Coronavirus Lockdown

দুয়ারে ঝঞ্ঝা, করোনা আবহে মজুত পিপিই, মাস্কও

ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে পশ্চিম মেদিনীপুরের বিস্তীর্ণ এলাকাও। তাই প্রস্তুত জেলা প্রশাসন।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২০ মে ২০২০ ০২:৪৯
Share:

ঘনঘোর: মেদিনীপুর শহরে। মঙ্গলবার দুপুরে। নিজস্ব চিত্র

ঘূর্ণিঝড়ের পূর্বভাসে এতদিন ত্রিপল, খাদ্যসামগ্রী, পানীয় জল মজুত করত প্রশাসন। করোনা পরিস্থিতিতে এ বার ওই সব সামগ্রীর পাশাপাশি জেলাকে পিপিই, মাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজ়ারও মজুত করতে হয়েছে।

Advertisement

করোনার বিপর্যয়ের মধ্যেই চোখ রাঙাচ্ছে ঘূর্ণিঝড় আমপান। পশ্চিমবঙ্গের আরও কাছাকাছি চলে এসেছে শক্তিশালী ওই ঘূর্ণিঝড়। আজ, বুধবার স্থলভাগে যখন আছড়ে পড়বে ঝড়, তখন ঘূর্ণনের গতিবেগ হতে পারে ঘন্টায় ১৫৫-১৬৫ কিলোমিটার। ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে পশ্চিম মেদিনীপুরের বিস্তীর্ণ এলাকাও। তাই প্রস্তুত জেলা প্রশাসন।

মঙ্গলবার জেলাগুলির সঙ্গে রাজ্যের ভিডিয়ো বৈঠক হয়েছে। রাজ্যের তরফে বৈঠকে ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, মুখ্যসচিব রাজীব সিংহ। এই জেলার তরফে ছিলেন জেলাশাসক রশ্মি কমল, পুলিশ সুপার দীনেশ কুমার প্রমুখ। জেলাশাসক বলেন, ‘‘ইতিমধ্যে আমরা ব্লকগুলির সঙ্গে ভিডিয়ো বৈঠক করেছি। উদ্ধারকারী দল তৈরি রাখা হয়েছে। ত্রিপল, খাদ্যসামগ্রী-সহ ত্রাণ মজুত রাখা হয়েছে। করোনা পরিস্থিতিতে পিপিই, মাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজ়ারও মজুত রাখা হয়েছে।’’ আশ্রয় শিবিরে আসা লোকজনকে মাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজ়ার দিতে হতে পারে। উদ্ধারকারী দলকে পিপিই দিতে হতে পারে। ৩০ হাজার মাস্ক রাখা হয়েছে। জেলাশাসক জানাচ্ছেন, ‘‘পিপিই-ও রাখা রয়েছে। পিপিই পরে যদি কাউকে উদ্ধার করতে যেতে হয়, উদ্ধারকারী দল তাহলে তাও করবে।’’

Advertisement

প্রশাসন সূত্রে খবর, পশ্চিম মেদিনীপুরের ২১টি ব্লকের মধ্যে ১৪টি ব্লককেই সতর্ক করা হয়েছে। এর মধ্যে দাঁতন- ১ এবং ২, মোহনপুর, নারায়ণগড়-সহ খড়্গপুর মহকুমার সব ব্লক রয়েছে। অন্যদিকে, ঘাটাল মহকুমার চন্দ্রকোনা- ১, দাসপুর- ১ এবং ২, ঘাটাল- এই ৪টি ব্লক রয়েছে। অতিরিক্ত জেলাশাসক প্রতিমা দাস মানছেন, ‘‘জেলার ১৪টি ব্লককে সতর্ক করা হয়েছে। এই ব্লকগুলিতেই ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।’’ সেই মতো ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় সতর্ক ঘাটাল মহকুমা প্রশাসন। মঙ্গলবার সকাল থেকে মহকুমাশাসকের দফতরে খোলা হয়েছে কন্ট্রোল রুম। এ ছাড়াও ঘাটালের পাঁচটি ব্লক ও ৪৮টি গ্রাম পঞ্চায়েত অফিসেও কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। সতর্ক করা হয়েছে ঘাটাল সহ মহকুমার পাঁচটি পুরসভাকেও। মহকুমা প্রশাসন সূত্রের খবর, এ দিন বিকেল থেকে রূপনারায়ণ নদের খেয়াঘাটগুলি বন্ধ করা হয়েছে। আমপান নিয়ে বিদ্যুৎ দফতরকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। ঝড়ে গাছ ভেঙে পড়লে দ্রুত যাতে সরিয়ে নেওয়া যায়, সে জন্য লোক মজুত রাখতেও বলা হয়েছে। ভগ্নপ্রায় মাটির বাড়ি ও দুর্বল বাড়ির তালিকা তৈরির কাজ শুরু করেছে প্রশাসন। প্রস্তুত রাখা হয়েছে ঘাটাল ও দাসপুরের পাঁচটি ফ্লাড সেল্টার। ঘাটাল পুরসভার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বিদ্যুৎ না থাকলে পাম্প থেকে জল উঠবে না। তাই পুরসভা রিজার্ভার-সহ বিভিন্ন উপায়ে পানীয় জল মজুত করছে। ঘাটালের মহকুমাশাসক অসীম পাল বলেন, “সংশ্লিষ্ট সকলকে সতর্ক করা হয়েছে। ঘাটাল ও দাসপুরে বাড়তি নজর দেওয়া হয়েছে।”

