বন্দ্ব, হুলের ক্ষত সারান নেত্রী, দাবি

ভরসা তাঁকেই। তাঁর কথা বলেই ভোট চাইছেন প্রার্থীরাও। কিন্তু তাতে চিঁড়ে ভিজছে না। নারদ কাণ্ডে ভোটারদের কাছে জবাবদিহি করতে করতে পরিত্রাহি অবস্থা তৃণমূলের প্রার্থী আর দলীয় কর্মী-সমর্থকদের। তাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই বিষয়ে কিছু বলুন, চাইছেন সব স্তরের নেতারাই। দলের কোন্দল রয়েছেই। ঘাটাল মহকুমায় এই দুই সমস্যাই এখন প্রকট।

Advertisement

অভিজিৎ চক্রবর্তী

ঘাটাল শেষ আপডেট: ২৯ মার্চ ২০১৬ ০১:১১
Share:

ভরসা তাঁকেই। তাঁর কথা বলেই ভোট চাইছেন প্রার্থীরাও। কিন্তু তাতে চিঁড়ে ভিজছে না। নারদ কাণ্ডে ভোটারদের কাছে জবাবদিহি করতে করতে পরিত্রাহি অবস্থা তৃণমূলের প্রার্থী আর দলীয় কর্মী-সমর্থকদের। তাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই বিষয়ে কিছু বলুন, চাইছেন সব স্তরের নেতারাই। দলের কোন্দল রয়েছেই।

Advertisement

ঘাটাল মহকুমায় এই দুই সমস্যাই এখন প্রকট। তাই পূর্ব পরিকল্পনা না থাকলেও ভোটের আগে ১ এপ্রিল চন্দ্রকোনায় সভা করতে আসার কথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। দলের কোন্দলের কথা টের পেয়ে গোটা জেলা চষে বেড়াচ্ছেন দলনেত্রী। ঘাটালও যে ব্যতিক্রম নয়, তার আঁচও পেয়েছেন দলনেত্রীও। নেত্রীর আসার কথা শুনে দলীয় কর্মীদের দাবি, দিদি এসে যেন দলের কোন্দলে রাশ টানেন। পাশাপাশি নারদা কাণ্ড নিয়েও দলের অবস্থানও স্পষ্ট করুন তিনি।

ঘাটাল মহকুমায় তিনটি বিধানসভা-ঘাটাল, চন্দ্রকোনা ও দাসপুর। দলীয় সূত্রে খবর, তিনটি বিধানসভাতে কোন্দলই প্রধান সমস্যা। দাসপুর বিধানসভায় দলীয় প্রার্থী মমতা ভুঁইয়াকে নিয়ে দলের কোন্দল একেবারে নগ্ন হয়ে পড়েছে। ঘাটাল বিধানসভার প্রার্থী শঙ্কর দোলইকে নিয়ে তালিকা প্রকাশের আগে ক্ষোভ থাকলেও ঘোষণার পর পরিস্থিতি কিছুটা বদলেছে। দলেরই প্রাক্তন যুব সহ-সভাপতি তন্ময় দোলই শাসক প্রার্থীর বিরুদ্ধে গোঁজ প্রার্থী হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নেমেছেন। আর চন্দ্রকোনায়, সিপিএম ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিয়েই ছায়া দোলই ফের দলের প্রার্থী মনোনীত হওয়ায় বিষয়টি মেনে নিতে পারেনি দলেরই কর্মীরা। রাজ্যে ক্ষমতায় থাকলেও ভোটের কয়েকদিন আগেও তিনটি বিধানসভাতেই তৃণমূল প্রার্থীদের যে ভাল রকমের বেগ পেতে হচ্ছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

Advertisement

দলীয় সূত্রের খবর, দলের দাসপুর-২ ব্লক সভাপতি তপন দত্ত-সহ তাঁর অনুগামীরা প্রথমের দিকে প্রার্থীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেছিলেন। পরে তপন দত্ত নিজের পদ ধরে রাখতে ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে দলীয় প্রার্থীর হয়ে প্রচারে নামেন। কিন্তু মুখে বললেও ওই বিধানসভায় কোন্দল বন্ধ হওয়া তো দূর, তা যে বড় বিড়ম্বনায় ফেলতে পারে তা মালুম হয়েছে গত শনিবারই। দলের তারকা সাংসদ দেব যখন সে দিন সোনাখালিতে সভা করতে গিয়েছিলেন, তখন মাঠে কেউ ছিলই না। তাঁকে দলীয় কার্যালয়ে অপেক্ষা করতে হয়েছিল আধ ঘণ্টা। ব্লক সভাপতি তপন দত্তর দাবি ছিল, ‘চড়া রোদে লোক আসতে পারেনি’। আর মুকুল রায় বলেছিলেন, ‘‘সময়টা ঠিক করে জানানো না হওয়াতেই এই সমস্যা।’’ এ যেকোন্দলেরই ফল তা বলার অবকাশ আর রাখে না।

অন্য দিকে ঘাটালে গোঁজ প্রার্থীকে শঙ্কর দোলই-সহ দলের কর্মীরা গুরুত্ব না দিলেও তিনিও যে দলের একাংশের ভোট পাবেন, সে বিষয়ে সন্দেহ নেই। সেটাই উদ্বেগ বাড়াচ্ছে শঙ্কর শিবিরের। শঙ্কর দোলইয়ের এক অনুগামী বললেন, “দলেরই একাংশ এবং জেলা পরিষদের দুই কর্মাধ্যক্ষের প্রত্যক্ষ মদতেই তন্ময় দোলই এই সাহস পেয়েছেন।’’ চন্দ্রকোনায় দলের প্রার্থী ছায়া দোলই পদে পদে টের পাচ্ছেন ডানপন্থী দলে সংগঠনের অবস্থা। যাঁকে না নিয়ে চলবে-তাঁরই গোঁসা। ফলে ছায়া দেবী বুঝে উঠতে পাচ্ছেন না তিনি কী করবেন। যদিও ছায়াদেবীর কথায়, “কর্মীরাই আমাকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। মাথার উপর দিদির হাত রয়েছে।’’

এই পরিস্থিতিতে ১ এপ্রিল চন্দ্রকোনার ক্ষীরপাই সংলগ্ন বুড়ির পুকুরের মাঠে মুখ্যমন্ত্রীর সভা হওয়ার কথা। সেই সভায় মহকুমার সব বিধানসভার কর্মীদেরই যাওয়ার জন্য দলের জেলা নেতাদের কড়া নির্দেশও রয়েছে। স্বয়ং দলনেত্রী ঘাটালের জনসভায় এসে কর্মীদের দাবিকে মান্যতা দেন না তাঁর স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে সভা সেরে কপ্টারে উড়ে চলে যান-এখন সেটাই দেখার।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement