প্রতীকী ছবি।
চলতি বছরের গোড়ার দিকেই শুরু হয়েছে করোনার টিকাকরণের কর্মসূচি। প্রথম ধাপে ষাটোর্ধ্বদের পরে ধাপে ধাপে ১৮ বছরের ঊর্ধ্বের সকলকে টিকার আওতায় আনা হয়েছে। কিন্তু বেশ কয়েকমাস পার হওয়ার পরেও পূর্ব মেদিনীপুরে এখনও ওই নির্দিষ্ট বয়সসীমার সকলকে টিকার প্রথম ডোজ় দেওয়া যায়নি। বিষয়টি নিয়ে নড়েচড়ে বসেছে জেলা স্বাস্থ্য দফতর। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে জেলার ১৮ বছর ঊর্ধ্বের ১০০ শতাংশকেই প্রথম ডোজ় দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে দেওয়া হল।
পূর্ব মেদিনীপুর জেলা দুটি স্বাস্থ্য জেলায় বিভক্ত— নন্দীগ্রাম স্বাস্থ্য জেলা এবং পূর্ব মেদিনীপুর স্বাস্থ্য জেলা। দু’টিতেই টিকার লক্ষ্যমাত্র পূরণ হয়নি বলে খবর জেলা প্রশাসন সূত্রে। তাই ১৮ ঊর্ধ্বের সার্বিক টিকাকরণের লক্ষ্যপূরণে বুধবার সন্ধ্যায় জেলার সব মহকুমাশাসক, বিডিও, ব্লক ও জেলা স্বাস্থ্য আধিকারিকদের নিয়ে ভার্চুয়াল বৈঠক করেন জেলাশাসক পূর্ণেন্দু মাজি। বৈঠকে ব্লক ভিত্তিক ১৮ ঊর্ধ্ব বয়সীদের টিকাকরণের পরিসংখ্যাণ তুলে ধরা হয়। তাতে জানা যায়, কোন ব্লকে প্রথম ডোজ় নিতে বাকি রয়েছেন কতজন। এর পরেই টিকা না পাওয়া ওই সব বাসিন্দাদের ভোটার তালিকা ধরে চিহ্নিত করে দ্রুত টিকা দেওয়ার জন্য সমস্ত ব্লক প্রশাসনকে নির্দেশ দেন জেলাশাসক।
বৃহস্পতিবার জেলার বিভিন্ন ব্লকে বিডিও গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান, স্বাস্থ্য দফতরের আধিকারিকেরা ফের একটি বৈঠক করে এ বিষয়ে উদ্যোগী হয়েছেন। আর এদিন থেকেই পূর্ব মেদিনীপুর স্বাস্থ্য জেলার বিভিন্ন এলাকায় বয়স্ক বাসিন্দাদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে টিকা দেওয়া শুরু হয়েছে।
১৮ ঊর্ধ্ব সমস্ত বাসিন্দাকে টিকা দেওয়ার জন্য ভোটার তালিকা ধরে টিকাকরণ শুরু হয়েছিল গত অগস্টে। কিন্তু সেই টিকাকরণে একাধিক বাধাও আসে। যেমন— কখনও প্রতিষেধকের ঘাটতি, কখনও জেলায় বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হওয়া, আবার কখনও বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দাদের টিকা না নেওয়ার ইচ্ছাপ্রকাশ করেও দেখা গিয়েছে। অনিচ্ছুক জেলাবাসীকে বাড়ি বাড়ি গিয়ে বোঝাচ্ছেন স্বাস্থ্য এবং আশা কর্মীরা। কিন্তু অনেক সময় তাঁরাও অনিচ্ছুক ব্যক্তিদের কাছে আক্রান্ত হচ্ছেন।
টিকাকরণের গতি হ্রাস পাওয়ার কারণে খারাপ আবহওয়াকেই প্রধানত ‘দায়ী’ করছে স্বাস্থ্য দফতর। সেপ্টেম্বর মাসের মাঝামাঝি সময় থেকেই একাধিক নিম্নচাপের জেরে ভারী বৃষ্টি হয়ে জলমগ্ন হয়েছিল বিভিন্ন এলাকা। এছাড়া, কেলেঘাই নদীর বাঁধ ভেঙে ভেসে গিয়েছিল এগরা, পটাশপুর, ভগবানপুর ও চণ্ডীপুর ব্লকের বিস্তৃীর্ণ অঞ্চল। স্বাভাবিক ভাবেই ওই সব এলাকায় টিকাকরণ কর্মসূচি
ধাক্কা খায়।
পুজোর আগে জেলায় বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ার পরে দ্রুত টিকাকরণের লক্ষ্যে শিবির সংখ্যা বাড়ানো হয়। আর বুধবার জেলাশাসকের বৈঠকে জানানো হয়, ১৮ ঊর্ধ্ব সব বাসিন্দাকে টিকা দিতে ২৮ থেকে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত পূর্ব মেদিনীপুর স্বাস্থ্য জেলায় এবং আগামী ১ থেকে ৩ নভেম্বর পর্যন্ত নন্দীগ্রাম স্বাস্থ্য জেলা এলাকায় বিশেষ টিকাকরণ অভিযান চালানো হবে। করোনার উপসর্গ থাকা ব্যক্তিদের বেশি করে নমুনা পরীক্ষার নির্দেশ দিয়েছেন জেলাশাসক। তিনি বলেন, ‘‘নন্দীগ্রাম স্বাস্থ্য জেলায় ৮৭ শতাংশ এবং পূর্ব মেদিনীপুর স্বাস্থ্য জেলায় ৮৩ শতাংশ টিকাকরণ হয়েছে। ১০০ শতাংশ টিকাকরণ করার জন্য বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।’’