প্রতীকী ছবি
পথ দুর্ঘটনাকে কেন্দ্র করে তৃণমূল-বিজেপি চাপানউতোর শুরু হয়েছে কেশিয়াড়িতে। উঠে এসেছে সালিশি সভা ও পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ।
শুক্রবার রাতে দুর্ঘটনাটি ঘটে বেলদা-কেশিয়াড়ি রাজ্য সড়কে। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় মণিমালা দে-র (৪৩)। তিনি কেশিয়াড়ির কুলাসেনির বাসিন্দা ছিলেন। ঘটনার প্রতিবাদে পথ অবরোধ হলে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃতার স্বামী গৌরীশঙ্কর এলাকায় তৃণমূল সমর্থক বলে পরিচিত। তাঁর ছেলে মানস কটকে পড়াশোনা করেন। তিনি গত ৩ মে বাড়ি ফিরেছিলেন। পুলিশ তাঁকে আলাদা থাকার পরামর্শ দেয়। বাড়ির একটি ঘরে আলাদা থাকছিলেন তিনি। এলাকার আশাকর্মীরা এসে তাঁর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে যান। অভিযোগ, বাইরের রাজ্য থেকে ফেরা ছেলেকে বাড়িতে কেন রাখা হচ্ছে-এই অভিযোগ তুলে গৌরীশঙ্করের পরিবারকে হেনস্থা শুরু করেন কয়েকজন। মানসকে গ্রামের স্কুলের কোয়রান্টিন কেন্দ্রে থাকতে বলা হয়। সে কথা না শোনায় গত বুধবার গৌরীশঙ্করকে গ্রামের শিবমন্দিরে ডেকে সালিশি সভা বসিয়ে জরিমানা করা হয় বলে অভিযোগ। শুক্রবার রাতে তাঁকে ফের তুলে নিয়ে গিয়ে মারধর করা হয়।
স্বামীকে মারধরের কথা পুলিশে জানাতে গ্রামের এক বাসিন্দার বাইকে চেপে স্ত্রী মণিমালা ও ছেলে মানস বেলদা-কেশিয়াড়ি রাজ্য সড়ক ধরে থানায় আসছিলেন। তখন গ্রামেরই কয়েকজন তাঁদের পিছু নেয় বলে অভিযোগ। সেই সময়েই বালিভর্তি কোনও ডাম্পার ধাক্কা দেয় বাইকটিকে। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় মণিমালার।
গৌরীশঙ্করের দাবি, ‘‘শুক্রবার রাতে আমাকে তুলে নিয়ে ফের সালিশি সভা বসানো হয়। আমায় লাথি-ঘুষি মারা হয়। বলা হয় মন্দির তৈরির জন্য ২৫ হাজার টাকা বা ইট দিতে হবে। সেখানে এলাকার কয়েকজন মাতব্বর ও বিজেপি কর্মীরা ছিল। তৃণমূল করি বলেই এই অত্যাচার।’’ তাঁর অভিযোগ, সঞ্জিত দে-সহ এলাকার বেশ কয়েকজন বিজেপি কর্মী এই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত। এই ঘটনায় পুলিশি নিস্ক্রিয়তার অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘‘বুধবার সালিশি সভার কথা পুলিশকে জানিয়েছিলাম। আশ্বাস মিললেও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। শুক্রবার আমাকে যখন মারধর করা হচ্ছে তখন কেশিয়াড়ি থানার ল্যান্ডলাইনে একাধিকবার ফোন করেও কোনও সাহায্য মেলেনি। ভিলেজ পুলিশও ফোন ধরেননি।’’
বিজেপি অবশ্য রাজনৈতিক যোগ মানতে নারাজ। স্থানীয় বিজেপি কর্মী সঞ্জিতের বক্তব্য, ‘‘আমি বিজেপির সঙ্গে যুক্ত ঠিকই। কিন্তু এই ঘটনার সঙ্গে রাজনীতির যোগ নেই। এটি সম্পূর্ণ গ্রাম্য বিবাদ।’’ তৃণমূলের ব্লক সভাপতি অশোক রাউতও এর সঙ্গে সরাসরি রাজনীতির যোগ নেই বলেই জানিয়েছেন। তাঁর মতে, ‘‘এটি মধ্যযুগীয় বর্বরতার নিদর্শন। সেই কুসংস্কারকে মদত দিচ্ছে বিজেপি। পরিবারটিকে গ্রামের মানুষের অসহযোগিতা করা ঠিক হয়নি। অভিযুক্তদের শাস্তি হওয়া উচিত।’’
পুলিশও নিস্ক্রিয়তার অভিযোগ মানেনি। তাদের দাবি, বুধবারের সালিশি সভার বিষয়ে লিখিত বা মৌখিক কোনও অভিযোগই কেশিয়াড়ি থানায় হয়নি। শুক্রবারের ঘটনা নিয়েও কেশিয়াড়ি থানার কোনও ফোনও আসেনি। এসডিপিও সুমনকান্তি ঘোষ বলেন, ‘‘গোটা ঘটনার তদন্ত হচ্ছে। শনিবার মৃতদেহটি ময়না-তদন্তে পাঠানো হয়েছে।’’