DA Case

ডিএ ধর্মঘটে আজ কী করবেন! দোটানায় শিক্ষকরা

এমন পরিস্থিতিতে জেলার প্রাথমিক এবং হাইস্কুলগুলির শিক্ষক-শিক্ষিকাদের একটা বড় অংশ ধর্মঘটে সামিল হওয়া দিয়ে দ্বিধায় পড়েছেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

তমলুক শেষ আপডেট: ১০ মার্চ ২০২৩ ০৮:৫১
Share:

দোটানায় শিক্ষকেরা। — ফাইল চিত্র।

একদিকে বকেয়া মহার্ঘ ভাতার দাবিতে বিরোধী শিক্ষক সংগঠনগুলির তরফে ১০ মার্চের ধর্মঘটে সামিল হওয়ার ডাক। অন্যদিকে ধর্মঘটের বিরুদ্ধে সরকারি নির্দেশ জারি এবং শাসক দলের প্রভাবিত শিক্ষক সংগঠনের আহ্বান, ধর্মঘট না করে স্কুলে পড়ানোর। শুক্রবারের ধর্মঘট নিয়ে টানাপড়েনে প্রাথমিক ও হাইস্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের অনেকেই।

Advertisement

প্রশাসন ও জেলা শিক্ষা দফতর সূত্রে খবর, ধর্মঘটের দিনে সরকারি অফিসগুলিতে দফতরের কর্মী এবং স্কুলে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের উপস্থিতি বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এদিন সরকারি অফিস ও স্কুলে অনুপস্থিত কর্মী ও শিক্ষক-শিক্ষিকাদের শো-কজ করা কিংবা উপযুক্ত কারণ দর্শাতে না পারলে বেতন কাটার হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে। পূর্ব মেদিনীপুর জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদ সভাপতি হাবিবুর রহমান বলেন, ‘‘সরকারি নির্দেশিকা মেনে সমস্ত স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকা যাতে শুক্রবার স্কুলে পড়ুয়াদের পঠনপাঠন স্বাভাবিক রাখেন সেবিষয়ে জেলার সমস্ত প্রাথমিক স্কুলে নির্দেশ পাঠানো হয়েছে। অন্যথায় সরকারি নির্দেশ মেনে শো-কজ, বেতন কাটা কিংবা সার্ভিস ব্রেক-আপের মত কড়া পদক্ষেপ করা হবে।’’

এমন পরিস্থিতিতে জেলার প্রাথমিক এবং হাইস্কুলগুলির শিক্ষক-শিক্ষিকাদের একটা বড় অংশ ধর্মঘটে সামিল হওয়া দিয়ে দ্বিধায় পড়েছেন। তমলুক ব্লকের খড়িডাঙর প্রাথমিক স্কুলের সহ-শিক্ষক প্রণবেশ দাস বলেন, ‘‘আমি একটি শিক্ষক সংগঠনের সাথে জড়িত। ডিএ-র দাবিতে আন্দোলনে নৈতিক সমর্থন রয়েছে। কিন্তু শুক্রবার ধর্মঘটে সামিল হব কি না সিদ্ধান্ত নিতে পারছি না। কিছুটা ধন্ধে পড়েছি। তবে পড়ুয়াদের স্বার্থেই স্কুলের পঠনপাঠনে অংশ নেওয়ার ভাবনাও রয়েছে।’’ মহিষাদলের বাড়অমৃতবেড়িয়া হাইস্কুলের সহ-শিক্ষক জাহাঙ্গির হোসেন বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বলেন, ‘‘ধর্মঘটে সামিল হব, না কি বিরোধিতা করব তা নিয়ে কিছুটা দোটানায় আছি। এবিষয়ে অন্যান্য শিক্ষকশিক্ষিকাদের সাথে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেব।’’

Advertisement

পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় মোট ৩২৬৫ টি প্রাথমিক স্কুলে ১২ হাজারের বেশি শিক্ষক-শিক্ষিকা রয়েছেন। উচ্চ-প্রাথমিক ও মাধ্যমিক, উচ্চ-মাধ্যমিক মিলিয়ে প্রায় এক হাজার হাইস্কুলে ১৫ হাজারের বেশি শিক্ষক-শিক্ষিকা ও অশিক্ষক কর্মী রয়েছেন। বকেয়া ডিএ-র দাবি জানিয়ে ধর্মঘটের ডাক দেওয়া সংগ্রামী যৌথ মঞ্চে বঙ্গীয় প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি ও মাধ্যমিক শিক্ষক-শিক্ষাকর্মী সমিতি সহ বিভিন্ন শিক্ষক সংগঠন ও সরকারি কর্মীদের সংগঠন রয়েছে। ধর্মঘটের সমর্থনে মঞ্চের তরফে জেলার প্রতিটি এলাকায় স্কুলে স্কুলে প্রচার চালানো হয়েছে। মঞ্চের তরফে ১০ মার্চের ধর্মঘটের সমর্থনে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের স্কুলে অনুপস্থিত থাকার আহ্বান জানানো হয়েছে। সংগ্রামী যৌথ মঞ্চের তরফে বৃহস্পতিবার জেলা সদর তমলুক শহরের হাসপাতাল মোড়ে ধর্মঘটের সমর্থনে মিছিল করা হয়। মঞ্চের জেলা আহ্বায়ক শম্ভু মান্না বলেন, ‘‘বকেয়া ডিএ-র দাবিতে আগে কর্মবিরতি পালন করা হয়েছিল। শুক্রবার ধর্মঘট ডাকা হয়েছে। এদিন ধর্মঘটের সমর্থনে সমস্ত প্রাথমিক স্কুল, হাইস্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং সরকারি দফতরের কর্মচারীদের কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকার আহ্বান জানানো হয়েছে।’’

শম্ভু বলেন, ‘‘ধর্মঘট রুখতে রাজ্য সরকারের তরফে নির্দেশ জারি করে সরকারি কর্মী ও শিক্ষক-শিক্ষিকাদের হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে। যদিও ধর্মঘটের পথ থেকে আমরা সরছি না। একাংশ স্কুলশিক্ষক-শিক্ষিকা ধর্মঘটে সামিল হওয়া নিয়ে দোলাচলে পড়েছেন ঠিকই। তবে এবার ধর্মঘটের সমর্থনে বিপুল সাড়া পাওয়া যাচ্ছে।’’

তৃণমূল প্রাথমিক শিক্ষক সেলের জেলা সভাপতি নীলকান্ত অধিকারী বলেন, ‘‘ধর্মঘটের বিরুদ্ধে আমাদের সংগঠনের তরফে জেলা, মহকুমা ও চক্রস্তরে জেলার সমস্ত স্কুল শিক্ষক-শিক্ষিকাদের কাছে প্রচার করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের দিকে তাকিয়ে যাতে শিক্ষক-শিক্ষিকারা স্কুলে হাজির হয়ে পঠনপাঠনে যোগ দেন সেজন্য আহ্বান জানানো হয়েছে।’’ নীলকান্ত বলেন, ‘‘জেলায় আমাদের শিক্ষক সংগঠনের প্রায় ৮ হাজার সদস্য রয়েছেন।শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সকলেই স্কুলে উপস্থিত হয়ে পড়ুয়াদের ক্লাস নেবেন বলে আশা করছি। সংগঠনের তরফে বিভিন্ন স্কুলে খোঁজ নেওয়া হবে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement