শুভেন্দু অধিকারী। —ফাইল ছবি।
টানা আন্দোলন। পাঁচ বার চেষ্টার পরে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে সফল বৈঠক। এর পরেই জুনিয়র চিকিৎসকদের দাবি মেনে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে কলকাতা পুলিশের কমিশনার বিনীত গোয়েলকে। তাঁর জায়গায় মঙ্গলবার ওই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে মনোজ বর্মাকে। জঙ্গলমহলে মাওবাদী পর্ব সামলানো এই দুঁদে অফিসার কমিশনারের পদ পেতেই তাঁর অতীত খুঁড়ে সমালোচনায় সরব হলেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তৎকালীন পশ্চিম মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার মনোজের ‘অত্যাচার’ নিয়ে তিনি এ দিন নন্দীগ্রামে মুখ খুলেছেন।
প্রধানমন্ত্রীর নরেন্দ্র মোদীর ৭৫তম জন্মদিবস উপলক্ষে এ দিন নন্দীগ্রামের রেয়াপাড়ায় ব্রাহ্মণ এবং ক্ষৌরকারদের বস্ত্রদান এবং আর্থিক সাহায্য করেন বিরোধী দলনেতা। সেখানে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে শুভেন্দু দাবি করেন, মনোজ অবিভক্ত পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় কুড়মি এবং জনজাতিদের উপর অত্যাচার করেছেন। নন্দীগ্রামের বিধায়ক শুভেন্দু বলেন, ‘‘একটা বেয়াদব। নিজে দাঁড়িয়ে থেকে রাস্তা কেটেছে। কলাইকুন্ডাতে একটা ঘর তৈরি করেছিল, যেখানে সোরেন, মাহাতো-সহ অন্যদের মাওবাদী তকমা দিয়ে থার্ড ডিগ্রি দিত, অত্যাচার চালাত।’’ শুভেন্দুর দাবি, মনোজকে তখন সিপিএমের দীপক সরকার, সুশান্ত ঘোষরা
পরিচালনা করতেন।
উল্লেখ্য, বাম আমলের শেষলগ্নে পশ্চিম মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার ছিলেন মনোজ। তখন জঙ্গলমহলের মাওবাদী নাশকতার পর্ব চলছে। মাওবাদী দমনে যৌথ বাহিনীর অভিযানে মনোজের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। পরে ‘কাউন্টার ইনসার্জেন্সি ফোর্স’-এরও দায়িত্ব পালন করেছিলেন। ওই সময় তৎকালীন বিরোধী দল তৃণমূল প্রায়ই পুলিশের বিরুদ্ধে সুর চড়াত।
ওই সময় পশ্চিম মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম, পুরুলিয়াতে তৃণমূলের সংগঠন সামলাতেন শুভেন্দু। তিনি বলেন, ‘‘এই রকম একটা অত্যাচারী কত লাশ গায়েব করেছে। আমাকে আট বার জেলায় ঢুকতে বাধা দিয়েছে। আমি ২৫ জন ছেলেকে লুকিয়ে রেখেছিলাম। তাঁদের বিরুদ্ধে এখনও মামলা চলছে। জঙ্গলমহলে যিনি ব্রিটিশের অত্যাচারকে হার মানিয়েছেন, সেই রকম একজনকে কলকাতার নগরপাল পদে
বসানো হয়েছে।’’
মনোজ ওই পর্বে বামেদের কথা মতো চলতেন বলে শুভেন্দু এ দিন যে অভিযোগ করেছেন, তাকে আবার পাল্টা কটাক্ষ করছে সিপিএম। তাদের দাবি, রাজ্যে পালাবদলের পর মনোজ বর্মার সঙ্গে শুভেন্দুর একাধিক বৈঠক হয়েছে। প্রশ্ন, তখন কেন ‘গুড বুকে’ থাকা আধিকারিকের সঙ্গে তিনি বৈঠক করেছিলেন? সিপিএমের পূর্ব মেদিনীপুর জেলা সম্পাদক নিরঞ্জন সিহি বলছেন, ‘‘পালাবদলের পর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, শুভেন্দু অধিকারী এবং মনোজ বর্মা— তিনজনে বৈঠক করে মাওবাদী নেতা কিষেনজিকে হত্যা করেছিলেন। সুচিত্রা মাহাতোকে দিয়ে ডাকিয়ে আনা হয়েছিল কিষেনজিকে। তখন শুভেন্দু অধিকারী একবারও মনোজ প্রসঙ্গে কোনও মন্তব্য করেননি। আসলে মমতা আর শুভেন্দুরও গুড বুকে ছিলেন মনোজ। এখন শুভেন্দুর রাজনৈতিক অবস্থান পরিবর্তন হওয়ায় মনোজের বিরুদ্ধে এসব বলছেন।’’
একসঙ্গে ‘কাজে’র কথা স্বীকার করছে তৃণমূলও। দলের রাজ্যের সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষের কথায়, ‘‘তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পরে এঁরা একসঙ্গে কাজ করেছেন। কই, তখন তো মন্তব্য করা হয়নি। এখন দল পরিবর্তন করে এই সব বলছেন। এ সব আদৌ যুক্তি-গ্রাহ্য নয়।’’