তালে-তালে: তথ্য সংস্কৃতি দফতরে বাছাই-শিবির। —নিজস্ব চিত্র।
সকাল থেকেই মেদিনীপুরে জেলা তথ্য-সংস্কৃতি দফতরের সামনে লোকশিল্পীদের ভিড়। কারও হাতে ধামসা-মাদল। কারও হাতে খোল। নাম নথিভুক্তকরণের জন্য এক-এক করে শিল্পীদের নাম ডাকা হচ্ছে। আগে শুধু শিবির করে শিল্পীদের নাম নথিভুক্তকরণ হত। এ বার রীতিমতো বাছাইয়ের কাজ শুরু হল।
এই বাছাই শিবিরে বিচারকের আসনে রয়েছেন জেলা তথ্য-সংস্কৃতি আধিকারিক অনন্যা মজুমদার-সহ বিশিষ্ট শিল্পীরা। তাঁরাই এক এক করে শিল্পীদের নাম ডেকে নিচ্ছেন। তাঁরা পরখ করে দেখে নিচ্ছেন শিল্পীরা ঠিক কেমন ‘পারফর্ম’ করেন। মেদিনীপুরে জেলা তথ্য-সংস্কৃতি দফতরে গত সপ্তাহ থেকে শুরু হয়েছে এই শিবির। চলবে আগামী দু’মাস ধরে। দিনে ১৫০-২০০ জন আবেদনকারী শিল্পীর পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে। মাঝে বেশ কয়েক মাস নাম নথিভুক্তকরণের কাজ বন্ধ ছিল। ফের জেলায় লোকশিল্পীদের নাম নথিভুক্তকরণের কাজ শুরু হল। সেই জন্যই এই শিবির।
এ ক্ষেত্রে অবশ্য নতুন করে কোনও আবেদন নেওয়া হয়নি। যে বিপুল সংখ্যক আবেদন পড়ে রয়েছে, তার থেকেই ঝাড়াই-বাছাই করে নাম নথিভুক্তকরণ হবে। পশ্চিম মেদিনীপুরের তথ্য-সংস্কৃতি আধিকারিক অনন্যাদেবী বলছিলেন, “বাছাই শিবিরের মাধ্যমে নাম নথিভুক্তকরণের কাজ শুরু হয়েছে। অনেক আবেদন দফতরে জমা রয়েছে। সেখান থেকেই শিল্পীদের ডাকা হচ্ছে।” দফতরের এক কর্তার কথায়, “এই শিবিরে শিল্পীদের গুণগত মানও দেখে নেওয়া যাচ্ছে।” তাঁর সংযোজন, “প্রচুর আবেদন জমা রয়েছে। নানা কাজে এতদিন ওই সব আবেদনে নজর দেওয়া হয়নি। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে এ বার কাজ শুরু হল।”
মঙ্গলবার যেমন ‘অডিশন’ দেন দাসপুরের লক্ষ্মীকান্ত ধাড়া, দিলীপ দোলুই, মানিক সাঁতরারা। লক্ষ্মীকান্তদের কীর্তনের দল রয়েছে। এ দিন খোল বাজিয়ে কীর্তন গেয়ে শোনান তাঁরা। দিলীপ বলছিলেন, “এ এক নতুন অভিজ্ঞতা। আগে কখনও এ ভাবে পরীক্ষা দিইনি। উদ্যোগটা ভাল।” মানিকও বলছিলেন, “এ ভাবে পরীক্ষা নিয়ে নাম নথিভুক্ত হলে প্রকৃত শিল্পীরাই উপকৃত হবেন।”
লোকশিল্পীদের জন্য লোকপ্রসার প্রকল্প চালু করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নাম নথিভুক্তির পরে শিল্পীদের পরিচয়পত্র দেওয়া হয়। শিল্পীদের ডাটা-ব্যাঙ্ক তৈরির নির্দেশও দেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই মতো পরিচয়পত্র পাওয়া শিল্পীদের নাম ডাটা-ব্যাঙ্কে রাখা হয়। এখন দুই জেলায় নথিভুক্ত প্রায় ৭ হাজার লোকশিল্পী মাসে এক হাজার টাকা করে ভাতা পান। এ ছাড়াও একটি সরকারি অনুষ্ঠানে যোগ দিলে এক হাজার টাকা করে পান।
জেলা তথ্য-সংস্কৃতি দফতর সূত্রে খবর, এই দফায় প্রায় ১৩ হাজার শিল্পীর নাম নথিভুক্তি হতে পারে। দফতরের এক কর্তা বলছিলেন, “এ বার বাছাই-শিবিরের মাধ্যমে নাম নথিভুক্তকরণের কাজ হওয়ার ফলে প্রকৃত লোকশিল্পীরাই লোকপ্রসার প্রকল্পের আওতায় আসবেন। বিভিন্ন আঙ্গিকের শিল্পীদের এই প্রকল্পের আওতায় আনা সম্ভব হবে।”