খেজুরি থেকে হুঙ্কার শুভেন্দু অধিকারীর। — ফাইল চিত্র।
জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ)-র প্রসঙ্গ টেনে তৃণমূল নেতাদের উদ্দেশে হুঙ্কার দিলেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। বৃহস্পতিবার ‘হার্মাদ মুক্ত দিবস’কে সামনে রেখে খেজুরিতে মিছিল করেন শুভেন্দু। সেই মঞ্চ থেকেই বিজেপি কর্মীদের উপর হামলার অভিযোগকে সামনে রেখে হুঁশিয়ারি দেন শুভেন্দু। তাঁর বক্তব্যের সূত্র ধরে পাল্টা অভিযোগ তুলেছে তৃণমূল। জোড়াফুল শিবিরের দাবি, কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলিকে কাজে লাগিয়েই পঞ্চায়েত ভোটে জেতার কৌশল নিয়েছে বিজেপি।
বৃহস্পতিবার খেজুরিতে মিছিল করেন শুভেন্দু। সম্প্রতি এখানে এক বিজেপি কর্মীকে মারধর করার অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। সেই প্রসঙ্গ টেনে শুভেন্দু বলেন, ‘‘খেজুরিতে কে এক জন শেখ ইয়াসিন ঘোলাবাড়ের বিজেপি কর্মী সুরজকে মেরেছে। পুলিশকে হুঁশিয়ারি দিয়ে যাচ্ছি, যদি উপযুক্ত ব্যবস্থা না নেন আমি ১ তারিখে খেজুরিতে আসছি। বুঝিয়ে দেব শুভেন্দু কে। আরে এনআইএ তো সবে শুরু করেছে কাজ। সমর মণ্ডল কোথায়? অপেক্ষা করুন, সবে তো ১২টা বাজে। এখনও তো সূর্য ডোবেনি। বুঝেছেন।’’ এর পর শুভেন্দুর হুঁশিয়ারি, ‘‘মাননীয় ইয়াসিনবাবু, আপনার যা যা ওষুধ লাগবে ডাক্তারবাবু সব জানে। আমি এই দায়িত্বটা নিলাম।’’ পঞ্চায়েত ভোটের আগে খেজুরিতে ‘হার্মাদ মুক্ত দিবস’ পালন করতে গিয়ে দলের নেতাকর্মীদের ‘চাটাই সভা’ করার বার্তা দিয়েছেন শুভেন্দু।
প্রসঙ্গত, গত ৩ জানুয়ারি পশ্চিম ভাঙনমারি গ্রামে কঙ্কন করণ নামে এক তৃণমূল কর্মীর বাড়িতে বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। তার জেরে মৃত্যু হয় অনুপ দাস নামে এক তৃণমূল কর্মীর। বেশ কয়েক জন জখম হন। বোমা বাঁধতে গিয়েই এই বিস্ফোরণ হয়েছে বলে অভিযোগ তোলেন শুভেন্দু। এর পর স্থানীয় বিজেপি বিধায়ক শান্তনু প্রামাণিক তা নিয়ে এনআইএ তদন্তের দাবি তোলেন। তিনি বিষয় নিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের কাছে লিখিত আবেদনও করেন। এর পর ওই বিস্ফোরণ-কাণ্ডের তদন্তভার নেয় এনআইএ। ওই ঘটনায় জনকা গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূল প্রধান সমরশঙ্কর মণ্ডল-সহ ৩ জনকে গ্রেফতার করেছিল এনআইএ। বৃহস্পতিবার শুভেন্দুর বক্তব্যে উঠে এসেছে সেই প্রসঙ্গই।
শুভেন্দুর হুঁশিয়ারি শোনার পর তৃণমূলের কাঁথি সাংগঠনিক জেলার সভাপতি তরুণ মাইতির প্রতিক্রিয়া, ‘‘আজ শুভেন্দু যে ভাবে প্রকাশ্যে তৃণমূল নেতাদের হুমকি দিচ্ছেন এবং কেন্দ্রীয় সংস্থার নাম নিয়ে ভয় দেখানোর চেষ্টা করছেন। আমরা দীর্ঘ দিন ধরেই বলে আসছি যে, বিজেপি কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলিকে কাজে লাগিয়ে ভোটে জিততে চায়। সেটা আজ প্রমাণ হয়ে গেল। খেজুরিতে একটি মামলায় এনআইএ তদন্তের নামে কাঁথি সাংগঠনিক জেলার বহু তৃণমূল নেতার নাম জড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। পঞ্চায়েত ভোটে ওরা যতই অশান্তি ছড়ানোর চেষ্টা করুক না কেন প্রতিটি পঞ্চায়েত এবং জেলা পরিষদ আমরাই গঠন করব।’’
প্রসঙ্গত, ২০১০ সালের এই দিনেই খেজুরি থেকে সিপিএমকে ‘উৎখাত’ করেছিল তৃণমূল। সেই অভিযানে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তৎকালীন তৃণমূল সাংসদ শুভেন্দু। তার পর থেকেই প্রতি বছর এই দিনে খেজুরিতে ‘হার্মাদ মুক্ত দিবস’ পালন করেন শুভেন্দু। বৃহস্পতিবার খেজুরিতে সভা রয়েছে তৃণমূলেরও। সেখানে তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষের পাশাপাশি থাকবেন রাজ্যের মন্ত্রী বিরবাহা হাঁসদাও।