বৈঠকে শুভেন্দু অধিকারী। —নিজস্ব চিত্র।
বঙ্গ সফর শেষে সদ্য দিল্লি ফিরে গিয়েছেন অমিত শাহ-জে পি নড্ডা। তার রেশ কাটতে না কাটতেই আগামী লোকসভা ভোটের রণকৌশল কি হবে, সে ব্যাপারে বুথ স্তরের কর্মীদের বার্তা দিলেন নন্দীগ্রামের বিধায়ক তথা রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। নিজের খাসতালুকে দাঁড়িয়ে দলের কর্মীদের শুভেন্দু স্পষ্ট করলেন, আগামী লোকসভা নির্বাচনে কাঁথি ‘মোদীজি’কে উপহার হিসেবে দিতে চান তিনি। সেই জন্য কর্মীদের কী করণীয়, তা বিস্তারিত নির্দেশদিলেন তিনি।
শুক্রবার বিকেলে কাঁথি সাংগঠনিক জেলার বুথ স্তরের কর্মীদের নিয়ে উপকূলবর্তী মন্দারমণিতে সাংগঠনিক সভা করেন বিরোধী দলনেতা। সেখানে তিনি দলের বুথ কার্যকর্তাদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘‘ব্যাপকভাবে জনসংযোগ করতে হবে। লক্ষ্যে অবিচল থেকে লড়াই করে যেতে হবে। প্রতিটা চুরি— সেটা পাঠাগার পরিচালন কমিটি, সমবায় দুর্নীতি, অথবা তৃণমূলের স্থানীয় নেতাদের চুরি যাই হোক না কেন, তার বিরুদ্ধে একদিকে আইনি লড়াই চলবে। অন্যদিকে তথ্য জানার অধিকার আইনে তথ্য সংগ্রহ করে সাধারণ মানুষের কাছে তুলেধরতে হবে।’’
আগামী বছরের লোকসভা ভোটের আগে মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান ও ছত্তীসগঢ়ের বিধানসভা ভোটে বিপুল ভোটে জয় পেয়েছে বিজেপি। এই ফলাফলকেই ঢাল বানিয়েই এদিন ফের শাসকদল তথা বিরোধী জোট ইন্ডিয়াকেও তুলোধনা করেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা। শুভেন্দু বলেন, ‘‘৪০০টি আসন নিয়ে তৃতীয়বারের জন্য ক্ষমতায় আসবে বিজেপি। কাঁথি লোকসভা কেন্দ্র নরেন্দ্র মোদীকে উপহার দেব। এই লোকসভা কেন্দ্র থেকে বিজেপি প্রার্থীই জিতবেন। আর কাঁথিতে না জিতলেও তৃতীয়বারের জন্য প্রধানমন্ত্রী হবেন নরেন্দ্র মোদী। আপনারা লোকসভা ভোট জেতান।’’
শুভেন্দু এদিন অভিযোগ করেন, ‘‘বিধানসভা থেকে পুরসভা, পঞ্চায়েত, ছাপ্পা মেরে ভোটে জিতেছে তৃণমূল। অবাধ নির্বাচন হলে, বাংলায় ৩৫টি আসন পাওয়া অসম্ভব নয়। গণনাকর্মীদের সঙ্গে যোগসাজস করেছিল শাসকদল। যে কারণে তমলুকে ৪০০ ভোটের ব্যবধানে হেরেছি। মহিষাদলে দু হাজার, নারায়নগড়, দাঁতন হাতছাড়া হয়েছে।’’
জিততে গেলে কর্মীদের কী করণীয়?
দলের বুথ কর্মীদের উদ্দেশ্যে সে বিষয়ে শুভেন্দুর পরামর্শ, ‘‘মানুষের সঙ্গে জনসংযোগ বৃদ্ধি করুন। বুথে কর্মী সংখ্য়া আরও বাড়াতে হবে। গৃহ সম্পর্ক অভিযান, স্বশক্তিকরণ কর্মসূচি করতে হবে। ৫ জানুয়ারি ভোটার তালিকা বেরচ্ছে। বিডিওরা আইপ্যাকের কথায় কারচুপি করলে ভোটার তালিকার তথ্য সংগ্রহ করুন। তথ্য সংগ্রহ করে বিজেপির জেলা নেতাদের কাছে পৌঁছে দিন।’’
কাঁথি সাংগঠনিক জেলার ভাজাচাউলি, বারাতলা, অর্জুননগর, বরোজ, অমর্ষি এলাকায় এখাধিক রাজনৈতিক সংঘর্ষ হয়েছে। শেখানে দলের পৃথক রণকৌশল কর্মীদের কাছে তুলে ধরেন শুভেন্দু। তিনি বলেন, ‘‘লোকসভা ভোটের দিন ঘোষণা হতে দেন। কী করে সোজা করতে হয় জানি। আপনারা ভোট দিতে পারবেন। আর কাঁথিতে জিতবে বিজেপি।’’
এদিনের সম্মেলনে কাঁথি লোকসভার ১৮০০ বুথের কর্মীদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। সেখানে ২২ হাজার কর্মী হাজির ছিলেন বলে দাবি করেন শুভেন্দু। যদিও, শুভেন্দুর বক্তব্যের পাল্টা হিসাবে তৃণমূলের অন্যতম রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ বলছেন, ‘‘শুভেন্দুর কাছে যা রিপোর্ট তাতে কাঁথিতে বিজেপি হারবে। সেটা বুঝতে পেরেই এদিন শুভেন্দু বলছেন যদি কাঁথি নাও জিতি! কাঁথি তৃণমূলের জেতা আসন। এবারেও কাঁথি আমরাই জয়ী হব।’’