রেডিমেড পোশাকের ভিড়ে বিপাকে দরজিরা

শহরে বেড়েছে শপিং মলের পাশাপাশি নামী ব্র্যান্ডের ফ্যাশনদুরস্ত জামাকাপড়ের আডটলেট। কেতাদূরস্ত পোশাকের টানে সেখানে ভিড় জমাচ্ছেন কিশোর-কিশোরী থেকে তরুণ-তরুণীরা। আর রেডিমেড পোশাকের এমন বাড় বাড়ান্তে পুজোয় ম্রিয়মাণ চিরাচরিত দরজির দোকানগুলি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা 

কাঁথি শেষ আপডেট: ০৫ অক্টোবর ২০১৮ ০০:৫৪
Share:

সঙ্কটে: কাঁথির একটি দোকানে। নিজস্ব চিত্র

শহরে বেড়েছে শপিং মলের পাশাপাশি নামী ব্র্যান্ডের ফ্যাশনদুরস্ত জামাকাপড়ের আডটলেট। কেতাদূরস্ত পোশাকের টানে সেখানে ভিড় জমাচ্ছেন কিশোর-কিশোরী থেকে তরুণ-তরুণীরা। আর রেডিমেড পোশাকের এমন বাড় বাড়ান্তে পুজোয় ম্রিয়মাণ চিরাচরিত দরজির দোকানগুলি।

Advertisement

পুজোর ঢাকে কাছি পড়ে গিয়েছে। মা দুর্গার সপরিবার আসার খবরও দিকে দিকে ছড়িয়ে পড়েছে। চারিদিকে উৎসবের মেজাজ। কিন্তু এমন আবহেও মন ভাল নেই কাঁথির টেলারিং কাজের সঙ্গে যুক্ত মানুষজনের। ঈদ থেকে ভাই ফোঁটা, উৎসবের এই মরসুমে বাড়তি রোজগারের আশায় থাকে দোরজির দোকানের কর্মীরা। অথচ ভরা মরসুমেও দোরজির দোকানগুলিতে তেমন ভিড় নেই। এক দোরজির দোকানের মালিকের কথায়, ‘‘এক সময় বাচ্চা থেকে বুড়ো, সকলের জামাকপড়ে তৈরির বায়নায় পুজোর সময় দোকানের কর্মীদের নাওয়া-খাওয়ার সময় থাকত না। এখন আর সেই সুদিন নেই। প্রবীণ কিছু মানুষ এখন আমাদের কাছে জামাকাপড় তৈরির জন্য এলেও ইয়ং ছেলেরা আর তেমন আসে না। তারা এখন ভিড় করে শপিংমলে।’’

পাড়ায় পাড়ায় টেলারিং শিল্পের এই দূরবস্থার জন্য শপিং মলের বাড়বাড়ন্তকেই কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছেন দোরজির দোকানর মালিকেরা। সেই সঙ্গে এই শিল্পে দক্ষ কর্মীর অভাবকেও দায়ী করেছেন তাঁরা।

Advertisement

বছর সাতেক আগে অবশ্য ছবিটা ভিন্ন ছিল। কাঁথির শ্রীরূপা রাস্তার দোরজির দোকানগুলি পুজোর মাস দু’য়েক আগে থেকে জামাপ্যান্ট তৈরির অর্ডার নেওয়া বন্ধ হয়ে যেত। গ্রাহকদের ভিড় উপচে পড়ত দোকানে। কাঁথির হেঁড়িয়া, বাজকুল, নাচিন্দা, রামনগর , কালীনগরে বিভিন্ন দোরজির দোকানে ঝুলতে দেখা যেত ‘পুজোর অর্ডার আর নেওয়া হবে না’ বোর্ড। রামনগরের এক দোরজির দোকানের মালিক তপন দাস বলেন, “এত বৈচিত্র্যপূর্ণ বাহারি রেডিমেড পোশাকে বাজারে ছেয়ে গিয়েছে, স্থানীয় দোরজিদের কাছে নতুন প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা আর পুজোর পোশাক বানাতে চাইছে না।’’ তিনি জানান, বিজ্ঞাপনের চমকে অনেকেরই ধারণা হয়েছে যে পোশাক মানেই কোন শপিংমল কিংবা নামী ব্র্যান্ডের বস্ত্রের বিপণি। তার উপর ক্রেতা টানতে দামে ছাড় দেওয়ার পাশাপাশি ‘একটি কিনলে একটি বিনামূল্যে’-র মতো লোভনীয় অফারের হাতছানি তো রয়েইছে।

কাঁথি শহরে বেশ কয়েকটি বড় বস্ত্র বিপণি রয়েছে। কাঁথি সেন্ট্রাল বাসস্ট্যান্ডে সম্প্রতি গড়ে উঠেছে দুটি টেক্সটাইল কমপ্লেক্স। পুরাতন দিঘা বাসস্ট্যান্ডের কাছে তৈরি হয়েছে বিশাল শপিংমল। ফ্যাশন ও কেতাদূরস্ত পোশাকের টানে তরুণ-তরুণীরা সেখানেই ছুটছে। কাঁথির এক টেলারিং শপের মালিক শেখ মাজেদ বলেন, ‘‘বড় বড় শপিংমলগুলোতে প্রতিষ্ঠিত বস্ত্র কোম্পানিগুলো এখন নিজস্ব টেলার রাখছে। ওই সব বড় বস্ত্র ব্যবসায়ীদের সঙ্গে পাল্লা দিতে যে টাকার দরকার তা আমাদের সাধ্যের বাইরে।’’

কাঁথির মনোহরচকের যুবক অতনু পণ্ডা বলেন, “রেডিমেড পোশাকে ঝামেলা অনেক কম। কিন্তু দোরজির কাছে গেলে একবার মাপ দাও, পরে ট্রায়াল দাও সে নানা ঝক্কির ব্যাপার। সময়ও যায় অনেক বেশি।’’

হেঁড়িয়ার এক দোরজির দোকানের মালিক বিমল মাইতি বলেন, ‘‘এরকম চলতে থাকলে আগামী দিন কী ভাবে চলবে? যা পরিস্থিতি তাতে অন্য পেশায় চলে যাব কিনা ভাবছি।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement