—প্রতীকী চিত্র।
ধাক্কা লেগেছিল পঞ্চায়েত এবং লোকসভা ভোটে। রাজ্যে তৃণমূল ভাল ফল করলেও বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর জেলা পূর্ব মেদিনীপুরে তাদের ভাল রকমের টক্কর দিয়েছে বিজেপি। জেলার দুই লোকসভা আসনও গিয়েছে গেরুয়া শিবিরের দখলে। সেই ধাক্কা সামলে পূর্ব মেদিনীপুরে সম্প্রতি একাধিক গুরুত্বপূর্ণ সমবায় সমিতিতে তৃণমূলের সমর্থিত প্রার্থীরা জয়ী হতেই আগামী বিধানসভায় ঘুরে দাঁড়াতে চাইছে ঘাসফুল শিবির। বছর ঘুরলে রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচনে শুভেন্দু ‘গড়ে’ নিজেদের পুরনো দুর্গ পুনরুদ্ধারে আশার আলো দেখছেন তৃণমূলের নেতা কর্মীরা।
এ বছর জানুয়ারিতে কাঁথি সমবায় ব্যাঙ্কে এবং গত সপ্তাহে কাঁথি কার্ড ব্যাঙ্কের নির্বাচনে বিপুলভাবে জয়ী হয়েছে তৃণমূল। কাঁথি সমবায় ব্যাঙ্কের ১০৮টির মধ্যে ১০০টি এবং কার্ড ব্যাঙ্কে ৭৮টি আসনের সবকটিতে জয়ী হয়েছে তৃণমূল সমর্থিতরা। তাৎপর্যপূর্ণভাবে, দুটো ব্যাঙ্কেই দীর্ঘদিন চেয়ারম্যান ছিলেন শুভেন্দু। কাঁথি সমবায় ব্যাঙ্কে ভোটার ছিলেন গোটা জেলার মানুষ। কার্ড ব্যাঙ্কে কাঁথি এবং এগরা মহকুমার বাসিন্দারা ভোট দিয়েছেন। শেষবার এই ব্যাঙ্কে ৩৫ শতাংশ ভোটার ভোট দিয়েছিলেন। এবার তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৪ শতাংশ। এর পিছনে দীর্ঘ দিন ধরে নিয়ন্ত্রক শুভেন্দুর বিরুদ্ধে ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে বলে মনে করছে শাসক দল।
এমন সাফল্যে উজ্জীবিত হয়েছে ঘাসফুল শিবির। দুই সমবায়ের ভোটের ফলাফলের পরিপ্রেক্ষিতে জেলার সমস্ত নেতৃত্ব এবং বিধায়কদের এখন থেকেই আগামী বিধানসভা নির্বাচনের জন্য ঝাঁপিয়ে পড়তে বলা হয়েছে। ভোটার তালিকা সংশোধন থেকে শুরু করে সরকারি সুযোগ-সুবিধা সাধারণ মানুষ কীভাবে পাচ্ছেন, তা নিয়ে খোঁজ খবর নিতে জনসংযোগ তৈরির কৌশল ঠিক করে দিচ্ছে শাসকদলের ভোটকুশলী সংস্থা। তৃণমূলের জেলা (কাঁথি) সভাপতি পীযূষকান্তি পন্ডা বলেন, ‘‘গত ডিসেম্বরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জেলা সফরে এসেছিলেন। তিনি আমাদের ভোকাল টনিক দিয়ে গিয়েছিলেন। তারপর থেকেই আমরা উজ্জ্বীবিত। আমরা যে হতাশা থেকে ঘুরে দাঁড়িয়েছি, তার প্রমাণ পরপর দুটো সমবায় ব্যাঙ্কের নির্বাচনে নিরঙ্কুশ জয়।’’
উল্লেখ্য, ২০০৮ সালে প্রথম পূর্ব মেদিনীপুরে জেলা পরিষদ দখল করেছিল তৃণমূল। ২০১১ সাল থেকে সাংসদ, বিধায়ক, পুরসভা, পঞ্চায়েত নির্বাচনে প্রতিবার জিতেছে শাসক দল। তবে, সে সময় তৃণমূলে ছিলেন শুভেন্দু অধিকারী। ২০২০ সালে তিনি বিজেপিতে যোগ দেন। তারপর গত বিধানসভা নির্বাচনে ১৬টির মধ্যে সাতটি, ৭৮টি গ্রাম পঞ্চায়েত এবং চারটি পঞ্চায়েত সমিতি দখল করে পদ্ম শিবির। গত বছর লোকসভা নির্বাচনেও জেলার ১৫টি বিধানসভায় এগিয়ে রয়েছে পদ্ম শিবির। তাই এখন ‘শুভেন্দুর হাত’ থেকে সমবায় ছিনিয়ে খুশি তৃণমূল।
তৃণমূলের রাজ্য সম্পাদক তথা সমবায় সেলের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা আশিস চক্রবর্তী বলেন, ‘‘জেলার জনসংযোগের অন্যতম ভরকেন্দ্র হচ্ছে সমবায়। এই ভোটে স্পষ্ট আগামী বিধানসভা নির্বাচনে আমরা হারানো আসন পুনরুদ্ধার করব।’’ যদিও, সমবায়ের ফলাফলে গুরুত্ব দিতে রাজি নয় গেরুয়া শিবির। বিজেপির জেলা (কাঁথি) সাধারণ সম্পাদক চন্দ্রশেখর মণ্ডল বলেন, ‘‘সমবায় নির্বাচনে মানুষ গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করতে পারেনি। এই ফলাফল নিয়ে তৃণমূল উজ্জীবিত হতে পারে। বিজেপি এতটুকু চিন্তিত নয়।’’