প্রতীকী ছবি
জেলা সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালের অব্যবস্থা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে হাসপাতাল সুপারকে চিঠি দিয়েছেন জেলাশাসক আয়েষা রানি। অথচ হাসপাতাল সূত্রের খবর, সেখানকার কাজকর্ম কেমন চলছে তা পর্যালোচনার জন্য চলতি বছরে এখনও পর্যন্ত হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতির কোনও সাধারণ সভাই ডাকা হয়নি।
ঝাড়গ্রাম জেলা হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান হলেন ঝাড়গ্রামের বিধায়ক তথা বিধানসভার ডেপুটি স্পিকার সুকুমার হাঁসদা। সমিতির কার্যকরী চেয়ারপার্সন হলেন খোদ জেলাশাসক। আর সমিতির সদস্য-সচিব হলেন হাসপাতালের সুপার। হাসপাতালের সমস্ত মেডিক্যাল অফিসার এবং সিনিয়র নার্সরা সমিতির সদস্য। সমিতির চেয়ারপার্সন, কার্যকরী চেয়ারপার্সন অথবা সদস্য-সচিবের যে কেউ একজন বৈঠক ডাকতে পারেন। হাসপাতাল সূত্রের খবর, রোগী কল্যাণ সমিতির সর্বশেষ সভাটি হয়েছিল গত বছর নভেম্বর মাসের গোড়ায়। শুধু তাই নয়, ২০১৮ সালে মাত্র একবার সমিতির বৈঠক হয়েছে। অথচ জেলা হাসপাতালে আগে নিয়মিত দু’তিন মাস অন্তর রোগী কল্যাণ সমিতির বৈঠক হতো। সেটাই এখন হচ্ছে না।
হাসপাতালের চিকিৎসা সংক্রান্ত বিষয় বাদে রোগীদের ডায়েট, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা সহ অন্যান্য পরিষেবা দানের বিষয়গুলি নিয়ে সমিতিতে আলোচনা হওয়ার কথা। আলোচনার ভিত্তিততে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্তও নেওয়ার কথা সমিতির বৈঠকে। কিন্তু কেন এই বৈঠক হচ্ছে না? সমস্যা কোথায়? এই প্রসঙ্গে জেলাশাসকের কোনও প্রতিক্রিয়া জানা সম্ভব হয়নি। মুখে কুলুপ এঁটেছেন হাসপাতালের সুপার ইন্দ্রনীল সরকার। তবে রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারপার্সন সুকুমার হাঁসদা বলেন, ‘‘লকডাউনের আগে হাসপাতাল পরিদর্শন করেছিলাম। চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মীরা সাধ্যমতো পরিষেবা দিচ্ছেন। হাসপাতাল সম্পর্কে কোনও অভিযোগ আমি পাইনি।’’ সমিতির বৈঠক নিয়ে সুকুমারের জবাব, ‘‘লকডাউনে সমিতির বৈঠক হয়নি। বৈঠক ডাকা হলে যাব।’’ দীর্ঘদিন বৈঠক না হওয়ার বিষয়টি যদিও এড়িয়েই গিয়েছেন সুকুমার।
মঙ্গলবার জেলাশাসক আয়েষা রানি আচমকা ঝাড়গ্রাম জেলা সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে পরিদর্শনে যান। অপরিচ্ছন্ন হাসপাতাল দেখে বিরক্ত হন জেলাশাসক। পরদিনই বুধবার হাসপাতালের সুপারকে চিঠি দিয়ে বিভিন্ন ওয়ার্ড ও শৌচাগার পরিষ্কার রাখা সহ ছ’টি বিষয়ে গুরুত্ব দিতে বলেন আয়েষা। মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক প্রকাশ মৃধাকেও এ ব্যাপারে জেলাশাসক নজর দিতে বলেন। বৃহস্পতিবার জেলাশাসকের নির্দেশে জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিক সকালে হাসপাতালে এসে খোঁজ নেন বহির্বিভাগে কতজন চিকিৎসক সময়মত বসেছেন, যাঁরা নির্ধারিত সময়ে বহির্বিভাগে গরহাজির ছিলেন, সেই চিকিৎসকদের নামের তালিকা সংগ্রহ করে নিয়ে যান ওই আধিকারিক। সূত্রের খবর, বহির্বিভাগে এদিন যে চিকিৎসকরা সময়মত বসেননি, তাঁদের কাছে কারণ জানতে চাওয়া হবে।
বুধবার সুপারকে দেওয়া চিঠিতে অবশ্য জেলাশাসক জানিয়েছেন, চলতি মাসের শেষ নাগাদ রোগী কল্যাণ সমিতির বৈঠকে হাসপাতালের বিষয়গুলি নিয়ে তিনি আলোচনা করবেন। তবে জেলা হাসপাতালের পরিস্থিতি নিয়ে সরব হয়েছে বিরোধীরা। প্রাক্তন সাংসদ তথা সিপিএমের ঝাড়গ্রাম জেলা সম্পাদক পুলিনবিহারী বাস্কে বলেন, ‘‘প্রশাসনিক পদাধিকারীরা তাঁদের দায়িত্ব সম্পর্কে কতটা উদাসীন সেটা রোগী কল্যাণ সমিতির বৈঠক না হওয়াই প্রমাণ করছে। করোনা নিয়েও তাঁরা চুপ।’’ ঝাড়গ্রামের বর্তমান বিজেপি সাংসদ কুনার হেমব্রম বলেন, ‘‘রোগী কল্যাণ সমিতির সমিতির বৈঠকে হাসপাতালের পরিচ্ছন্নতা, রোগীদের খাবারের মান নিয়ে গত সাতমাসে কোনও দিন আলোচনা হয়েছে বলে আমাদের জানা নেই। ’’