কন্ট্রোল রুম খুলেছে খড়্গপুর পুরসভাও। মঙ্গলবার জরুরি ভিত্তিতে মহকুমাশাসক বৈভব চৌধুরীর উপস্থিতিতে পুরসভায় বৈঠক হয়। এই ঝড়ের দাপটে রেলশহরের কয়েকটি বস্তির কয়েকশো ঝুপড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা আছে। সেখানকার বাসিন্দাদের নিরাপদ স্থানে সরানোর রূপরেখা ঠিক হয়েছে। কেউ বিপদে পড়লেই তাঁকে স্থানীয় স্কুলে রাখা হবে। প্রয়োজনে বস্তিবাসীদের ত্রিপল, জল দেবে পুরসভা। পুরপ্রধান তথা বিধায়ক প্রদীপ সরকার বলেন, “মহকুমাশাসক ও আইসির সঙ্গে বৈঠক করে আমরা কন্ট্রোল রুম খুললাম। ২৪ঘন্টা আমাদের কর্মীরা আমপান মোকাবিলায় কাজ করবেন।”

এ দিন দুপুর থেকেই নদী তীরবর্তী এলাকার মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরানো শুরু হয়েছে, বিশেষ করে যাঁরা কাঁচাবাড়িতে থাকেন। প্রশাসন সূত্রে খবর, দুর্গতদের আশ্রয় দিতে জেলায় ৮৭৪টি ‘রেসকিউ সেন্টার’ প্রস্তুত রাখা হয়েছে। বেশিরভাগই স্কুলবাড়ি। ১৬টি ‘ফ্লাড শেল্টার’ প্রস্তুত রাখা হয়েছে। রাজ্য বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর (এসডিআরএফ) একটি দল খড়্গপুরে এসে পৌঁছেছে। ওই দলে ১৩ জন কর্মী রয়েছেন। জেলাশাসক মানছেন, ‘‘এসডিআরএফ- এর দল খড়্গপুরে চলে এসেছে। সিভিল ডিফেন্সের দলকেও তৈরি রাখা হয়েছে। মানুষদের উদ্ধারের জন্য ওরা ওদের জিনিসপত্র নিয়ে তৈরি রয়েছে।’’

প্রশাসনের এক সূত্রে খবর, পশ্চিম মেদিনীপুরে ঘূর্ণিঝড়ের গতি থাকতে পারে ১১০-১৩০ কিলোমিটার প্রতি ঘন্টায়। বুধবার সকালের পর থেকেই হাওয়ার গতি বাড়বে। দুপুরের পর থেকে ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ঝড়-বৃষ্টিতে জেলার ৫-৬টি ব্লকে বেশি ক্ষতির আশঙ্কাও রয়েছে। ওই সূত্র মানছে, ঝড়ের তাণ্ডবে কিছু এলাকা বিপর্যস্ত হতে পারে। গাছপালা ভেঙে পড়তে পারে। ভাঙতে পারে ঘরবাড়ি, বিদ্যুতের খুঁটি। বিক্ষিপ্ত কিছু এলাকায় বিদ্যুৎ, পানীয় জল সরবরাহ বন্ধ হতে পারে। ক্ষয়ক্ষতি হলে যুদ্ধকালীন তৎপরতায় মেরামতের কাজ করতে হবে। সেই প্রস্তুতি সেরে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘এখনও নিশ্চিত বলা যাচ্ছে না জেলার কোথায় কোথায় ছোবল মারবে আমপান। তবে খড়্গপুর মহকুমার কয়েকটি ব্লকে সবচেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে।’’

আপাতত, উদ্বেগের প্রহর গোনা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement